ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নভেম্বরের আগেই যত মেগা প্রকল্প উদ্বোধন

নভেম্বরের আগেই যত মেগা প্রকল্প উদ্বোধন

বর্তমান সরকারের মেয়াদ প্রায় শেষের পথে। আগামী অক্টোবর অথবা নভেম্বরের শেষে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল আর জানুয়ারিতে হবে নির্বাচন। তফসিল ঘোষণার পর সরকার শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করবে। তাই তফসিলের আগেই পদ্মা রেলসেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের মতো যোগাযোগের বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থায়ই আগামী সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের মধ্যে উদ্বোধন করে ফেলতে চায় সরকার। এসব অবকাঠামো যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলে একদিকে সরকারি দল ভোটে মাইলেজ পাবে, অন্যদিকে দেশের যোগাযোগ খাতে একটি বড় পরিবর্তন আসবে। পণ্য ও যাত্রী পরিবহণের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত হওয়ার পাশাপাশি বিকল্প পরিবহণব্যবস্থা গড়ে উঠবে বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

মেট্রোরেলে উত্তরা থেকে মতিঝিল

উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত দেশের প্রথম মেট্রোরেল লাইন। উড়াল এ রেলপথের দৈর্ঘ্য ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার। এ লাইনের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। সরকার গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে আগারগাঁও প্রায় ১২ কিলোমিটার রেলপথে ট্রেনসেবা চালু করে। সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দিয়েছেন- এ বছরের অক্টোবরের শেষের দিকে মতিঝিল থেকে উত্তরা ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে উত্তরা থেকে মতিঝিল যাওয়া যাবে মাত্র ৩৮ মিনিটে। খরচ হবে ১০০ টাকা, বাঁচবে কমপক্ষে ১ ঘণ্টা। এ পথে মোট ১৬টি স্টেশন আছে, তবে শুরুতে ১২টি স্টেশনে ওঠা ও নামা যাবে। সড়কের ওপর মেট্রোরেল চললে সড়কের যানজট কমবে বলে আশা নগরবাসীর। এ লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয় ২০০৫ সালে। প্রকল্পটি অনুমোদন পায় ২০১২ সালে আর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। ২০১২ সালে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা, তবে এখন ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।

পদ্মা সেতু দিয়ে রেল যাবে দক্ষিণাঞ্চলে

গত বছরের ২৫ জুন পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত সড়ক সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এতে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের ১৯ জেলার পণ্য ও যাত্রী পরিবহণে সময় সাশ্রয় হয়। এবার খুলে দেওয়া হচ্ছে পদ্মা রেলসেতু। সড়কের বিকল্প হিসেবে যাত্রী ও পণ্য পদ্মার ওপর দিয়ে ভাঙ্গা নিয়ে যাবে ট্রেন। এতে চাপ কমবে সড়কে। ঢাকা-ভাঙ্গা-যশোর ১৭৬ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় সরকার আপাতত ঢাকা-ভাঙ্গা ৮০ কিলোমিটার রেলপথ চালু করবে। গত ১০ জুন ভাঙ্গার জংশন থেকে ভাঙ্গা-যশোর রেললাইন স্থাপন কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ঘোষণা করেছেন- ঢাকা-ভাঙ্গা ট্রেন চলাচল আগামী সেপ্টেম্বরে শুরু হবে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা রেললাইন ট্রেন চলাচলের উপযোগী করা যাবে না, তাই ট্রেন চলাচল আগামী অক্টোবরে শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে দুটি ট্রেন দিয়ে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা ট্রেন চলাচল শুরু করা হবে। ঢাকা-ভাঙ্গা সেকশনে ১০টি স্টেশন থাকলেও প্রথম পর্যায়ে চারটি স্টেশনে ট্রেন থামবে।

কর্ণফুলী নদীর নিচে চলবে গাড়ি

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেলের নির্মাণকাজ শেষ। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে কর্ণফুলী নদীর ৫০ মিটার নিচ দিয়ে সড়কপথে আনোয়ারায় যুক্ত হওয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। এটি এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল কিন্তু কিছু নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট কাজ যোগ হওয়ায় সেটি সম্ভব হয়নি। দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম এই টানেলটি মোট ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ। কর্ণফুলী নদীর মোহনার পশ্চিম প্রান্তে পতেঙ্গা নেভাল একাডেমির কাছ থেকে শুরু হয়ে পূর্ব প্রান্তে চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা (সিইউএফএল) এবং কর্ণফুলী সার কারখানার (কাফকো) মাঝখান দিয়ে আনোয়ারা প্রান্তে পৌঁছেছে। মূল টানেলের সঙ্গে পশ্চিম প্রান্তে (পতেঙ্গা) দশমিক ৫৫০ কিলোমিটার ও পূর্ব প্রান্তে (আনোয়ারা) ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারসহ মোট ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক রয়েছে। এছাড়া আনোয়ারা প্রান্তে সংযোগ সড়কের সঙ্গে ৭২৭ মিটার ভায়াডাক্ট (উড়াল সড়ক) রয়েছে। ২০১৫ সালের নভেম্বরে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় সরকার। শুরুতে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৪৬ দশমিক ৬৪ কোটি টাকা। পরে তা বেড়ে হয় ১০ হাজার ৩৭৪ দশমিক ৪২ কোটি টাকা। প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী জানান, দুই টিউববিশিষ্ট এই টানেলের কাজ ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ শেষ হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত