ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পর্যাপ্ত উৎপাদন, তবু আমদানি

হুমকিতে ভুসি উৎপাদনকারীরা

হুমকিতে ভুসি উৎপাদনকারীরা

চাহিদার চেয়ে দেশে পশুখাদ্য ভুসির উৎপাদন বেশি। বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ ভুসির চাহিদা রয়েছে তার চেয়ে বেশি ভুসি দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। সাধারণত গম থেকে ৩০ শতাংশ ভুসি উৎপাদিত হয়। কারখানাগুলোয় উৎপাদিত ভুসি চার থেকে পাঁচ দিনের বেশি মজুত রাখা যায় না। আবার মজুত ভুসি বিক্রি করতে না পারলে নতুন করে উৎপাদনে যেতে পারে না কারখানাগুলো। ফলে বাধ্য হয়ে অনেক কারখানা উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। এভাবে চলতে থাকলে বাজারে আটা-ময়দার সরবরাহ সংকট তৈরি হয়ে দাম বেড়ে যেতে পারে। এর পরও ইচ্ছামতো আমদানি করা হচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের মিলগুলো। এর প্রভাব পড়েছে আটা-ময়দা উৎপাদনে। বাজারে ভুসি বিক্রি করতে না পেরে এরই মধ্যে আটা-ময়দার অর্ধেক মিল-কারখানা উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। ভুসি আমদানি অব্যাহত থাকলে দেশি মিলগুলোর উৎপাদন আরো ব্যাহত হয়ে বাজারে আটা-ময়দার সরবরাহে সংকট তৈরি হতে পারে। অন্যদিকে নিম্নমানের আমদানি করা ভুসি পশুখাদ্যের জন্য হুমকি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এই পরিস্থিতিতে ভুসি আমদানির ওপর শুল্ক বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন দেশীয় উদ্যোক্তারা। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, দেশে বর্তমানে ছোট-বড় মিলিয়ে আটা-ময়দার প্রায় ১ হাজার ১০০ মিল-কারখানা রয়েছে। গম থেকে আটা-ময়দা উৎপাদনের সময় প্রায় ৩০ শতাংশ ভুসি তৈরি হয়। এই ভুসি বাজারজাত করতে না পেরে এরই মধ্যে প্রায় অর্ধেক মিল-কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে। দেশে বছরে গমের চাহিদা ৭৫ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে আমদানি করা হয় ৬৫ লাখ টন। বাকি ১০ লাখ টন গম দেশে উৎপন্ন হয়। অন্যদিকে দেশে বছরে ভুসির চাহিদা রয়েছে ২১ লাখ ৯০ হাজার টন। এর মধ্যে দেশের বড় কারখানাগুলোর ভুসি উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ২২ লাখ ৫০ হাজার টন। চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হওয়ার পরও আমদানি করা হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশি শিল্প।

বিশ্বে গম রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ইউক্রেন, রাশিয়া ও ভারত। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে এই তিন দেশ থেকে গম আমদানির সুযোগ নেই। বিকল্প হিসেবে বাড়তি দামে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, রুমানিয়া ও কানাডা থেকে গম আমদানি করা হচ্ছে। আর ভুসি আমদানি করা হচ্ছে ভারত ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে। মিল মালিকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভুসি আমদানিতে শুল্কহার পর্যালোচনা বিষয়ে গত ২৮ আগস্ট বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলামের সভাপতিত্বে একটি সভা হয়েছে। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধিরা। মিল-কারখানা মালিকদের প্রতিনিধিরাও ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন। বর্তমানে আমদানি করা আটা-ময়দায় ৩৮ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়, কিন্তু এর উপজাত (বাই প্রডাক্ট) ভুসিতে দিতে হয় মাত্র ৫ শতাংশ শুল্ক। যদিও পশুখাদ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো বিনা শুল্কে ভুসি আমদানি করতে পারছে। এসব নিম্নমানের ভুসি দেশের নামিদামি কোম্পানির বস্তা নকল করে বাজারজাত করা হচ্ছে। ফলে খামারিরা মানসম্পন্ন পশুখাদ্য পাচ্ছেন না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৪১৬ মেট্রিক টন ভুসি আমদানি করা হয়। আর চলতি বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৫৩ মেট্রিক টন ভুসি আমদানি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত