ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শুধু ঘোষণাতেই ব্যবসায়ীর পকেটে বাড়তি ১৮ কোটি

অতিরিক্ত মজুত তবুও বাড়ছে পেঁয়াজের দাম

অতিরিক্ত মজুত তবুও বাড়ছে পেঁয়াজের দাম

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য মতে, বাংলাদেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২৫ লাখ মেট্রিক টন। এ বছর দেশীয় উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ, চাহিদার তুলনায় বাংলাদেশে পেঁয়াজ উৎপাদন আরো বেশি হয়েছে। তবু পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। নিজেদের অভ্যন্তরীণ বাজার ঠিক রাখার কথা বলে প্রতিবেশী দেশ ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। গত শনিবার এ ঘোষণা দেয় দেশটি। এর পরদিন রোববার সেখানে সাপ্তাহিক ছুটির কারণে বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ফলে সোমবারের আগে নতুন শুল্ক পরিশোধ করে পেঁয়াজে আমদানির সুযোগ ছিল না; কিন্তু সেই পেঁয়াজ আসার আগেই বাংলাদেশের বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। গত দুই দিনে বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে গড়ে সাড়ে ১২ টাকা। দৈনিক চাহিদার হিসাবে এই সময়ে সাধারণ মানুষকে বাড়তি ব্যয় করতে হয়েছে প্রায় ১৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা। জানা গেছে, নতুন দামের পেঁয়াজ না এলেও স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন। দাম আরো বাড়বে বলে তারা প্রচার করছেন।

ডিমের বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই লেগেছে পেঁয়াজে আগুন। ভারতে শুল্ক আরোপের খবরে দেশের বাজারে রাতারাতি সব ধরনের পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। হঠাৎ সংকটের অজুহাতে কেজি প্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে দাম। এতে পুরোনো অজুহাত কাজে লাগাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল মঙ্গলবার কেজিতে শতক ছুঁয়েছে দেশি পেঁয়াজ। বাজারে কৃত্রিম এ সংকটের পেছনে কলকাটি নাড়ছে ‘সিন্ডিকেট চক্র’। যে চক্রে আছে খুচরা থেকে শুরু করে বড় ব্যবসায়ীরা। যে যেভাবে পারছে ভোক্তার পকেট কাটছে। এ চক্রের প্রধান হাতিয়ার- একে অন্যকে দোষারোপ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বছরে যে পরিমাণ পেঁয়াজ দরকার এবার তার চেয়ে বেশি উৎপাদন হয়েছে। ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মজুত রেখে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বাড়াচ্ছেন। সিন্ডিকেটের এই চক্রে রয়েছেন খুচরা থেকে বড় ব্যবসায়ী। তারা দাম বৃদ্ধির বিষয়ে একে অপরকে দোষারোপ করেন। এর মধ্যেই সবাই অবৈধ মুনাফা করে নিচ্ছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে। একটু নিম্নমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি দরে, যা তিন দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। অর্থাৎ, তিন দিনের ব্যবধানে কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়েছে। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে, যা তিন আগেও ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। সরকারের বাজার মনিটরিং প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনেও একই চিত্র উঠে এসেছে। টিসিবির তথ্য মতে, ২১ আগস্ট রাজধানীতের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি। আমদানি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে, যা এক মাস আগেও ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা ও ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। ৩ বছর আগের অর্থাৎ ২০২০ সালে এই দিনে দেশি পেঁয়াজের মূল্য ছিল ৩৪ থেকে ৪৫ টাকা কেজি। আর আমদানি পেঁয়াজের কেজি ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা। অর্থাৎ, ৩ বছরের ব্যবধানে কেজিতে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫৫ টাকা। আর আমদানি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩৫ টাকা। চট্টগ্রামের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ও চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘জলাবদ্ধতার কারণে বিভিন্ন গোডাউনে পণ্য নষ্ট হয়ে গেছে। একই কারণে বাজারে কয়েক দিন গাড়ি প্রবেশ করতে পারেনি। এতে বাজারে সরবরাহ কমে গেছে। তাই দাম বাড়তির দিকে।’ রাজধানীর শ্যামবাজারের পাইকারি (আড়তদার) ব্যবসায়ী আব্দুল মাজেত বলেন, ‘ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এ কারণে পেঁয়াজ আমদানি ক্ষেত্রে এখন ৪০ শতাংশ টাকা বেশি দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করতে হচ্ছে। এতে পাইকারি পর্যায়ে কেজিতে ১০ টাকা দাম বেড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘শ্যামবাজারে আজকে আমদানি পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭২ টাকা কেজি।’ রপ্তানির ওপর শুল্ক বাড়ানোর পেঁয়াজ তো এখনো ঢাকা আসার কথা নয়, তারপরও দাম বাড়ল কীভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন ভারত থেকে আসতে সময় লাগে না। যে দিন কেনা হয় সে দিনই বাংলাদেশে চলে আসে। তবে এই সুযোগে কিছু ব্যবসায়ী পেঁয়াজ বেশি দামে বিক্রি করছেন।’ গত শনিবার (১৯ আগস্ট) পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে ভারত। দেশটির কর্তৃপক্ষ বলেছে, শুল্ক আরোপের এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর করা হবে। ভারতের পেঁয়াজের ওপর আরোপিত নতুন এই শুল্ক চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে। গত শনিবার দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এসব তথ্য জানানো হয়। সেই হিসাবে আমদানি পেঁয়াজের দাম বাড়াটা যৌক্তিক কিন্তু দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়ছে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে আড়তদার আব্দুল মাজেদ বলেন, ‘চাহিদার তুলনা সরবরাহ কম থাকলে এমনিতে পণ্যের দাম বাড়ে। তাই ব্যবসায়ীরাও বাড়িয়েছেন।’ কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘আমদানি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা বাড়তে পারে। কিন্তু দেশি পেঁয়াজ বাড়ার কোনো কারণ দেখছি না। অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বাড়িয়ে মুনাফা তুলে নিচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত