বাড়ছে তেঁতুলবিচির আমদানি

প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ১৭ হাজার টন তেঁতুলবিচি আমদানি করা হয়েছে, যা এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরের ১০ হাজার টনের চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি। রপ্তানিকারক দেশগুলোতেও তেমন কদর ছিল না তেঁতুলের বিচির। এক যুগ আগেও আমদানি পণ্যের তালিকায় ছিল না এটির। একপর্যায়ে মশার কয়েল তৈরি বা পাটপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে তেঁতুলবিচির ব্যবহার শুরু হলে আমদানির তালিকায় স্থান পায় এটি। তবে হঠাৎ করে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে পণ্যটির আমদানি খুব বেড়ে যায়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে দেখা যায়, গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) ১৬ হাজার ৮৬৮ টন তেঁতুলবিচি আমদানি হয়েছে। এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি করা হয়েছিল ৯ হাজার ৯৩২ টন; অর্থাৎ এক বছরে আমদানি বেড়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ। হঠাৎ করে তেঁতুলবিচি আমদানি বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে ব্যবসায়ীরা বলছেন, মশার কয়েল তৈরিতে তেঁতুলবিচির ব্যবহার বেড়েছে। আবার পাট প্রক্রিয়াজাতকরণের সময়ও এটির ব্যবহার রয়েছে। আর তেঁতুলবিচি দামে তুলনামূলক সস্তা হওয়ায় বিকল্প পণ্যগুলোর তুলনায় এটির ব্যবহার বাড়ছে। এতেই আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, চার দেশ থেকে আমদানি হচ্ছে তেঁতুলবিচি। দেশ চারটি হলো ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তেঁতুলবিচি আমদানি হয় প্রতিবেশী ভারত থেকে। গত অর্থবছরে মোট আমদানির ৪২ শতাংশই আনা হয়েছে ভারত থেকে। এছাড়া মিয়ানমার থেকে ৩০ শতাংশ, থাইল্যান্ড থেকে ২৪ শতাংশ ও ইন্দোনেশিয়া থেকে ৩ শতাংশ আমদানি হয়েছে। তেঁতুলবিচি গুঁড়া করে রাসায়নিক উপাদানের সঙ্গে মিশিয়ে কয়েল তৈরি করা হয়। এটি ব্যবহার করলে কয়েলের ভঙ্গুরতা কমে। এ জন্য মশার কয়েল তৈরিতে এখন তেঁতুলবিচি বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি মূলত আঠার কাজ করে। তেঁতুলবিচির ব্যবহার বাড়ায় এই খাতে আমদানিকারকের সংখ্যাও নিয়মিত বাড়ছে। যেমন গত অর্থবছরে তেঁতুলবিচি আমদানি করেছেন ৯৩ জন। এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ৭৩। শুরুতে খুব কম দামে আমদানি করা যেত। কিন্তু চাহিদা বাড়তে থাকায় এখন থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও মিয়ানমারে পণ্যটির রপ্তানিমূল্য বেড়ে গেছে। তেঁতুলবিচি অপ্রচলিত আমদানি পণ্য। হঠাৎ করে অনেকে এই ব্যবসায় নেমেছেন। এ কারণে আমদানি বেড়েছে। আর দেশে যে পরিমাণ তেঁতুলবিচি আমদানি হয়, তার ৮০ শতাংশই ব্যবহৃত হয় মশার কয়েল তৈরিতে। দেশে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে মশার কয়েল তৈরির প্রচুর কারখানা রয়েছে। যদিও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) তথ্য বলছে, সারা দেশে বৈধভাবে কয়েল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আছে ১২৫টি। ব্যবসায়ীদের হিসাবে অবশ্য এই সংখ্যা পাঁচ শতাধিক হবে। ডেঙ্গুর প্রকোপ ঠেকাতে গ্রাম-গঞ্জ-শহরনির্বিশেষে সব জায়গায় মশার কয়েলের ব্যবহার বাড়ছে। তাই কয়েল তৈরির কাঁচামাল হিসেবে তেঁতুলবিচির চাহিদা ও আমদানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তেঁতুলবিচি গুঁড়া করে রাসায়নিক উপাদানের সঙ্গে মিশিয়ে কয়েল তৈরি করা হয়। এটি ব্যবহার করলে কয়েলের ভঙ্গুরতা কমে। এ জন্য মশার কয়েল তৈরিতে এখন তেঁতুলবিচি বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি মূলত আঠার কাজ করে। একসময় কয়েল তৈরিতে মেন্দাগাছের ছাল ব্যবহৃত হতো। ব্যাপক হারে ব্যবহারের কারণে মেন্দাগাছের ছালের সহজলভ্যতা কমে যায়। এতে সেটির দাম বেড়ে যায়। সেই তুলনায় কম দামে তেঁতুলবিচি পাওয়া যাচ্ছে। রাজস্ব বোর্ডের তথ্যে দেখা যায়, দেশে গোটা আকারে তেঁতুলবিচি আমদানি হয়। আমদানির পর তা কারখানায় গুঁড়া করে বিক্রি করা হয়। গত অর্থবছরে তেঁতুলবিচি আমদানি হয়েছে প্রায় ৩৯ কোটি টাকার। তবে পাইকারি বাজারে বছরে এই পণ্যের বেচাকেনা অর্ধশত কোটি টাকার বেশি বলে ব্যবসায়ীরা জানান। ব্যবসায়ীরা জানান, তাঁরা এখন প্রতি টন তেঁতুলবিচি আমদানি করেন ২৩০ থেকে ২৯০ ডলার দরে। কেজিপ্রতি আমদানি মূল্য পড়ে ২২ থেকে ২৪ টাকা। দেশে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি তেঁতুলবিচি বিক্রি হচ্ছে ৩৪ থেকে ৩৬ টাকায়। দেশে তেঁতুল উৎপাদিত হয় কম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, দেশে বছরে এখন ১০ হাজার টনের বেশি তেঁতুল উৎপাদিত হয়।