লোভনীয় অফারে সর্বস্বান্ত

এমটিএফই’র প্রতারণা

প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

এমটিএফই’র গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৪১ লাখ। বর্তমানে দেশের আলোচিত ইস্যুগুলোর মধ্যে অন্যতম এমটিএফই প্রতারণা। গ্রাম থেকে শহর, সর্বত্রই এর প্রতারণার জাল ছড়িয়ে পড়েছিল। স্কুলছাত্র থেকে বৃদ্ধ, কুলি-কৃষক থেকে ব্যবসায়ী-চাকরিজীবী, কেউই এ প্রতারণার ফাঁদ থেকে রেহাই পাননি। দেশের প্রায় সব এলাকায় এমটিএফই প্রতারণার শিকার মানুষ পাওয়া যাবে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রতারণার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রায় হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে এমএলএম কোম্পানিটি। এমটিএফই’র প্রতারণার রহস্য উদ্ঘাটন এবং মূল অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট। কিন্তু এত আলোচনা ও তৎপরতার মধ্যেও এমটিএফই দেশ থেকে কত টাকা বিদেশে পাচার করছে তা ধোঁয়াশার মধ্যেই রয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হচ্ছে, এমটিএফই’র গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৪১ লাখ। আবার কোনো কোনো মহল থেকে দাবি করা হচ্ছে, গ্রাহক সংখ্যা ছিল আট লাখ। লাখ লাখ গ্রাহক থেকে অর্থ হাতিয়ে এমটিএফই প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে বিদেশে পাচার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আসলে কত টাকা এমটিএফই দেশ থেকে পাচার করেছে- এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, এখন পর্যন্ত চলা তদন্তে এটা প্রায় নিশ্চিত এমটিএফই দেশ থেকে টাকা পাচার করে থাকলে, সেটি মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে করেছে। পাচার হওয়ার টাকার পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা হতে পারে। এমএটিএফই দেশ থেকে কত টাকা পাচার করেছে তা একমাত্র বলতে পারবে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এ তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষেও জানা সম্ভব না এ বিষয়ে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এমএটিএফই দেশ থেকে কত টাকা পাচার করেছে তা একমাত্র বলতে পারবে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এ তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষেও জানা সম্ভব না। টাকা যদি পাচার হয়ে থাকে তাহলে বিএফআইইউতে অ্যালার্ট যাওয়ার কথা। তাই বিএফআইইউ ছাড়া এ বিষয়ে সঠিক তথ্য কারও কাছে থাকার কথা নয়। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা জানান, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতিদিন এক হাজার কোটি টাকা পাঠানো সম্ভব। মাত্র ১০ দিনে হাজার কোটি টাকা পাঠানো সম্ভব। তবে, টাকা পাঠানো হলে আমাদের মানি লন্ডারিং সফটওয়্যারে ফ্ল্যাগ করার কথা। আসলে এ ধরনের সফটওয়্যার বিএফআইইউতে আছে কি না, কিংবা সচল আছে কি না, তা দেখতে হবে। দুর্ঘটনা যখন ঘটে তখন আমাদের টনক নড়ে- উল্লেখ করে এ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বলেন, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমাদের কোনো উদ্যোগ থাকে না। ইভ্যালির প্রতারণার সময় শোনা গিয়েছিল যে বিদেশে টাকা পাচার হয়েছে। তখন যদি সব কিছু ঠিক করা হতো আজ এমটিএফই নিয়ে এসব প্রশ্ন উঠত না। আমাদের সব লেনদেন কিন্তু সফটওয়্যারের মাধ্যমে হয়। এমনকি এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গেও জড়িত। সেটি তফসিলভুক্ত ব্যাংক হোক আর মোবাইল ব্যাংকিংই হোক না কেন। যে কোনো লেনদেন বাংলাদেশ ব্যাংকের বাইরে গিয়ে করা সম্ভব না। বিষয়টিতে বিএফআইইউ’র দায় আছে- উল্লেখ করে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বলেন, এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো দায় নেই। কারণ, তাদের এসব বিষয়ে যদি বিএফআইইউ না জানায়, তারা তো কিছুই জানবে না। যদি টাকা পাচার হয় তাহলে অবশ্যই এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জানার কথা। ইভ্যালির প্রতারণার সময় শোনা গিয়েছিল যে, বিদেশে টাকা পাচার হয়েছে।

‘এমটিএফই কোনো না কোনো এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার করেছে। সেক্ষেত্রে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সিমের রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে মালিকদের গ্রেপ্তার করলে তো অনেক তথ্য বের হয়ে আসবে।