প্রস্তাবিত যশোর ইপিজেড

২ বিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়োগের আশা

প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা পটুয়াখালীর পর এবার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোরে আরেকটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। প্রস্তাবিত যশোর ইপিজেড স্থাপনের মাধ্যমে ২ বিলিয়ন ডলার সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এবং বছরে ২.৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারি পরামর্শদাতা সংস্থা ইনফ্রাসট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটি কোম্পানি (আইআইএফসি)-এর সমীক্ষা অনুযায়ী, রপ্তানি ও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) এই লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সমীক্ষার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা প্রকল্প প্রস্তাবটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এরইমধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। প্রস্তাব অনুয়ায়ী, এই প্রকল্পে ১,৫৪৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে মোট ৪৩৮টি শিল্প প্লট তৈরি করা হবে। ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত ইপিজেডটি চালু হলে দেড় লাখ বাংলাদেশি নাগরিকের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এছাড়া, আরো ৩ লাখ বাংলাদেশি নাগারিকের কর্মসংস্থনের সুযোগ তৈরি হবে বলে জানায় বেপজা কর্তৃপক্ষ। যশোরের অভয়নগর উপজেলার গ্রেমবাগ ইউনিয়নের চেঙ্গুটিয়া, মহাকাল, পোমবাগ, বালিয়াডাঙ্গা, আলডাঙ্গা আরাজি বাটিরঘাট, মাগুরা ও রাজাপুর মৌজায় ৫৬৫.৮৭১ একর ভূমিতে স্থাপিত হবে দেশের ১০ম এই ইপিজেড। সংশ্লিষ্টদের মতে, পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটেছে। এ সাফল্যকে কাজে লাগিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ইপিজেড স্থাপিত হলে তা দেশের সুষম উন্নয়নে অবদান রাখবে। সম্ভাব্যতা সমীক্ষার প্রতিবেদন অনুযায়ী তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, চামড়াজাত পণ্য, রাসায়নিক এবং ওষুধ শিল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে প্রস্তাবিত যশোর ইপিজেড। প্রস্তাবিত পটুয়াখালী ইপিজেডে তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মাসিউটিক্যালস, পাট শিল্প, প্লাস্টিক শিল্প, আসবাবপত্র, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, চামড়াজাত পণ্য, পাদুকা, মাছ প্রক্রিয়াকরণ, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স খাতের পাশাপাশি আইটি শিল্পেও বিনিয়োগের সুযোগ থাকবে। প্রস্তাবিত দুটি ইপিজেড স্থাপন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিনিয়োগ আকর্ষণ, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে অবদান রাখবে। প্রায় ২.৫ লাখ লোকের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ আরো ৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রায় ৩,৫৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ আহরণ এবং বার্ষিক প্রায় ৪,৪৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে। এছাড়া ইপিজেড দুইটি আঞ্চলিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের ব্যয় মেটাতে ২ শতাংশ সুদে সরকারি তহবিল থেকে ঋণ নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে পরিচালিত বেপজা ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশের সমস্ত ইপিজেড পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে এই সংস্থা।

বাংলাদেশে মোট ৮টি ইপিজেড

বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ৮টি ইপিজেড রয়েছে। ১৯৮৩ সালে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে স্থাপিত হয় দেশের প্রথম ইপিজেড। পরবর্তী তিন দশকের মধ্যে পর্যায়ক্রমে স্থাপিত হয় বাকি ৭টি ইপিজেড। ঢাকা ইপিজেডের কাজ শুরু হয় ১৯৯৩ সালে; পরবর্তীতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালে এই ইপিজেড সম্প্রসারণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে মংলা, কুমিল্লা, ঈশ্বরদী এবং উত্তরায় (নীলফামারী) ইপিজেড স্থাপিত হয়। আদমজী জুট মিলস ও চট্টগ্রাম স্টিল মিলস এলাকায়ও স্থাপিত হয় আরও দুটি ইপিজেড। বর্তমানে দেশের ইপিজেডগুলোতে ৪৫৬টি শিল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ ৬.০৪ বিলিয়নের বেশি। এসব অঞ্চলে বার্ষিক ৯.৫৮৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের রপ্তানি পণ্য উৎপাদিত হয়। দেশের ইপিজেডগুলোতে পাঁচ লাখেরও বেশি দক্ষ শ্রমিক বিশ্ববিখ্যাত সব ব্র্যান্ডের বৈচিত্র্যময় পণ্য তৈরিতে কাজ করছে। বিশ্বের ৩৭টি দেশে এই ইপিজেডগুলোর বিনিয়োগ রয়েছে। দেশের বিভিন্ন ইপিজেডকে ঘিরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গড়ে উঠেছে স্যাটেলাইট টাউন। এছাড়া পিছিয়েপড়া ও পুরাতন শিল্প কারখানা এবং আনুষঙ্গিক শিল্পসহ পরিবহন ও খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা, বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল গড়ে উঠেছে এসব ইপিজেডগুলোকে কেন্দ্র করে।