ঢাকা ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সর্বজনীন পেনশনে সাড়া

সর্বজনীন পেনশনে সাড়া

১৭ আগস্ট থেকে গত বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সর্বজনীন পেনশন স্কিম বা কর্মসূচিতে চাঁদা দিয়েছেন মোট ৮ হাজার ২৩১ জন। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা নামের চারটি আলাদা পেনশন কর্মসূচি চালু হয়েছে। আরো দুটি কর্মসূচি চালুর চিন্তা করছে সরকার। সূত্রগুলো জানায়, এ পর্যন্ত যত ব্যক্তি চাঁদা দিয়েছেন, তার মধ্যে প্রগতি কর্মসূচির আওতায় ৪ হাজার ৩৭১ জন, সুরক্ষায় ২ হাজার ৭৪১, সমতায় ৯১০ ও প্রবাস কর্মসূচিতে চাঁদা দিয়েছেন ২০৯ জন। পেনশনের কর্মসূচিগুলোর মধ্যে প্রবাস কর্মসূচিতে সাড়া কম পাচ্ছে সরকার। এজন্য কর্মসূচিটিকে ঘিরে নতুন করে ভাবা হচ্ছে সরকারের দিক থেকে। দেশে প্রবাসী আয়ে (রেমিট্যান্স) যে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে, তা দেওয়া হতে পারে এ পেনশন কর্মসূচির চাঁদার বিপরীতেও। গত জুলাইয়ের সরকারি হিসাবে, ১ কোটি ৪৯ লাখের বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত। কর্মসূচিটি তাঁদের জন্য। এদিকে নিবন্ধনের পর চাঁদা দিলে অন্য তিন কর্মসূচি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হলেও সমতা কর্মসূচির ক্ষেত্রে তা হতে একটু দেরি হবে। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করার পরই তা চূড়ান্ত হবে। তবে চূড়ান্ত না হলেও এ কর্মসূচির আওতায় পরের মাসের চাঁদা দেওয়া যাবে। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় কেউ কোনো ভাতা পেয়ে থাকলে এ কর্মসূচিতে যুক্ত হওয়া যাবে না। সমতা কর্মসূচিটি দরিদ্র মানুষের জন্য, যাদের বার্ষিক আয় ৬০ হাজার টাকার কম। এ কর্মসূচিতে চাঁদার অর্ধেক টাকা দেবে সরকার। তাই কোনো ভাতাভোগী যাতে এ কর্মসূচিতে যুক্ত না হন, সে জন্যই মূলত যাচাই-বাছাই করা হবে। সমতা কর্মসূচিতে চাঁদার হার একটিই, আর তা হচ্ছে ৫০০ টাকা। প্রতি চাঁদা দাতার বিপরীতে সরকার অনুদান দেবে আরও ৫০০ টাকা করে। সমতা কর্মসূচিতে ১৮ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত অর্থাৎ ৪২ বছর কেউ চাঁদা দিলে ৬০ বছরের পর থেকে চাঁদা দাতা মাসিক পেনশন পাবেন ৩৪ হাজার ৪৬৫ টাকা করে। চাঁদা দেওয়ার জন্য এখন পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের সঙ্গেই চুক্তি করেছে পেনশন কর্তৃপক্ষ। উদ্বোধনের পর অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংকের সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে। সেবা দেওয়ার কাজটিকে আরও সহজ ও মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে ভবিষ্যতে বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গেও চুক্তি হওয়ার আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে তিন দিন আগে দেশের ৬৪ জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সঙ্গে জুম বৈঠক করেছে পেনশন কর্তৃপক্ষ। ডিসিদের বলা হয়, এ কর্মসূচি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নে মানুষকে সহযোগিতা করতে হবে। পেনশন কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকর্তা জানান, ‘নিবন্ধন অনেকেই করছেন। কিন্তু নিবন্ধনকে আমরা আমলে নিচ্ছি না। আমরা দেখছি, প্রকৃতপক্ষে চাঁদা দিয়েছেন কতজন। চাঁদা দাতাই হচ্ছে প্রকৃত হিসাব, নিবন্ধনকারী নয়। আগ্রহীদের অনেকে নিবন্ধন করা যাচ্ছে কি না, তা পরীক্ষা করার জন্যও নিবন্ধন করেন।’

একক চাঁদায় এগিয়ে প্রবাসীরা : সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রবাসীরা সবার নিচে থাকলেও জনপ্রতি গড় চাঁদা দেওয়ায় সবার উপরে রয়েছেন তারা। তবে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সবার ওপরে থাকা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা জনপ্রতি গড় চাঁদা দেওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছেন তৃতীয় স্থানে। দ্বিতীয় স্থানে আছেন অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিরা। প্রাথমিকভাবে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা এবং সমতা- এই চার স্কিম নিয়ে সর্বজনীন পেনশন চালু করেছে সরকার। শুরুতেই এই পেনশন স্কিমে মানুষের বেশ ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। প্রথম সপ্তাহেই নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন সাড়ে ৮ হাজারের বেশি মানুষ। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা। নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চাঁদার কিস্তি পরিশোধ করার তালিকায় সব থেকে বেশি রয়েছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা। মোট যে সংখ্যক মানুষ নিবন্ধন সম্পন্ন করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন, তার অর্ধেকের বেশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী। অপরদিকে সব থেকে কম নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন প্রবাসীরা। তবে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাদের মধ্যে এককভাবে চাঁদা দেওয়ায় সবার ওপরে রয়েছেন প্রবাসীরা। প্রথম সপ্তাহে যেসব প্রবাসী নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন, তাদের জমা দেওয়া গড় চাঁদার পরিমাণ ২০ হাজার টাকা। আর স্বাভাবিকভাবেই জনপ্রতি গড় চাঁদা দেওয়ায় সবার নিচে রয়েছেন দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারীরা। তাদের জন্য চালু করা স্কিমে জনপ্রতি গড়ে চাঁদা জমা পড়েছে এক হাজার ৪৪৪ টাকা।

অবশ্য সবকয়টি স্কিমেই গড়ে জমা পড়া চাঁদার পরিমাণ, ওই স্কিমের মাসিক সর্বোচ্চ চাঁদার পরিমাণের থেকে বেশি। এর কারণ হলো সবকয়টি স্কিমের জন্য চাঁদার কিস্তি চাঁদাদাতার পছন্দ অনুযায়ী মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে পরিশোধের সুযোগ রাখা হয়েছে। এছাড়া অগ্রীম চাঁদা দেওয়ার সুযোগও আছে। এ কারণে মাসিক চাঁদার সর্বোচ্চ হারের তুলনায় জমাপড়া গড় চাঁদার পরিমাণ বেশি। গত ১৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন করেন। এর পর পরেই প্রবাস স্কিম, প্রগতি স্কিম, সুরক্ষা স্কিম এবং সমতা স্কিমের আবেদন শুরু হয়। উদ্বোধনের পর প্রথমদিনেই নিবন্ধন সম্পন্ন করে চাঁদা পরিশোধ করেন এক হাজার ৭০০ জন। তারা প্রায় ৯০ লাখ টাকা চাঁদা জমা দেন। পরের দুইদিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। এই দুইদিনে আরও ২ হাজার ৫০০ জনের বেশি চাঁদা পরিশোধ করে পুরো আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। এতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর প্রথম তিনদিনেই নিবন্ধন করে করে চাঁদা পরিশোধের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪ হাজার ৩৯০ জনে। আর তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় ২ কোটি ১৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। পরের পাঁচদিনে (২০ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত) নিবন্ধন সম্পন্ন করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন আরো ৪ হাজার ৩৯০ জন। গত বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) পর্যন্ত মোট চাঁদা পরিশোধ করেছেন ৮ হাজার ৫৫১ জন। আর তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ৪ কোটি ৩৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের জন্য চালু করা প্রগতি স্কিমে নিবন্ধন করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন ৪ হাজার ৫১৯ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ২ কোটি ৪৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। অর্থাৎ জনপ্রতি গড়ে চাঁদা দিয়েছেন ৫ হাজার ৫২১ টাকা। এই স্কিমে মাসিক চাঁদার হার সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা। অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি যেমন- কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি প্রভৃতি পেশার ব্যক্তিদের জন্য চালু করা হয়েছে সুরক্ষা স্কিম। এই স্কিম গ্রহণ করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন ২ হাজার ৯০৭ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ২ কোটি ৩৩ লাখ ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ জনপ্রতি জমা করা চাঁদার পরিমাণ ৮ হাজার ৩৪ টাকা। এই স্কিমে মাসিক চাঁদার হার সর্বনিম্ন এক হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা। যার বর্তমান আয় সীমা বাৎসরিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা তাদের জন্য চালু হয়েছে সমতা স্কিম। এই স্কিমে চাঁদা দিয়েছেন ৯১০ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ১৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ জনপ্রতি গড়ে চাঁদা দিয়েছেন এক হাজার ৪৪৪ টাকা। এই স্কিমের মাসিক চাঁদার হার এক হাজার টাকা। এর মধ্যে স্কিম গ্রহণকারী চাঁদা দেবেন ৫০০ টাকা এবং বাকি ৫০০ টাকা দেবে সরকার। এছাড়া প্রবাসীদের জন্য চালু করা প্রবাস স্কিমে চাঁদা দিয়েছেন ২১৫ জন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত