ঢাকা ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মেয়াদ বাড়াতে চায় না বিশ্বব্যাংক

দক্ষিণ সিটির প্রকল্পে ধীরগতি

দক্ষিণ সিটির প্রকল্পে ধীরগতি

নাগরিক সুবিধা বাড়ানোর জন্য ২০১৯ সালে ‘ঢাকা সিটি নেইবারহুড আপগ্রেডিং’ প্রকল্প হাতে নেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তবে ৫ বছর তিন মাস মেয়াদি এ প্রকল্পে সাড়ে চার বছরে অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৯ শতাংশ। ধীরগতির কারণে প্রকল্পটির মেয়াদ আর বাড়াতে চায় না ঋণদানকারী সংস্থা বিশ্বব্যাংক। এদিকে প্রকল্পে ধীরগতির কারণ হিসেবে করোনা এবং প্রকল্পের প্রতিটি কাজের জন্য বিশ্বব্যাংকের অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে বিশ্বব্যাংক বলেছে, সব প্রকল্পে যা হয় এই প্রকল্পেও তাই হয়েছে। অন্যসব প্রকল্পে তো এমন ধীরগতি হয় না। চলতি অর্থবছরে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) প্রকল্পটিকে ধীরগতিসম্পন্ন হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছে। সেই সঙ্গে এটি কীভাবে দ্রুত শেষ করা যায় তার উদ্যোগ নিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে সম্প্রতি আইএমইডির সেক্টর-৩ এর মহাপরিচালক মো. আব্দুল মজিদের সভাপতিত্বে একটি বাস্তবায়ন অগ্রগতি পরিবীক্ষণ সংক্রান্ত সভা হয়। সভায় প্রকল্প পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, প্রকল্পটি মোট ৮৮০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে মার্চ ২০১৯ থেকে জুন ২০২৪ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য একনেকে অনুমোদন হয়। প্রকল্পে ৮৩৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক এবং বাকি ৪৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা দিচ্ছে সরকার। প্রকল্প পরিচালক জানান, জুলাই ২০২৩ পর্যন্ত প্রকল্পটির ক্রমপুঞ্জিত বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ২৪ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৯ শতাংশ। প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ ১৮টি, রাস্তা উন্নয়ন ১৫ দশমিক ৯১ কিলোমিটার, ফুটপাথ উন্নয়ন ৩৮ দশমিক ১০ কিলোমিটার, নদীতীর উন্নয়ন ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার, খেলার মাঠ উন্নয়ন ৮ দশমিক ৫৪ বর্গমিটার, ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ দুটি, ট্রাফিক ব্রিজ নির্মাণ দুটি, ড্রেন উন্নয়ন ৮২টি, সলিড ওয়েস্ট ট্রান্সফার স্টেশন চারটি, পাবলিক টয়লেট আটটি, বৃক্ষরোপণ ২৭১৯টি, পার্ক উন্নয়ন ২০ বর্গমিটার, হেরিটেজ বিল্ডিং সংস্কার ইত্যাদি কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রকল্পের অধিকাংশ ভৌতকাজ ধীরগতিতে চলমান রয়েছে এবং কিছু ভৌতকাজ অদ্যাবধি শুরু করা যায়নি।

সভায় ধীর অগ্রগতি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক জানান, প্রকল্পের অনুমোদিত ডিপিপি মোতাবেক জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগে প্রায় ১ বছর ৮ মাস বিলম্ব ঘটে। ২০২০ সালে ১৩ ডিসেম্বর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু ২০২০ সালের মার্চ থেকে বিশ্বব্যাপী কোভিড মহামারির প্রাদূর্ভাবে সারা দেশে দুই দফায় লকডাউন দেওয়া হয়। এ কারণে সে সময় প্রকল্পের দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এছাড়া প্রকল্পটি বিশ্বব্যাংকের ফ্রেমওয়ার্ক প্রকল্প। ফ্রেমওয়ার্ক প্রকল্পে প্রতিটি সাব-প্রজেক্ট গ্রহণ এবং অনুমোদনের আগে ফিজিবিলিটি স্টাডি, সাব-প্রজেক্ট স্ক্রিনিং, সোশ্যাল, এভায়রনমেন্টাল এবং ট্রাফিক রিসেটেলমেন্ট কার্যক্রম প্রকল্প চলাকালীন সময়ে করা হয়। তারপরও প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপে বিশ্বব্যাংক থেকে অনুমোদন গ্রহণ করতে হচ্ছে, যা সময়সাপেক্ষ। তাই প্রকল্পটির অগ্রগতি এত কম হয়েছে। সভায় প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়নের বর্তমান অবস্থা জানতে চাওয়া হলে প্রকল্প পরিচালক জানান, প্রকল্পের অনুমোদিত ২৭টি প্যাকেজ রয়েছে। এর মধ্যে দুটি প্যাকেজ সমাপ্ত হয়েছে, ১৪টি প্যাকেজ বাস্তবায়নের কাজ চলমান। ১০টি প্যাকেজ বিশ্বব্যাংকের কাছে অনুমোদনের জন্য অপেক্ষমাণ এবং একটি প্যাকেজ বিশ্বব্যাংক কর্তৃক বাতিল করা হয়েছে। সভায় বর্তমানে চলমান প্যাকেজগুলোর কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। প্রকল্প পরিচালক আরো জানান, অপেক্ষমাণ প্যাকেজগুলো বেশ কিছুকাল আগে বিশ্বব্যাংকের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু এখনো অনুমোদন পাওয়া যায়নি। প্যাকেজগুলো অনুমোদিত হলে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করা হবে। প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে আইএমইডির সেক্টর-৩ এর মহাপরিচালক মো. আব্দুল মজিদ বলেন, আমরা প্রকল্পটিকে ধীরগতির প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছি এবং প্রকল্পটি কীভাবে দ্রুত শেষ করা যায় তার উদ্যোগ নিয়েছি। সম্প্রতি আমরা একটি সভা করেছি। প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি নিয়ে সামনে আরও তিনটি সভা করব। মহাপরিচালক বলেন, প্রকল্পটিতে ধীরগতি হওয়ায় আর মেয়াদ বাড়াতে চাচ্ছে না বিশ্বব্যাংক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত