পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করল ভারত

রাতারাতি বাড়ল পেঁয়াজের দাম

প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন ভারতের কৃষকরা

প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক

আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে ভারত। অভ্যন্তরীণ বাজারে ক্রমবর্ধমান দাম নিয়ন্ত্রণের একটি ব্যবস্থা হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নয়াদিল্লি সংবাদদাতা জানিয়েছেন, শনিবার ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। অভ্যন্তরে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটির সরকার। ভারতীয় শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে। এতে বলা হয়, নতুন করে আরোপিত শুল্ক হার শিগগিরই কার্যকর হবে। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা বহাল থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে এসব তথ্য জানিয়েছে। ভোক্তা অধিকারবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব রোহিত কুমার সিং বলেন, দেশের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এবং ক্রমবর্ধমান দামে লাগাম টানতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরেই স্থানীয় মার্কেটে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। ভোক্তা অধিকারবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, গত শনিবার (১৯ আগস্ট) ভারতের খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৭২ রুপি।

২০২২ সালের একই সময়ের চেয়ে যা ২০ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। ওই সময় কেজিপ্রতি দর ছিল ২৫ দশমিক ৪৪ রুপি। ১ মাস আগেও ভারতে কেজিতে পেঁয়াজের মূল্য ছিল ২৭ দশমিক ২১ রুপি। মূলত সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক পরিমাণে রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।

গতকাল রোববার বেনাপোল বন্দর দিয়ে ২৬ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ভারত থেকে। গতকার রোববার পর্যন্ত যেসব পেঁয়াজ বাংলাদেশে এসেছে, সেগুলোর এলসি হয়েছে আগের নিয়মে। অর্থাৎ, এসব পেঁয়াজে কোনো বাড়তি শুল্ক নেই।

ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই বাংলাদেশেও এর দাম বেড়ে গেছে। শুল্ক আরোপ করার পর নতুন দামে পেঁয়াজ আমদানি শুরু না হলেও যশোরাঞ্চলে এক দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০ টাকা। যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান মনে করেন, ‘আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ৪০ শতাংশ শুল্কসহ এলসি করা পেঁয়াজ এখনো দেশে আসেনি, কিন্তু ব্যবসায়ীরা এই ঘোষণার পরই দেশের বাজারে দাম বাড়িয়েছেন।’ সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর অভিযোগ করা হলেও ব্যবসায়ীদের দাবি, বাজারে সরবরাহ কম থাকায় পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। বেনাপোল বন্দরের পরিচালক আ. জলিল জানান, আজ বন্দর দিয়ে ২৬ মেট্রিক টন পেয়াজ আমদানি হয়েছে ভারত থেকে। তবে আজ পর্যন্ত যেসব পেঁয়াজ বাংলাদেশে এসেছে, সেগুলোর এলসি হয়েছে আগের নিয়মে। অর্থাৎ, এসব পেঁয়াজে কোনো বাড়তি শুল্ক নেই। ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম যেন হঠাৎ বেড়ে না যায়, এর জন্য দেশটি এই শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ রোববার থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়ে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান জান্নাত এন্টারপ্রাইজের মালিক আল মামুন জানান, ভারত থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩৮ থেকে ৪৬ টাকায় আমদানি করা হতো, যা শুল্ক আরোপের পর বেড়ে ৫৩ থেকে ৬৫ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই বাংলাদেশে পণ্যটির বাজারে হঠাৎ অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। শুল্কযুক্ত দামের পেঁয়াজ এখনো আমদানি না হলেও দেশের বাজারে একদিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি অন্তত ২০ টাকা বেড়ে গেছে। বাজারে সিন্ডিকেটের প্রভাবে হঠাৎ এমন অস্থিরতা তৈরি হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। যদিও ব্যবসায়ীরা বলেছেন, সরবরাহ কম থাকায় পণ্যটির দাম বাড়ছে।

প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন ভারতের কৃষকরা

পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ভারত সরকার। গতকাল রোববার (২০ আগস্ট) এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন দেশটির কৃষকরা। মশলাজাতীয় পণ্যটির নিলাম বন্ধ করে দিয়েছেন তারা। শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে। এতে বলা হয়, কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন ভারতের অন্যতম অঙ্গরাজ্য মহারাষ্ট্রের আহমেদ নগরের কৃষকরা। জেলার রাহুরি তহসিলের পেঁয়াজ চাষিরা পাইকারি বাজারে চলমান নিলাম বন্ধ করে দিয়েছেন। গত শনিবার (১৯ আগস্ট) পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্কারোপ করে কেন্দ্রীয় সরকার। শিগগিরই এই শুল্ক হার কার্যকর হবে। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা বহাল থাকবে। অভ্যন্তরে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এবং ক্রমবর্ধমান দামে লাগাম টানতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। স্বাভিমানি কৃষক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি সন্দীপ জগতাপ বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষকবিরোধী অবস্থান আবারও সামনে এসেছে। মহারাষ্ট্রের কৃষকরা পেঁয়াজ রপ্তানি করে ভালো আয়ের আশা করছিলেন। কিন্তু আরোপিত শুল্ক নিশ্চিত করেছে যে, কোনো রপ্তানি হবে না। তিনি বলেন, এতে স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে যাবে। ফলে কৃষকদের ব্যাপক লোকসান হবে। ভোক্তাদের স্বার্থরক্ষা করতে কৃষকদের উপেক্ষা করছে সরকার অভিযোগ করে সন্দীপ জগতাপ বলেন, এবার মহারাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে বাজারে তাজা পেঁয়াজ আসতে বিলম্ব হবে। ফলে মার্কেটে অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। তিনি জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে আগামীতে রাজ্যজুড়ে পাইকারি বাজারে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হবে। রাহুরিতে বিক্ষোভকারী এক কৃষক বলেন, কেন্দ্রেরও আমাদের দুর্দশার দিকে নজর দেয়া উচিত। কারণ, রপ্তানি শুল্ক ব্যবসায়ীদের কাছে একটিই বার্তা পাঠিয়েছে যে, উৎপাদিত সব পেঁয়াজ শুধু অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রি হবে। ব্যবসায়ীরা এখন আমাদের পণ্যটির দাম কম দিতে শুরু করেছেন।

হিলিতে বাড়ছে দাম

কয়েক দিন ধরে ভারতে বন্যার কারণে সরবরাহ কমের অজুহাতে দেশের বাজারে বাড়তির দিকে ছিল পেঁয়াজের দাম। এমন অবস্থায় এবার বাংলাদেশে মসলাজাতীয় পণ্যটি রপ্তানিতে ৪০ ভাগ শুল্ক আরোপ করেছে ভারত সরকার। গতকাল রোববার (২০ আগস্ট) থেকেই এই নতুন শুল্ক হার কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা।এতে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত থাকলেও দাম কিছুটা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন তারা। গত শনিবার (১৯ আগস্ট) রাতে ভারত সরকারের ডেপুটি সেক্রেটারি অমরিতা তিতুস স্বাক্ষরিত এক নোটিফিকেশনের মাধ্যমে এই শুল্ক আরোপের বিষয়টি জানানো হয়। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা চালু থাকবে।

এদিন বন্দর দিয়ে ৪১ ট্রাকে ১২০৬ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবারের চেয়ে কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়ে তা বিক্রি হয়েছে। নতুন করে শুল্ক আরোপ করায় আরো ২ থেকে ৩ টাকা বাড়তে পারে।