বিশ্বে প্রতি বছর যে পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন হয়, তার তিন-চতুর্থাংশই উৎপাদন করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী। তারপরও ওই জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত। প্রতিনিয়ত তাদের পরিবেশ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়। বেশিরভাগ কৃষকেরই উপায় নেই নিজস্ব চাষাবাদ পদ্ধতি পরিবর্তন করার। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। গত ১৮ আগস্ট ‘ট্রান্সফরমিং অ্যাগ্রিফুড সিস্টেমস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসে ঘাটতি আছে। ঝড় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘন ঘন হচ্ছে। তাপমাত্রা স্থিতিশীল নয় এবং যথাসময়ে ঋতু আসছে না। খাদ্য উৎপাদনকারীদের এই জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপখাইয়ে নিতে সাহায্য করতে হবে। বঙ্গোপসাগরকেন্দ্রিক ৪০০ মিলিয়ন মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করে বলা হয়- আটটি দেশজুড়ে (বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ড) এই বঙ্গোপসাগর ছড়িয়ে আছে। দরিদ্র এই জনগোষ্ঠী খাদ্য ও জীবিকার জন্য উপসাগরের ওপর নির্ভরশীল। তবু বঙ্গোপসাগরের সামুদ্রিক সম্পদের ক্রমাগত অবক্ষয় এই উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। তার ওপর রয়েছে সামুদ্রিক দূষণ, বাসস্থান সংরক্ষণ ও দুর্যোগের মতো সমস্যাগুলো মোকাবিলা করা। ফলে কঠিন সময় পাড়ি দিতে হচ্ছে এই দরিদ্রদের। কৃষি এবং পরিবেশের সমালোচনামূলক সম্পর্ক মোকাবিলায় কাজ করছে গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (জিইএফ) এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। ভবিষ্যতের জন্য বিশ্বের প্রধান উদ্দেশ্য কী হতে পারে, সে সম্পর্কে এফএও’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য খাদ্য উৎপাদন এবং কৃষিকে আলোচনার একটি বড় অংশ হতে হবে। প্রতিবেদনে বেশকিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে, নীতি এবং কর্মের মাধ্যমে খামারের বাইরে কর্মসংস্থান বাড়ানো, খাদ্য ও কৃষিতে বিনিয়োগ করা, সম্পদ ব্যবহারের দক্ষতা সর্বাধিক করা, খাদ্যের ক্ষতি এবং বর্জ্য কমানো, বর্জ্যকে পুনর্ব্যবহারের জন্য রূপান্তর করা এবং মূল প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে যাতে খাদ্য ব্যবস্থাকে উন্নত করে সে বিষয়ে বিশ্ব মঞ্চে আরও মনোযোগ দেওয়া। কৃষিজীব-বৈচিত্র্যের ৭৫ শতাংশ ক্ষতির জন্য দায়ী খাদ্য উৎপাদন। ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের ৯ দশমিক ৭ বিলিয়ন জনসংখ্যাকে খাওয়ানোর জন্য আরো ৫০ শতাংশ বেশি খাদ্যের প্রয়োজন হবে। তখন এমন জনগোষ্ঠী হবে আরও নগরায়ণকেন্দ্রিক এবং তার খাদ্য পছন্দের হবে চাহিদাযুক্ত। বিশ্বের জনগোষ্ঠী এমনিতেই যথেষ্ট চাপে রয়েছে। কেন না, ৬৯১ থেকে ৭৮৩ মিলিয়ন মানুষ বর্তমানে ক্ষুধার্ত স্তরভুক্ত। এফএওর প্রতিবেদন সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ফসল কম উৎপাদন হচ্ছে। আবার উৎপাদিত ফসলের দামও কৃষক পাচ্ছে না। তারা ফসল ফলিয়ে যতটুকু পায় তাও আবার ঋণ শোধের জন্য বিক্রি করে দিচ্ছে। সেসব কিনে সিন্ডিকেট করা হচ্ছে। ১০ কেজি ধানও কৃষকের কাছ থেকে কীভাবে নিয়ে যাওয়া যায়, সেই ফন্দির পথ তৈরি করছে সিন্ডিকেট।