ঢাকা ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স

এত আগ্রহ কেন ডিজিটাল ব্যাংকে ?

এত আগ্রহ কেন ডিজিটাল ব্যাংকে ?

ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্সের জন্য সব মিলিয়ে আবেদন জমা পড়েছে ৫২টি। আরো চারটি প্রতিষ্ঠান টাকা জমা দিয়েছে, কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন চূড়ান্ত করতে পারেনি। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক এসব আবেদন যাচাই-বাছাই করবে এবং তারপর তা পরিচালনা পর্ষদের কাছে উপস্থাপন করবে। তবে এখনো ঠিক হয়নি, কয়টি লাইসেন্স দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ৫২টি আবেদন যাচাই-বাছাই করতে সময় লাগবে।

অর্থাৎ, কবে নাগাদ যোগ্য আবেদনগুলো পরিচালনা পর্ষদের কাছে উত্থাপিত হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তেমনই জানা যাচ্ছে না, কবে নাগাদ শেষ পর্যন্ত ডিজিটাল ব্যাংক আলোর মুখ দেখবে। তবে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য আগ্রহ যে ব্যাপক, তা আবেদনের সংখ্যা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। যে ৫২টি আবেদন জমা পড়েছে, তার সব কটিই যৌথ উদ্যোগে করা আবেদন। কোনো কোনো আবেদনে ১০টি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। সুতরাং, এটা বলা যায়, ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে চেষ্টা করছে পাঁচ শতাধিক প্রতিষ্ঠান। ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালনার জন্য প্রধান কার্যালয় থাকবে। তবে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এটি হবে স্থাপনাবিহীন। অর্থাৎ, এই ব্যাংক কোনো ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) সেবা দেবে না। এর নিজস্ব কোনো শাখা বা উপশাখা, এটিএম, সিডিএম অথবা সিআরএমও থাকবে না। সব সেবাই হবে অ্যাপ-নির্ভর, মুঠোফোন বা ডিজিটাল যন্ত্রে। একটি ডিজিটাল ব্যাংকে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই সেবা মিলবে। গ্রাহকের লেনদেনের সুবিধার্থে ডিজিটাল ব্যাংক ভার্চুয়াল কার্ড, কিউআর কোড ও অন্য কোনো উন্নত প্রযুক্তিভিত্তিক পণ্য দিতে পারবে। তবে লেনদেনের জন্য কোনো প্লাস্টিক কার্ড দিতে পারবে না। অবশ্য এই ব্যাংকের সেবা নিতে গ্রাহক অন্য ব্যাংকের এটিএম, এজেন্টসহ নানা সেবা ব্যবহার করতে পারবেন। ডিজিটাল ব্যাংক কোনো ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারবে না। বড় ও মাঝারি শিল্পেও কোনো ঋণ দেওয়া যাবে না। শুধু ছোট ঋণ দিতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের লক্ষ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে। এরপর জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ তা অনুমোদন করে। ওই নীতিমালার ভিত্তিতেই বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের প্রস্তাব আহ্বান করে। এই নীতিমালায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল ব্যাংকের কোনো শাখা, উপশাখা, এটিএম বুথ বা কোনো স্থাপনা থাকবে না। মুঠোফোন অথবা ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহার করেই গ্রাহকদের ব্যাংক সেবা দেওয়া হবে। ব্যাংক কোম্পানি আইন ও নীতিমালা অনুযায়ী চলবে এই ডিজিটাল ব্যাংক। বাংলাদেশে প্রচলিত ধারার একটি ব্যাংক করতে প্রয়োজন হয় ৫০০ কোটি টাকার মূলধন। তবে একেকটি ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের জন্য ন্যূনতম মূলধন লাগবে ১২৫ কোটি টাকা।

এ ধরনের ব্যাংকের প্রত্যেক উদ্যোক্তাকে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা মূলধন জোগান দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক লাইসেন্স দেওয়ার ৫ বছরের মধ্যে এই ব্যাংককে দেশের পুঁজিবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) বা শেয়ার ছাড়তে হবে। আইপিওর পরিমাণ হতে হবে স্পনসরের প্রাথমিক অবদানের ন্যূনতম পরিমাণের সমান। এছাড়া শর্তে আরো বলা হয়েছে, এই ব্যাংক স্থাপনে উদ্যোক্তাদের অর্ধেককে হতে হবে প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং, উদীয়মান প্রযুক্তি, সাইবার আইন ও বিধিবিধান বিষয়ে শিক্ষা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। বাকি অর্ধেককে হতে হবে ব্যাংকিং, ই-কমার্স এবং ব্যাংকিং আইন ও বিধিবিধান বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। ডিজিটাল ব্যাংককে কোম্পানি আইন অনুযায়ী, প্রচলিত ব্যাংকের মতো সময়ে সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত ন্যূনতম নগদ জমা (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) বজায় রাখতে হবে। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপি ব্যক্তি বা তার পরিবারের কোনো সদস্য প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা হতে পারবেন না। এক পরিবার থেকে সর্বোচ্চ কতজন পরিচালক হতে পারবেন, তা ঠিক হবে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী। ডিজিটাল ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) ব্যাংকিং পেশায় কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, যার মধ্যে প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং, রেগুলেশন, গাইডলাইন, সার্কুলার ইত্যাদি ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনে যারা আবেদন জমা দিয়েছে, তাদের সবার নাম এখনো জানা যায়নি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকও তা প্রকাশ করেনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত