১১ হাজার ৪৩১ কোটি টাকার ৮ প্রস্তাব অনুমোদন

টিসিবির জন্য ৬৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার তেল কিনবে সরকার

প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

আট প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায়। এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১১ হাজার ৪৩০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। গতকাল বুধবার (৩০ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টায় অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ২০তম এবং সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ২৮তম বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সচিব সাঈদ মাহবুব খান বিস্তারিত জানান।

অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান বলেন, অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য একটি এবং ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য আটটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে। ক্রয় কমিটির প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পাঁচটি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দুই এবং বিদ্যুৎ বিভাগের একটি প্রস্তাবনা ছিল। ক্রয় কমিটির অনুমোদিত আট প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ১১ হাজার ৪৩০ কোটি ৭৭ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫০ টাকা।

অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় অনুমোদিত প্রস্তাবটি হলো-

প্রস্তাবনা-১ : খাদ্য মন্ত্রণালয় মন্ত্রণালয়ের অধীন খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে গম আমদানির লক্ষ্যে দরপত্র দাখিলের সময়সীমা পত্রিকা বিজ্ঞাপন প্রকাশের তারিখ থেকে ৪২ দিনের পরিবর্তে ১৫ দিন নির্ধারণ করার জন্য প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় অনুমোদিত প্রস্তাবগুলো হলো-

প্রস্তাবনা-১ : বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় ৩০০ মেগাওয়াট (এসি) ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য জয়েন্ট স্টক কোম্পানি অব একওয়া পাওয়ার কোম্পানি, সৌদি আরব; কমপিট কম্পোজিট নিট লিমিটেড; ভিয়েলাটেক্স স্পিনিং লিমিটেড, বাংলাদেশ; মিডল্যান্ড ইস্ট পাওয়ার লিমিটেড, বাংলাদেশকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ট্যারিফভিত্তিতে বিদ্যুৎ ক্রয় করা হলে ২০ বছর মেয়াদে ওই কোম্পানিকে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ১১.০৬৭ টাকা হিসাবে আনুমানিক ১০ হাজার ৭৬১ কোটি ৬০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।

প্রস্তাবনা-২ : বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৬ হাজার (+৫%) টন মসুর ডাল নাবিল নাবা ফুডস লিমিটেডের কাছ থেকে ৫৭ কোটি ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকায় ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবনা-৩ : টিসিবি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৪০ লাখ (+৫%) লিটার রাইস ব্রান তেল মজুমদার ব্রান অয়েল শিলস লিমিটেডের কাছ থেকে ৬৪ কোটি ৬০ লাখ টাকায় ক্রয়প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবনা-৪ : শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) কর্তৃক চট্টগ্রামের টিএসপি কমপ্লেক্স লিমিটেডের (টিএসপিসিএল) জন্য ২৫ হাজার মেট্রিক টন (+১০%) রক ফসফেট (৭২% বিপিএল মিনিমাম) প্রতিষ্ঠান মেসার্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনপুট, ঢাকা (প্রধান সরবরাহকারী : মেসার্স উইলসন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং, মালয়েশিয়া) থেকে ৯৭ কোটি ৮২ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

প্রস্তাবনা-৫ : বিসিআইসি চট্টগ্রামের টিএসপিসিএল-এর জন্য ১০ হাজার মেট্রিক টন (+১০%) ফসফরিক এসিড (চ২ঙ৫ : ৫২-৫৪%) মেসার্স বেস্ট ইস্টার্ন, ঢাকা (প্রধান সরবরাহকারী : Guangxi Pengyue Eco-Technology Co. Ltd., China) থেকে ৫৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকায় ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

প্রস্তাবনা-৬ : শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে মুনতাজাত, কাতার থেকে প্রথম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন (১০%+) বাল্ক প্রিল্ড ইউরিয়া সার ১৩০ কোটি ৫২ লাখ ২৯ হাজার ৫০ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

প্রস্তাবনা-৭ : বিসিআইসি রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে মুনতাজাত, কাতার থেকে দ্বিতীয় লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন (১০%+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ১৩১ কোটি ১২ লাখ ৭৩ হাজার ৪৫০ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

প্রস্তাবনা-৮ : বিসিআইসি কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশের কাছ থেকে তৃতীয় লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ১২৯ কোটি ১৮ লাখ ২৬ হাজার ২৫০ টাকায় ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

বাগেরহাটে সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের দায়িত্ব পেল চার কোম্পানি : বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) কর্তৃক বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলায় ৩০০ মেগাওয়াট (এসি) ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। আর এ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে দেশি-বিদেশি চার কোম্পানিকে। বিদ্যুৎ বিভাগের এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। গতকাল বুধবার (৩০ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টায় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ও সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকটি শুরু হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সচিব সাঈদ মাহবুব খান বিস্তারিত জানান। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) কর্তৃক বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলায় ৩০০ মেগাওয়াট (এসি) ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য জয়েন্ট স্টক কোম্পানি অব (১) এসিডব্লিউএ পাওয়ার কোম্পানি, সৌদি আরাবিয়া; (২) কমফিট কম্পোসিট নিট লি. বাংলাদেশ; (৩) ভিয়েলেটেক্স স্পাইনিংলি. বাংলাদেশ এবং (৪) মিডল্যান্ড ইস্ট পাওয়ার লি. বাংলাদেশ-কে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ট্যারিফ ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ক্রয় করা হলে ২০ বছর মেয়াদে উক্ত কোম্পানিকে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ১১.০৬৭ টাকা হিসাবে আনুমানিক ১০ হাজার ৭৬১ কোটি ৬০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।

টিসিবির জন্য ৬৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার তেল কিনবে সরকার : ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য ৪০ লাখ লিটার রাইস ব্র্যান তেল ও ৬ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল বুধবার মসুর ডাল ও রাইস ব্র্যান তেল কিনতে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কর্তৃক ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৪০ লাখ লিটার রাইস ব্র্যান তেল মজুমদার ব্র্যান অয়েল মিলস লিমিটেডের কাছ থেকে ৬৪ কোটি ৬০ লাখ টাকায় ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

তিনি আরো জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আর এক প্রস্তাবে টিসিবির জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৬ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল নাবিল নাবা ফুডস লিমিটেডের কাছ থেকে ৫৭ কোটি ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকায় কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

৯০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনছে সরকার : সরকার রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে কাতারের মুনতাজাত ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে ৯০ হাজার টন ইউরিয়া সার এবং ৩৫ হাজার টন রক ফসফেট ও এসিড কিনছে। গতকাল বুধবার (৩০ আগস্ট) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ২৮তম বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে বিস্তারিত তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান। তিনি জানান, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে কাতারের মুনতাজাত থেকে প্রথম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক প্রিল্ড ইউরিয়া সার কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ১৩০ কোটি ৫২ লাখ ২৯ হাজার ৫০ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রতি মেট্রিক টন সারের দাম পড়বে ৩৯৭ দশমিক ৩৩ মার্কিন ডলার। একই মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিসিআইসির রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে কাতারের মুনতাজাত থেকে দ্বিতীয় লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ১৩১ কোটি ১২ লাখ ৭৩ হাজার ৪৫০ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রতি মেট্রিক টন সারের দাম ধরা হয়েছে ৩৯৯ দশমিক ১৭ মার্কিন ডলার।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিসিআইসির কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) বাংলাদেশের কাছ থেকে তৃতীয় লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ১২৯ কোটি ১৮ লাখ ২৬ হাজার ২৫০ টাকায় ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রতি মেট্রিক টন সারের দাম পড়বে ৩৯৩ দশমিক ২৫ মার্কিন ডলার। তিনি আরো জানান, একই মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিসিআইসির আওতায় চট্টগ্রামের টিএসপি কমপ্লেক্স লিমিটেডের (টিএসপিসিএল) জন্য ২৫ হাজার মেট্রিক টন রক ফসফেট (৭২ শতাংশ বিপিএল মিনিমাম) প্রতিষ্ঠান মেসার্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনপুট, ঢাকা (প্রধান সরবরাহকারী : মেসার্স উইলসন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং, মালয়েশিয়া) থেকে ৯৭ কোটি ৮২ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রতি মেট্রিক টন রক ফসফেটের দাম পড়বে ৩৫৯ মার্কিন ডলার। এছাড়া শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিসিআইসির আওতায় চট্টগ্রামের টিএসপিসিএল’র জন্য ১০ হাজার মেট্রিক টন ফসফরিক এসিড মেসার্স বেস্ট ইস্টার্ন, ঢাকা (প্রধান সরবরাহকারী : চীনের গুয়াংজি পেঙ্গুয়ে ইকো-টেকনোলজি কোং লিমিটেড) থেকে ৫৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকায় কেনার অনুমতি দেয়া হয়েছে। প্রতি মেট্রিক টন ফসফেট এসিডের দাম পড়বে ৫৪০ মার্কিন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, সবশেষ অর্থবছরে সার্বিক আমদানি কমেছে ১৬ শতাংশ।