ঢাকা ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সর্বজনীন পেনশন যেভাবে আবেদন করবেন

সর্বজনীন পেনশন যেভাবে আবেদন করবেন

দেশের নাগরিকদের পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আনতে বহুল প্রতীক্ষিত সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি (স্কিম) চালু করছে সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সকালে এ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ফলে আজ থেকেই সবার জন্য সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি উন্মুক্ত হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের জারি করা সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা অনুযায়ী, এ কর্মসূচিতে যুক্ত হলে ৬০ বছর বয়সের পর থেকে আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন গ্রাহক। চাঁদা পরিশোধের পর তিনি মারা গেলে তার নমিনি বা উত্তরাধিকারী পেনশন পাবেন ১৫ বছর। সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আপাতত চার ধরনের স্কিম চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রবাসীদের জন্য প্রবাস স্কিম, বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্রগতি স্কিম, অনানুষ্ঠানিক খাত অর্থাৎ স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য সুরক্ষা স্কিম আর নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য রয়েছে সমতা স্কিম। পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট চালু হয়েছে গত বুধবার (১৬ আগস্ট)। ওয়েবসাইটের ঠিকানা িি.িঁঢ়বহংরড়হ.মড়া.নফ। এ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আজ থেকেই যে কেউ পেনশন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে- ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করে আপনার ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।’

নিবন্ধিত হওয়া যাবে যেভাবে

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে গেলে ইউপেনশন ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। পেনশন কর্তৃপক্ষ বলেছে, ভুল তথ্য দিয়ে আবেদন করলে সেই আবেদন বাতিল হবে এবং জমা করা অর্থ ফেরতযোগ্য হবে না। নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় প্রথমেই একটি প্রত্যয়ন পাতা আসবে; যেখানে লেখা থাকবে- ‘এই মর্মে প্রত্যয়ন করছি যে আমি সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নই। সর্বজনীন পেনশন স্কিমবহির্ভূত কোনো ধরনের সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে সুবিধা গ্রহণ করি না। আমি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় কোনো ধরনের ভাতা গ্রহণ করি না।’ এই পাতার নিচের দিকে ‘আমি সম্মত আছি’ অংশে ক্লিক করলে দ্বিতীয় পাতায় গিয়ে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। এখানে আবেদনকারীকে প্রবাস, সমতা, সুরক্ষা বা প্রগতি-এই চার স্কিমের মধ্য থেকে প্রযোজ্য স্কিম বাছাই করতে হবে। একই সঙ্গে ১০, ১৩ বা ১৭ সংখ্যার এনআইডি নম্বর, জন্ম তারিখ, মোবাইল নম্বর, ই-মেইল আইডি লিখে দিতে হবে। এরপর পাতার নিচের দিকে থাকা ক্যাপচা লিখে পরের পাতায় যেতে হবে।

ক্যাপচা দেওয়ার পরে আবেদনকারীর মোবাইল নম্বর ও ই-মেইলে একটি ওটিপি বা একবার ব্যবহারযোগ্য গোপন নম্বর আসবে, যা ফরমে দিয়ে পরবর্তী ধাপে যেতে হবে। নিবন্ধন প্রক্রিয়ার পরের ধাপে আসবে ব্যক্তিগত তথ্যের পাতা। এ পাতায় এলে ব্যক্তির এনআইডি অনুযায়ী এনআইডি নম্বর, ছবি, আবেদনকারীর বাংলা ও ইংরেজি নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসবে। তবে এখানে আবেদনকারীর বার্ষিক আয় লিখতে হবে এবং পেশা, নিজ বিভাগ, জেলা ও উপজেলার নাম নির্বাচন করতে হবে। পেশা বাছাইয়ের ঘরে শিক্ষক, বেসরকারি চাকরিজীবী, ছোট ব্যবসায়ী, ব্যবসা, দিনমজুর, আইনজীবী, সাংবাদিক ইত্যাদি পেশার উল্লেখ আছে। সেখান থেকে নিজের পেশা নির্বাচন করতে হবে। সব লেখা সম্পন্ন হলে পরের ‘স্কিম তথ্য’র পাতায় যেতে হবে। স্কিম তথ্যের পাতা এলে সেখান থেকে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ও চাঁদা পরিশোধের ধরন বাছাই করতে হবে। চাঁদা পরিশোধের ধরনের মধ্যে মাসিক, ত্রৈমাসিক ও বার্ষিক-এ তিন অপশন রয়েছে। এরপর ব্যাংক তথ্যের ধাপে যেতে হবে। ব্যাংক তথ্যের পাতায় আবেদনকারীর ব্যাংক হিসাবের নাম ও নম্বর, হিসাবের ধরন (সঞ্চয়ী অথবা চলতি), রাউটিং নম্বর, ব্যাংকের নাম (বাংলায়) ও ব্যাংকের শাখার নাম (ইংরেজিতে) লিখতে হবে। এরপর পরবর্তী নমিনি তথ্যের পাতায় যেতে হবে। নমিনি তথ্যের পাতায় গিয়ে নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে নমিনিকে যুক্ত করতে হবে। এখানে একাধিক নমিনিও যুক্ত করা যাবে।

এ সময় নমিনির মোবাইল নম্বর, নমিনির সঙ্গে সম্পর্ক, নমিনির প্রাপ্যতার হারের (একাধিক নমিনি হলে) তথ্য দিয়ে সর্বশেষ ‘সম্পূর্ণ ফরম’ ধাপে যেতে হবে।

এটিই নিবন্ধনের শেষ ধাপ। এ ধাপে আগে পূরণ করা ব্যক্তিগত তথ্য, স্কিম তথ্য, ব্যাংক তথ্য ও নমিনি তথ্য দেখানো হবে। সেখানে কোনো ভুল থাকলে আবার শুরুতে গিয়ে তথ্যের প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে হবে। আর সব তথ্য ঠিক থাকলে তাতে সম্মতি দিয়ে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এ সময় চাইলে সম্পূর্ণ আবেদনটি ডাউনলোডও করতে পারবেন আবেদনকারী।

প্রবাসীদের জন্য

সর্বজনীন পেনশনে থাকছে যেসব আকর্ষণ

সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে সর্বজনীন যে পেনশন কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম প্রবাস স্কিম। বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের এই স্কিমে আগ্রহী করে তুলতে এরই মধ্যে বেশকিছু সুযোগ-সুবিধার কথাও জানিয়েছে সরকার। এতে একদিকে যেমন বাড়বে প্রবাসী আয়, অন্যদিকে রিজার্ভ সংকটও কাটিয়ে উঠার আশা করছেন অর্থনীতিবিদরা। গত বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার শ্রেণির জনগোষ্ঠীর জন্য সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। এই ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হতে প্রবাসীরা অধিক আগ্রহী হবে মনে করা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া নাগরিকদের যেখানে তাদের জমা দেয়া চাঁদার বিপরীতে ৮ শতাংশ হারে সুদ দেবে সরকার। সেখানে বৈদেশিক মুদ্রায় চাঁদা দিলে সুদহারের বাইরে প্রবাসীরা অতিরিক্ত ২.৫% হারে প্রণোদনা পাবেন।

যেভাবে প্রবাস স্কিমে অংশ নেবেন

বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানরত যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক নির্ধারিত অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় জমা দিয়ে এই স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। দেশে ফিরে সমপরিমাণ অর্থ দেশীয় মুদ্রায় পরিশোধ করা যাবে। প্রয়োজনে স্কিমও পরিবর্তন করতে পারবেন প্রবাসীরা। প্রবাসীদের মধ্যে যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তারা পাসপোর্টের তথ্য-উপাত্ত দিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন। তবে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে সেটির অনুলিপি পেনশন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে। নিয়মিতভাবে পাসপোর্ট নবায়ন বা পুনঃইস্যুর ক্ষেত্রে নবায়নকৃত বা পুনঃইস্যুকৃত পাসপোর্টের অনুলিপি জমা দিতে হবে।

পেনশনের বয়সসীমা

১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সি জাতীয় পরিচয়পত্রধারী সব বাংলাদেশি নাগরিক নিজেদের জন্য প্রযোজ্য স্কিমে অংশ নিতে নিবন্ধন করতে পারবেন। বিশেষ বিবেচনায় ৫০ বছরের বেশি বয়সিরাও পেনশন স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে স্কিমে অংশ নেয়ার তারিখ থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে ১০ বছর চাঁদা দিতে হবে। ১০ বছর চাঁদা দেয়া শেষ হওয়ার পর থেকে আজীবন পেনশন পাবেন।

চাঁদার হার

প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য মাসিক চাঁদার সর্বনিম্ন হার ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া, ৭ হাজার ৫০০ টাকা এবং ১০ হাজার টাকার দুটি স্কিমও থাকবে প্রবাসীদের জন্য। প্রবাসীদের বিদেশি মুদ্রায় এই চাঁদা দিতে হবে। ১০ বছর পূর্তিতে ৫ হাজার টাকার কিস্তিতে মাসে পেনশন পাওয়া যাবে মাসে ৭ হাজার ৬৫১ টাকা হারে। সাড়ে ৭ হাজার টাকা কিস্তিতে মাসে ১১ হাজার ৪৭৭ এবং ১০ হাজার টাকা কিস্তিতে মাসে ১৫ হাজার ৩০২ টাকা পাওয়া যাবে। এভাবে ১৫, ২০, ২৫, ৩০, ৩৫, ৪০ ও ৪২ বছর পূর্ণে পেনশনের হারও বাড়বে। ৪২ বছর পূর্ণ হলে ৫ হাজার টাকার কিস্তিতে মাসে পেনশন পাওয়া যাবে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা, সাড়ে ৭ হাজার টাকার কিস্তিতে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৪৯১ টাকা এবং ১০ হাজার টাকার কিস্তিতে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫৫ টাকা।

নিবন্ধন, চাঁদা দেবেন যেভাবে

পেনশন স্কিমে অংশ নিতে দেশ এবং প্রবাস থেকে অনলাইনে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে আবেদন করতে হবে। এরপর আবেদনকারীর অনুকূলে একটি ইউনিক আইডি নম্বর দেয়া হবে। আবেদনে উল্লিখিত আবেদনকারীর মোবাইল নম্বরে এবং অনিবাসী আবেদনকারীর ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় ই-মেইলের মাধ্যমে ইউনিক আইডি নম্বর, চাঁদার হার এবং মাসিক চাঁদা জমা দেয়ার তারিখ জানিয়ে দেয়া হবে। যে কোনো স্কিমে নিবন্ধিত হওয়ার পর পেনশন কর্তৃপক্ষ ধার্যকৃত হারে নিয়মিত চাঁদা দিতে হবে। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, অনলাইন ব্যাংকিং, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে মাসিক চাঁদা জমা দেয়া যাবে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে চাঁদা জমা দিতে পারবেন। সকল স্কিমের জন্য চাঁদার কিস্তি চাঁদাদাতার পছদ অনুযায়ী মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে পরিশোধ করা যাবে। চাঁদার টাকা জমা হলে চাঁদাদাতার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে এসএমএম দিয়ে জানানো হবে। নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা না দিলে জরিমানার পরিমাণসহ জানিয়ে দেয়া হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠানিকভাবে পেনশন স্কিমে অংশ নিলে প্রতিষ্ঠান ও তার কর্মীদের চাঁদা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে জমা দিতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত