ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ব্যবসায় বৈচিত্র্য আনছেন গার্মেন্টস মালিকরা

ব্যবসায় বৈচিত্র্য আনছেন গার্মেন্টস মালিকরা

দেশের তৈরি পোশাক শিল্প ও বস্ত্র শিল্পের মালিকরা তাদের বাড়তি অর্থ নতুন নতুন খাতে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছেন। ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতা বেড়ে যাওয়া সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এমন উদ্যোগ নিচ্ছেন শিল্পপতিরা। সফল শিল্পপতিরা বিদ্যুৎ, আবাসন, কৃষি, গবাদি পশুর খামার, হোটেল, ব্যাংকিং, চা বাগান, কম্পিউটার চিপস, বিমা, পুঁজিবাজার, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, লিজিং, ই-কমার্স, নির্মাণশিল্প, ওষুধ ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন। ১৯৭০-এর দশকের শেষভাগ থেকে গার্মেন্টস মালিকরা বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মধ্যদিয়ে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। তখন স্থানীয় উদ্যোক্তারা তৎকালীন কোটা ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে তৈরি পোশাককে সফল খাতে পরিণত করেন। তারা ৩ দশকেরও বেশি সময় ধরে জাতীয় রপ্তানি আয়ে প্রায় ৮৫ শতাংশ অবদান রাখছেন। বর্তমানে ১০০টিরও বেশি বস্ত্র ও তৈরি পোশাক কারখানার বার্ষিক রপ্তানি ৫০ কোটি ডলার। দেশের ব্যাংক, বিমা, গণমাধ্যম ও চা বাগানের মতো খাতে বিনিয়োগকারী শীর্ষ গার্মেন্টস মালিকদের মধ্যে হা-মীম গ্রুপ অন্যতম। আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর চাহিদা মেটাতে এই প্রতিষ্ঠানটি আরো বেশি ডেনিম ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাপড় উৎপাদনের মাধ্যমে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। দেশের অন্যতম বৃহৎ বস্ত্র ও তৈরি পোশাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডিবিএল গ্রুপ বর্তমানে টাইলস, সিরামিক ও ওষুধ খাতের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও দুগ্ধজাত পণ্য খাতে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। আবাসন, ই-কমার্স, হোটেল ও লিজিং কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে অপর শীর্ষ বস্ত্র ও তৈরি পোশাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অনন্ত গ্রুপ। এই টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস উদ্যোক্তা জানান যে তিনি ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে কয়েক মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন। ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে আরো বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছেন এই উদ্যোক্তা। গত বছর এইচএসবিসি গ্লোবাল রিসার্চের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্য ও জার্মানিকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ বিশ্বের নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে।

২০২১ সালে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী ১৬তম বৃহত্তম ভোক্তা বাজার হয়। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী মনে করেন, যখন সম্পদ বেড়ে যায়, তখন উদ্যোক্তারা নতুন উদ্যোগ নেন। দেশে এখন তাই হচ্ছে। সুযোগ তৈরি হওয়ায় ব্যবসাকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাওয়ার এখনই সময়- বলে মন্তব্য করেন তিনি। এই ব্যবসায়ী নেতা মনে করেন, বাংলাদেশকে টেক্সটাইল যন্ত্রপাতি উৎপাদন করতে হবে, যেহেতু দেশটি এখন এই খাতে খুব শক্তিশালী। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালের বৈশ্বিক পোশাকশিল্পে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের অবদান ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। পরের বছর তা বেড়ে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ হয়। নতুন নতুন খাতে দেশের শীর্ষ গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের মানে এই নয় যে তারা গার্মেন্টস ছেড়ে চলে যাচ্ছে। বরং, তারা পরিবেশবান্ধব কারখানা তৈরির জন্য লাখ লাখ ডলার বিনিয়োগ করেছে। বর্তমানে ২০০টি লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন (এলইইডি) সার্টিফাইড কারখানা নিয়ে পরিবেশবান্ধব কারখানার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বসেরা। আরো ৫০০ কারখানা এমন স্বীকৃতির অপেক্ষায় আছে। এলইইডি বিশ্বব্যাপী পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো দেখভাল করে। এছাড়া, স্থানীয় গার্মেন্টস মালিকরা উচ্চমানের মূল্য সংযোজন পোশাকের উৎপাদন বাড়াচ্ছে। এর ফলে রপ্তানি বাজারে সাধারণ গার্মেন্টস পণ্যের তুলনায় বেশি দাম পাওয়া যাচ্ছে। আমিন হিলালীর মতে, ‘ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুযোগ দিতে হবে, যাতে তারা একদিন বড় হতে পারে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত