শতভাগ বৈদ্যুতিক ক্যাবলস উৎপাদনের পথে বাংলাদেশ

প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য ওভারহেড কন্ডাক্টরের পরিবর্তে আন্ডারগ্রাউন্ড বা মিডিয়াম ভোল্টেজ ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ওভারহেড কন্ডাক্টর অপসারণ করে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল প্রতিস্থাপন।

ফলে পুরো বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য ব্যাপকহারে মিডিয়াম ভোল্টেজ ক্যাবলের প্রয়োজন পড়বে। বাংলাদেশের কয়েকটি কোম্পানি এই মুহূর্তে মিডিয়াম ভোল্টেজ ক্যাবল উৎপাদন করছে। জোগান দিচ্ছে মোট ব্যবহারের ২০ শতাংশ। বাকি ৮০ শতাংশ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। এ বাস্তবতায় প্রায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে মিডিয়াম ভোল্টেজ ক্যাবল উৎপাদন শুরু করেছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। এখন দেশে যে পরিমাণ আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল প্রয়োজন তার পুরোটাই দেশীয় কোম্পানির উৎপাদন থেকে জোগান দেওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিন হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে আরএফএলের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, মিডিয়াম ভোল্টেজ বা হাই টেনশন (এইচটি) ক্যাবল তৈরি করতে এক লাখ ২০ হাজার স্কয়ার ফুটের একটি আলাদা কারখানা তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আরএফএল উৎপাদিত ক্যাবলস বাজারে ‘বিজলী ক্যাবলস’ নামে বাজারজাত করা হয়। ওভারহেড কন্ডাক্টর অপসারণ করে আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল প্রতিস্থাপন শুরু করেছে বাংলাদেশ। এতে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য ব্যাপকহারে মিডিয়াম ভোল্টেজ ক্যাবলের প্রয়োজন পড়বে। বর্তমানে এর বার্ষিক বাজার প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। আমদানিনির্ভরতা কমাতে মিডিয়াম ভোল্টেজ ক্যাবল উৎপাদন শুরু করা রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানার হাই টেনশন ক্যাবলের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৪ হাজার মেট্রিক টন। এ নতুন বিনিয়োগের ফলে বাড়তি ২০০ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। বর্তমানে চারটি উৎপাদন কারখানা রয়েছে। এসবের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ২৬ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন। বিজলী ক্যাবলসে বর্তমানে এক হাজার জন কর্মরত। রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (অ্যাডমিন) মো. আবুল বাশার বলেন, দেশের সাধারণ ভোক্তার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত পিডিবি, আরইবি, ডেসকো, নেসকো, ডিপিডিসি, ইইডি, পিডব্লিউডিসহ বাংলাদেশ সরকারের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতেও বিজলী ক্যাবলস সরবরাহ করা হচ্ছে।

এখন ক্যাবলস উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রয়োজনীয় সব ধরনের ক্যাবলস জোগান দিতে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোই যথেষ্ট। এরপরও সরকারি প্রকল্পসহ নানা জায়গায় এখনো আমদানি করা ক্যাবলস ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকারি প্রকল্পে যাতে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের ক্যাবলস ব্যবহার করা হয়, সে উদ্যোগ নিতে হবে। ফলে কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অনেক সাশ্রয় হবে। বিজলী ক্যাবলসে কপারগুলোর কন্ডাক্টিভিটি ১০১ শতাংশ, ফলে সঠিক মাত্রায় বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। বিদ্যুৎ বিল আসে কম। এছাড়া উৎপাদিত পণ্যের মান ও আনুষঙ্গিক পরীক্ষার জন্য রয়েছে অত্যন্ত অভিজাত ল্যাবরেটরি। তিনি বলেন, ২০২১ সালে রপ্তানি শুরু করা বিজলী ক্যাবলস বর্তমানে ভারতে রপ্তানি হচ্ছে। ভবিষ্যতে আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে। সরকার রপ্তানির সব ক্ষেত্রে প্রণোদনা দেয়। সম্ভাবনাময় এ ক্যাবলসের ক্ষেত্রেও প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদন বাড়ার কারণে বৈদ্যুতিক ক্যাবলসের বাজারও বাড়ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক ক্যাবলসের মোট বাজার প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। ১০ বছর আগে ক্যাবলসের মোট বাজার ছিল আনুমানিক ২ হাজার কোটি টাকা, বার্ষিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ২০ শতাংশ। দেশে ব্যবহৃত ক্যাবলসের প্রায় ৪০ শতাংশ ডমেস্টিক কার্যক্রমে ব্যবহার করা হয়, ৬০ শতাংশ ব্যবহার করা হয় প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডে।