ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে তৈরি পোশাক রফতানিতে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা-জিএসপি হারানোর শঙ্কার মধ্যেই সুখবর দিল বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। সংগঠনটির পক্ষ থেকে সভাপতি ফারুক হাসান জানিয়েছেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পরেও যুক্তরাজ্যের বাজারে তৈরি পোশাক রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের জন্য করা যুক্তরাজ্যের নতুন বাণিজ্য নীতি ডেভেলপিং কান্ট্রিজ ট্রেডিং স্কিম-ডিসিটিএস পর্যালোচনা করে গতকাল শনিবার একথা জানান বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। নতুন স্কিম অনুযায়ী আমদানি করা কাঁচামালে তৈরি করা পোশাক পণ্য রফতানিতেও মিলবে বাড়তি সুবিধা। বিজিএমইএ সভাপতি জানান, ১ জানুয়ারি থেকে ১০ বছরের জন্য কার্কযর হতে যাওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন জিএসপির যে শর্ত জুড়ে দেয়া হচ্ছে, তাতে জিএসপি প্লাস সুবিধায় তৈরি পোশাক রফতানিতে সেফগার্ড মেজার্ডের বাধা দূর করতে সরকারের সঙ্গে কাজ করছে বিজিএমইএ। উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম রফতানি গন্তব্য। গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) এই গন্তব্যে ৫.০২ মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৪.৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়া ২০২৩ সালের জানুয়ারি-জুলাই সময়কালে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ ৩.১১ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি করেছে। তবে ২০২২ সালের জানুয়ারি-জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ২.৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক রফতানি হয়।
ইরাকি ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ বিজিএমইএ’র : ইরাকের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে চায় বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। সংগঠনটির এক প্রতিনিধি দল ইরাকের ইরবিলে, ইরবিল চেম্বারস অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি এবং কুর্দিস্তান ফেডারেশন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ড. দারা জলীল আল-খায়াতের সঙ্গে এক বৈঠকে এ আগ্রহের কথা জানায়।
বৈঠকে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগানোর জন্য অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক প্রতিনিধি দলের সফর বিনিময়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিজিএমইএ সভাপতি ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশের বিনিয়োগের সুযোগ অন্বেষণের জন্য বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানান।
বাড়ছে পোশাক রপ্তানি : চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। দেশে দেশেও উচ্চ মূল্যস্ফীতি। এর মধ্যেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১০ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। যদিও এই সময়ে পোশাকের অন্যতম প্রধান কাঁচামাল তুলার আমদানি কমেছে ২৯ শতাংশ। গত জানুয়ারি থেকে জুন এই সময়কালে দেশের বস্ত্রকলগুলো ১৭ হাজার কোটি টাকার ৬ লাখ ৩২ হাজার টন তুলা আমদানি করেছে। গত বছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ৮ লাখ ৯১ হাজার টন তুলা। যদিও গত বছর শেষে তুলা আমদানি দাঁড়িয়েছিল ১৮ লাখ টনে। তাতে ব্যয় হয়েছিল ৪৭ হাজার কোটি টাকা। পোশাক রপ্তানি বাড়ল আর তুলার আমদানি কমল-এমন বৈপরীত্যের বিষয়ে বস্ত্র খাতের কয়েকজন উদ্যোক্তা জানান, গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ কমেছে। তার প্রভাব বস্ত্র খাতে পড়েছে। এমনও হয়েছে, যেটুকু ক্রয়াদেশ ছিল সেটুকুও গ্যাস-সংকটের কারণে সময়মতো দেওয়া যায়নি। অন্যদিকে গত বছর বিপুল পরিমাণ তুলা আমদানি হয়। যেহেতু গ্যাস, ডলার ও ক্রয়াদেশ-সংকট ছিল, তাই অনেক স্পিনিং মিল বেশি তুলা আমদানির ঝুঁকি নেয়নি। বর্তমান পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ বাড়লে সুতার সংকট দেখা দিতে পারে-এমন আশঙ্কার কথা জানান উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, তুলা আমদানির জন্য বুকিং দিলে দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগে। আবার ডলার-সংকটের কারণে তুলা আমদানির ঋণপত্র খুলতে অনেক প্রতিষ্ঠানের বেগ পেতে হচ্ছে। আমদানি করা তুলা দিয়ে স্পিনিং মিলগুলো সুতা তৈরি করে। সেই সুতায় উৎপাদিত কাপড় দিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি করা হয়। বস্ত্রকলমালিকদের সংগঠন বিটিএমএর তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী নিট পোশাক কারখানার চাহিদার ৮০ শতাংশ সুতার জোগান দেয় দেশীয় স্পিনিং মিলগুলো। ওভেন পোশাক কারখানার ক্ষেত্রে সেটি ৩৫-৪০ শতাংশ। দেশে বর্তমানে সুতার কল আছে ৫১০টি। সেগুলোর সুতা উৎপাদনের ক্ষমতা বছরে ৩৮০ কোটি কেজি।