নির্মাণসামগ্রী শিল্পে সুদিন এনেছে মেগা প্রকল্প

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

মেগা প্রকল্পে বিশ্বমানের পণ্য নিশ্চিত করার সুযোগ পায়। এতে সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের নির্মাণসামগ্রী খাত। এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর মানসম্মত উপকরণ নিশ্চিতের পাশাপাশি পর্যাপ্ত উৎপাদন সক্ষমতা ও পরিচালন দক্ষতা বাড়াতে হবে।

বর্তমানে সরকার আমদানির পরিবর্তে স্থানীয়ভাবে তৈরি নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে প্রায় ১ ডজন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যেমন- ঢাকায় দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য কমপক্ষে ১০টি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান সিমেন্ট, ইস্পাত ও পেইন্টের মতো উপকরণ সরবরাহ করছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দেশি প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা উপকরণ যদি কোনোভাবে নিম্নমানের হয়, তাহলে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানির পথ বেছে নেবে। সেই হিসেবে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের একটি বড় অংশে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে।

প্রকল্পের কাজে অংশ নেয়া ১০ দেশি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছয়টি সিমেন্ট, দুটি ইস্পাত ও বাকিগুলোরা পেইন্ট ও পিভিসি পণ্য তৈরি করে। সিমেন্ট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- শাহ সিমেন্ট লিমিটেড, ক্রাউন সিমেন্ট পিএলসি, বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স লিমিটেড, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, সেভেন সার্কেল (বাংলাদেশ) লিমিটেড ও প্রিমিয়ার সিমেন্ট লিমিটেড। বিএসআরএম ও জিপিএইচ ইস্পাত এই প্রকল্পে ইস্পাত সরবরাহ করছে এবং আরএফএল গ্রুপের ২ প্রতিষ্ঠান আরএফএল পাইপ অ্যান্ড ফিটিংস ও রেইনবো পেইন্টস প্রয়োজনীয় পাইপ ও রোড মার্কিং উপকরণ সরবরাহ করছে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, স্থানীয় সিমেন্ট নির্মাতারা তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বছরে ৫৮ লাখ টনে উন্নীত করেছে। মাত্র ১০ বছর আগে এই খাতে সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ২০ লাখ টন। ‘মোট ক্রেতার প্রায় ৪৫ শতাংশ সরকারি খাত থেকে আসে। যেমন- সরকারি মেগা প্রকল্প ও অন্যান্য উন্নয়ন কাজ সরাসরি স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখে।

তাদের ইউনিটগুলোর দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি সেগুলোকে পরিবেশবান্ধব করে তোলে। আরএফএল গ্রুপ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য মাটি, বর্জ্য ও বৃষ্টির পানি সরানোর পাইপ, ফিটিংস ও রোড মার্কিং উপকরণ সরবরাহ করছে। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মেগা প্রকল্পে অংশ নিলে যতটা না ব্যবসা হয়, তার চেয়ে বেশি যেটা অর্জন করা যায় তা হলো মানসম্মত পণ্য উৎপাদন। যদি স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনীয় নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ না করে তাহলে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে পণ্য আমদানি করতে হবে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে এখন পর্যন্ত মোট ৬৬ হাজার টন ইস্পাত ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে বিএসআরএম থেকে নেয়া হয়েছে ৫২ হাজার টন ইস্পাত। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো সরবরাহকারীদের দেয়া পণ্যের গুণগত মান ও উৎপাদন ক্ষমতা বিবেচনায় নেয়। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রথমে পণ্যের স্পেসিফিকেশন দেয়। সরবরাহকারী ঠিক করে নেয়ার আগে তারা পণ্যের গুণমান পরীক্ষা করে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, নির্মাণ পণ্যের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এবং বড় বড় প্রকল্পের কল্যাণে দেশের ইস্পাতশিল্প শক্তিশালী হচ্ছে। বাংলাদেশের মোট ইস্পাত ব্যবহারের ৪০ শতাংশ সরকারি প্রকল্পে ব্যবহৃত হয়। ২০২২ সালে ইস্পাতের মোট ব্যবহার ছিল প্রায় ৮০ লাখ টন। গত এক দশকে দেশে ইস্পাত উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে এখন প্রায় ৯০ লাখ মেট্রিক টন হয়েছে। ‘সরকারের বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পসহ উন্নয়ন কাজগুলো পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্ষমতা বাড়াতে উৎসাহিত করেছে। করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অস্থিরতার মধ্যে যদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় থাকে তবে দেশে ইস্পাত উৎপাদন ক্ষমতা ১ কোটি টন ছাড়িয়ে যাবে। তবে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক মানের পণ্য সরবরাহ করলেও জিটুজি (অন্য দেশের সরকারের সঙ্গে নিজ দেশের সরকারের প্রকল্প) ভিত্তিতে বাস্তবায়িত কাজে তারা অংশ নিতে পারে না।