ঢাকা ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পেঁয়াজ, ডিম ও ডালের বাজারে অস্থিরতা

করপোরেট কোম্পানির কারসাজি

করপোরেট কোম্পানির কারসাজি

বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) অভিযোগ, বর্তমানে ডিম-মুরগির বাজারে অস্থিরতার মূলহোতা বাজারের করপোরেট কোম্পানিগুলো। এসব কোম্পানির একচেটিয়া আধিপত্য এবং সিন্ডিকেটের কারণে বেড়ে গেছে ডিম-মুরগির দাম। গতকাল বুধবার (২৩ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবে বিপিএ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ব্যবসায়ীরা। বিপিএ সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, করপোরেট কোম্পানির আধিপত্যে বিপদের মুখে আছেন প্রান্তিক খামারিরা। বাজারে টিকতে না পেরে অনেকে দেউলিয়া হয়ে গেছেন। অনেকে আবার লোকসান দিয়ে হলেও ব্যবসা টিকিয়ে রাখছেন। তিনি আরো বলেন, বড় বড় করপোরেট কোম্পানি নিজেদের খামারি বলে পরিচয় দেয়, ফিড বা মুরগির বাচ্চা নিয়ে অ্যাসোসিয়েশন করে বলে- এগুলো খামারিদের সংগঠন। কিন্তু আদতে এখান থেকে খামারিরা কোনো লাভ পান না। এসব অ্যাসোসিয়েশনে নিজেদের মতো দামদস্তুর ঠিক করে কোম্পানিগুলো লাভ তুলে নেয় ঠিকই, কিন্তু বিপদে পড়েন প্রান্তিক খামারিরা। এ ব্যাপারে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হস্তক্ষেপের আহ্বান জানান বিপিএ সভাপতি।

তিনি বলেন, বড় বড় কোম্পানি প্রতি বস্তা মুরগির খাবার কেনে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। সেখানে প্রান্তিক খামারিদের খাবার কিনতে হয় ৩ হাজার ৫০০ টাকায়। একেক বস্তায় যদি খাবারের দামের পার্থক্য হয় ১ হাজার টাকা, তাহলে উৎপাদন খরচের পার্থক্য কত, তা সহজেই অনুমান করা যায়। মুরগির দাম নিয়ে বিপিএ জানায়, যেখানে করপোরেট কোম্পানিগুলো প্রতি কেজি মুরগি উৎপাদন করে ১২৯ টাকায়, সেখানে খামারিদের উৎপাদন খরচের পর দাম দাঁড়ায় ১৬৭ টাকা। বাজারে এমন অসম প্রতিযোগিতা চলার কারণে প্রান্তিক খামারিদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে উঠছে। সংবাদ সম্মেলনে ডিম ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিরা জানান, সরকার ডিমের দাম ঠিক করেছে ১২ টাকা। এখানে সরবরাহ ব্যবস্থার বিষয়টি একেবারে মানা হয়নি। প্রতিটি ডিম উৎপাদনেই খরচ হয় ১০ টাকা ৮০ পয়সা। এরপর স্থানীয় আড়তদার, শহরের আড়তদার, ভ্যানগাড়ির পাইকারি বিক্রয় এবং অবশেষে খুচরা বিক্রেতা হয়ে ভোক্তার হাতে ডিম যায়। এ ক্ষেত্রে ১২ টাকায় ডিম বিক্রি অসম্ভব। কম করে হলেও ডিমের দাম ১২ টাকা ২৫ পয়সা নির্ধারণ করা উচিত। এতে ন্যূনতম লাভ নিশ্চিত হবে। বাজারে করপোরেট প্রতিষ্ঠানের একাধিপত্য এবং সিন্ডিকেট ভেঙে দিলে ডিমের উৎপাদন খরচ কমে আসবে বলে মনে করে বিপিএ। ডিমের দাম কমানোর উপায় কী- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সুমন হাওলাদার বলেন, সরকার চাইলেই ডিমের উৎপাদন খরচ ৮ টাকায় নামিয়ে আনতে পারে। যেসব করপোরেট প্রতিষ্ঠান বাজারে মুরগির খাবার বিক্রি করে, তাদের আধিপত্য এবং সিন্ডিকেট ভেঙে দিলে ডিমের উৎপাদন খরচ কমে আসবে। শুধু ডিম নয়, ব্রয়লার এবং সোনালি মুরগির দামও কমে আসবে বলে জানান তিনি।

ভোক্তার ভোগান্তি, খামারির লোকসান, টাকা যায় কার পকেটে?

কেন না, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খাবার উৎপাদনের পুরোটাই এখন করপোরেট কোম্পানির হাতে। বিপিএ সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, আগে অনেক ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান ফিডের ব্যবসা করত। করপোরেট হাউসের আধিপত্যে টিকতে না পেরে তারা ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। এতে ফিড ব্যবসাও চলে গেছে এসব হাউসের কাছে। একদিকে ফিড, অন্যদিকে বাচ্চা, সবই এখন তাদের দখলে। তারাই দাম নির্ধারণ করে, তারাই ভোক্তাদের বিপদে ফেলে আর নিঃস্ব করে প্রান্তিক খামারিদের। এদিকে দ্রব্যমূল্যের ন্যায্যতা নিশ্চিতে প্রায়ই ভোক্তা অধিকার বাজারে অভিযান চালায় উল্লেখ করে খামারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলেন, যেখানে করপোরেট কোম্পানিগুলো মূল হোতা; তাদের আইনের আওতায় না এনে বাজার অভিযান করে বাজারে স্থিতিশীলতা আনা যাবে না। বিপিএ’র দেয়া তথ্য মতে, যেখানে প্রান্তিক পর্যায়ে উৎপাদনে ৩০ শতাংশ লাভের সরকারি অনুমতি আছে, সেখানে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ৬০ শতাংশ পর্যন্ত লাভ করে থাকে। অন্যদিকে প্রান্তিক খামারিরা ২০ শতাংশ পর্যন্ত লোকসান গুনছেন বলে জানান তারা। বাজারে স্থিতিশীলতা না আনলে, করপোরেট সিন্ডিকেটকে নজরদারিতে রাখতে না পারলে পুরো পোলট্রি শিল্প চলে যাবে বড় করপোরেট ব্যবসায়ীদের হাতে। এতে বাজারে বাড়বে স্বেচ্ছাচারিতা আর নিঃস্ব হবে প্রান্তিক খামারিরা।

বাজারে প্রতিনিয়তই কোনো না কোনো ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত