জনপ্রিয় হচ্ছে ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ
প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
সময়মতো ও তাৎক্ষণিক পাওয়া যায় বলে ‘ন্যানো লোন’ হিসেবে পরিচিত ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ব্যাংকগুলোর তথ্য অনুসারে, প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার গ্রাহক এরই মধ্যে এ ধরনের ঋণ নিয়েছেন। এর খেলাপির হার ১ শতাংশেরও কম। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের ৯ শতাংশ পর্যন্ত সুদে ৫০০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দিচ্ছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সিটি ব্যাংকের সহযোগিতায় বিকাশ ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ চালুর পর থেকে আরো ৩ ব্যাংক এ ধরনের সেবা দিচ্ছে। ব্যাংকগুলো ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী বলে মত দিয়েছে। এই ঋণ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাসহ গ্রাহকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ঋণ গ্রহীতারা সাধারণত উচ্চ সুদে তাৎক্ষণিক ক্ষুদ্রঋণ নেওয়ায় অভ্যস্ত। রাজধানীর ইসলামপুরে কাপড়ের দোকান মালিক হাফিজুল ইসলামের হঠাৎ ৫০ হাজার টাকা প্রয়োজন হয়। তিনি ঢাকা ব্যাংকের ‘ই-রিন’ অ্যাপের মাধ্যমে ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণের জন্য আবেদন করেন। হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কোনো রেফারেন্স বা জামানত দেখাইনি। তারপরও ২ ঘণ্টার মধ্যে আমার অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হয়। আমি ব্যবসার জন্য আবারো ঋণ নেব।’
বেসরকারি চাকরিজীবী রাজীব আহমেদ ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ পাওয়া প্রথম গ্রাহকদের একজন। এটি চালুর এক সপ্তাহ পর ২০২১ সালের ডিসেম্বরে তিনি বিকাশের মাধ্যমে এই ঋণ নেন। ওই সময় রাজীব আহমেদ ফেসবুক পোস্টে জানান, তিনি বিকাশ থেকে ৩ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। ১০ দিন পর মোট ৩ হাজার ৭ টাকা ৫০ পয়সা পরিশোধ করেন। সুদের হার ছিল ৯ শতাংশ। তার মতে, বিকাশ ও সিটি ব্যাংকের এ ঋণ উদ্যোগ দেশে বড় বিপ্লব আনতে যাচ্ছে। এই ধরনের ঋণ সাধারণত ব্যাংকগুলোর ঋণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নীতির ওপর ভিত্তি করে বিতরণ করা হয়। বিকাশের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার আলী আহম্মেদ বলেন, ‘গ্রাহকরা এ পর্যন্ত ৩১৪ কোটি টাকার বেশি ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ নিয়েছেন।’ এ পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ বিকাশ ব্যবহারকারী ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ পেয়েছেন।
পাইলট প্রজেক্ট সফল হওয়ায় প্রাইম ব্যাংক ২০২২ সালের অক্টোবরে বাণিজ্যিকভাবে ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ সেবা ‘প্রাইম অ্যাগ্রিম’ চালু করে। এ পর্যন্ত ২ হাজার ১০০ গ্রাহক ঋণ নিয়েছেন। ঋণ পরিশোধের হার ৯৯ শতাংশের বেশি। প্রাইম ব্যাংকের কনজ্যুমার ব্যাংকিংয়ের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজিম এ চৌধুরী বলেন, ‘এটি আমাদের দেশে ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণের চাহিদার পরিমাণ তুলে ধরে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, একটি যথাযথ কাঠামো ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরো সহায়তায় এ সেবাটির আরও বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’ আমরা কর্মজীবী গ্রাহকদের জন্য আকর্ষণীয় ঋণ প্রস্তাব ও ডিজিটাল ডিভাইস ফাইন্যান্সিংয়ের পরিকল্পনা করেছি। বর্তমানে নিয়মিত গ্রাহকদের জন্য ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করছি,’ যোগ করেন তিনি। ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এমরানুল হক বলেন, ‘ই-রিন সেবার আওতায় এ পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।’ এ পর্যন্ত ৩ হাজারের বেশি গ্রাহক ঋণ নিয়েছেন। এই সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। খেলাপির হার প্রায়শূন্য। এটি চমৎকার বিষয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা পে-রোল অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের জন্য সেবাটি চালু করেছি। এখন আমরা এটি সব গ্রাহকদের জন্যও চালু করেছি।’ ব্যাংক এশিয়ার জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজী মর্তুজা আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘দ্রুত পরিবর্তিত প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ব্যাংক এশিয়া সম্প্রতি পরীক্ষামূলকভাবে ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ চালু করেছে।’ আর্থিক ও মেটাডেটা বিশ্লেষণের পর ক্রেডিট স্কোরিং মডেল ব্যবহার করে ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ৫০০ টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়। এটি ৬ মাসের মধ্যে পরিশোধ করা যাবে বলে জানিয়েছে ব্যাংক এশিয়া। ২০২২ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ১০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম চালু করে ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থাকে এগিয়ে নেয়।কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ডিজিটাল পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের তহবিল বাড়িয়ে চলতি বছরের জুলাইয়ে তা ৫০০ কোটি টাকা করেছে। ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল অ্যাপ, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা ই-ওয়ালেট সেবা ব্যবহার করে সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠানের কাছে বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের তথ্য, প্রযুক্তিগত দক্ষতা, ডেটা প্রসেসিং ক্যাপাসিটি ও অনেক টাকা বিনিয়োগের ক্ষমতা আছে, তারা ডিজিটাল ঋণে প্রাধান্য বজায় তিনি আরো বলেন, ‘বিকাশ এরই মধ্যে এমন একটি প্লাটফর্মে পরিণত হয়েছে। অন্যরা যদি তা করতে পারে, তাহলে তারাও সফল হবে।’