পরিণত বয়সে দেশের নাগরিকদের আর্থিক নিরাপত্তা দিতেই চালু হয়েছে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা। বৃহস্পতিবার বহুল প্রতীক্ষিত এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকে এ নিয়ে জনমনে ব্যাপক সাড়া দেখা দিয়েছে। সাধারণ মানুষ এটিকে ইতিবাচক ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আপাতত প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা ও প্রবাসী- এই চার ধরনের স্কিম চালু হয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্রগতি, স্বকর্ম ও অ-প্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য সুরক্ষা, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সমতা এবং প্রবাসীদের জন্য প্রবাসী নামের এই চারটি স্কিম গত বৃহস্পতিবার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পরপরই সর্বজনীন এই পেনশন ব্যবস্থায় যুক্ত হওয়ার জন্য অনেককেই চেষ্টা করতে দেখা যায়।
জানা গেছে, উদ্বোধনের দিনে এই ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হতে অন্তত ৮ হাজার মানুষ নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৭০০ জন আবেদনের পুরো প্রক্রিয়া শেষ করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন। এদিকে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাকে একটি ভালো উদ্যোগ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। পাশাপাশি এর সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার বিষয়েও তাগিদ দিয়েছেন তারা। ব্যবস্থাপনাগত বিচ্যুতির কারণে এমন একটি উদ্যোগের বিষয়ে জনগণের আস্থায় যাতে কোনো ঘাটতি তৈরি হতে না পারে সেদিকে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে এ রকম উদ্যোগ নেওয়ার পর দেখা গেছে ভালো ব্যবস্থাপনা না থাকায় তা সফল হতে পারেনি। আবার যারা ভালো ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করেছে, তাদের ফলাফলও ভালো হয়েছে।
এমন নজির অনেক রয়েছে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা জরুরি। শুক্রবার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, এটি সরকারের একটি ভালো উদ্যোগ। তবে কেউ যাতে এখান থেকে অবৈধ সুবিধা নিতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। যেমন দরিদ্রদের পেনশনের অর্ধেক টাকা বহন করবে সরকার। অনেক সচ্ছল ব্যক্তিও এই সুযোগে দরিদ্র হিসেবে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করার কাজটি করা দরকার। আমাদের তো দরিদ্র মানুষের কোনো ডেটা নেই। তাই সতর্কতা অবলম্বনই হচ্ছে উপায়। তিনি আরো বলেন, জনগণের চাঁদার টাকা যাতে সঠিকভাবে লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করা হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। কারও হস্তক্ষেপের কারণে বিনিয়োগ উঠে আসবে না এমন খাতে যাতে বিনিয়োগ করা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এটার যে বোর্ড করা হবে, সেটাও স্বাধীন হতে হবে। যাতে যেকেউ চাইলে এখানে হস্তক্ষেপ করতে না পারে। রাজনীতিবিদরাও যাতে এটার অপব্যবহার করতে না পারেন। আরেক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন মনে করেন, এই পেনশন স্কিমের জন্য এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে। তিনি বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিম দেশের সব নাগরিকের জন্য খুবই ভালো উদ্যোগ।
তবে এই বিনিয়োগের টাকা কোথায় জমা হবে, কীভাবে ব্যয় হবে, তার একটি স্বচ্ছ ধারণা দেওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পর সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু হয়েছে দেখে ভালোই লাগছে।
কারণ, এখানে সব শ্রেণির মানুষ সম্পৃক্ত। তাদের বিনিয়োগকে যদি ভালোভাবে কাজে লাগানো যায় তা হলে একদিকে সরকার, অন্যদিকে বিনিয়োগকারী- দুই পক্ষই উপকৃত হবে। জানা গেছে, সর্বজনীন পেনশন তহবিল ব্যবস্থাপনা নামে প্রণীত বিধিমালা অনুযায়ী জনগণের আমানত সুরক্ষায় নিরাপদ ও দীর্ঘ মেয়াদে মুনাফা পাওয়া যায় এমন সব ক্ষেত্রে এ তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করা হবে। তহবিলের একটি অংশ ক্রেডিট রেটিংয়ের মাধ্যমে নির্ধারিত প্রথম সারির ১০ সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে দীর্ঘমেয়াদি এফডিআর আকারে রাখা হবে। এছাড়া তহবিলের একটি অংশ সরকারের অবকাঠামোগত লাভজনক প্রকল্পে এবং একটি অংশ ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করা হবে।