গ্রামের মানুষের আয় কম এবং তাদের ক্রয়ক্ষমতাও কম। ফলে গ্রামে মূল্যস্ফীতি শহরের তুলনায় কম থাকার কথা। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পরিসংখ্যান বলছে উল্টো কথা। শহরের চেয়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি বেশি। অন্তত তিন অর্থবছর ধরে এমন পরিসংখ্যানই পাওয়া যাচ্ছে। অথচ খাদ্যপণ্যের বেশির ভাগই উৎপাদন হয় গ্রামে। পরিবহন ব্যয় এবং বিপণন প্রক্রিয়ায় পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে কয়েক হাত বদল হয়ে শহরের ভোক্তার কাছে আসে এসব পণ্য। বিবিএসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত অর্থবছরে শহরের মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ, অথচ গ্রামে ছিল ৯ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে শহরের মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং গ্রামে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৪২ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে শহর ও গ্রামের মূল্যস্ফীতি ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৪৯ ও ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। নতুন অর্থবছরেও এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। গেল জুলাইয়ে শহরাঞ্চলের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অন্যদিকে গ্রামের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হানের মতে, গ্রামে বরং মূল্যস্ফীতি কম থাকার কথা। কেন না, গ্রামে উৎপাদিত পণ্য শহরে আসতে পরিবহণ ব্যয় রয়েছে। আবার মধ্যস্বত্বভোগী আছে। ফলে শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি হওয়ার যৌক্তিক কারণ নেই। উপাত্ত সংগ্রহে বিবিএসের পদ্ধতিগত দুর্বলতার কারণে এমন হয়ে থাকতে পারে। এ কারণে মূল্যস্ফীতির প্রকৃত চিত্র জানা যাচ্ছে না। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখা প্রয়োজন। বিবিএস অবশ্য বলছে, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ পদ্ধতি এবং পরিসংখ্যান তৈরিতে তাদের কোনো ধরনের দুর্বলতা নেই। সংস্থার মহাপরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন, বাজারের প্রকৃত পরিস্থিতি তুলে ধরতে প্রায় সাড়ে ৭০০ পণ্য এবং সেবার দর যাচাই করে মূল্যস্ফীতির প্রতিবেদন তৈরি করেন তারা। তবে কী কারণে গ্রামে বেশি, সে অনুসন্ধান তারা করেন না। তার ব্যক্তিগত মত হলো, সড়ক অবকাঠামো এবং তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়নের সুযোগে গ্রামে উৎপাদিত পণ্য দ্রুত শহরে চলে আসতে পারছে। মোবাইল ফোনের যোগাযোগের মাধ্যমে শহরের কোন অঞ্চলে কোন পণ্যের দাম কত বেশি, সে তথ্য মুহূর্তের মধ্যে জানা যাচ্ছে। এসব কারণে গ্রাম পর্যায়ে পণ্য আগের মতো আর সহজলভ্য নয়। সহজলভ্য না হওয়ায় সেখানে দাম বাড়ছে। সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পেতে আইএমএফের শর্তের মধ্যে বিবিএসের ভোক্তা মূল্যসূচক নির্ণয় পদ্ধতি সংস্কারের কথা ছিল। সে অনুযায়ী গত এপ্রিল থেকে মূল্যস্ফীতির হিসাব পদ্ধতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়। আগে ২০০৫-০৬ অর্থবছরকে ভিত্তি বছর ধরে এ হিসাব করা হতো। এখন ভিত্তি বছর পরিবর্তন করে ২০১৫-১৬ অর্থবছর করা হয়েছ। নতুন পদ্ধতিতে পণ্য ও সেবার সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। মদ, সিগারেটসহ বেশ কয়েকটি পণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের খরচও বাদ যায়নি। সম্প্রতি প্রকাশিত বিবিএসের খানা আয়-ব্যয় জরিপ বলছে, গ্রামের মানুষের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। সেখানে একটি পরিবার প্রতি মাসে গড়ে ২৬ হাজার ১৬৩ টাকা আয় করে।