ব্যাংকগুলোর হাতে পর্যাপ্ত ডলার থাকার পরও কাটছে না বাজারে সংকট। মাঝে কিছুদিন ডলারের বাজার স্থিতিশীল থাকলেও এখন আবার তৈরি হয়েছে তীব্র সংকট। ফলে একদিকে এলসি খুলতে সমস্যায় পড়ছেন ব্যবসায়ীরা, অন্যদিকে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন শিক্ষা, চিকিৎসা বা অন্য প্রয়োজনে বিদেশগামীরা। এর মধ্যে আবার কমেছে প্রবাসী আয়। রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধিও নিম্নমুখী। এসব কারণে আগামীতে ডলার সংকট আরো বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ব্যাংকগুলোর হাতে সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার রয়েছে।
বর্তমান বাজার চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত হওয়ার কথা। সেইসঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। এরপরও কেন ব্যাংকে ব্যাংকে ডলারের সংকট হচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী বলেন, সবাই যদি ব্যবসায়ী হয়ে যায়, তাহলে তো ডলারের দাম বাড়বেই। রপ্তানিকারকরাও ডলারের ব্যবসা শুরু করেছে। আর সবাই যদি সেই ডলারের পেছনে ছুটে ডলার সংকট তো হবেই। এটা আসলে সুস্থ পরিস্থিতি না। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী ব্যাংকে এখন প্রায় সাড়ে তিন বিলিয়ন নগদ ডলার রয়েছে। এ কারণে সংকট তৈরির কোনো কারণ নেই। ব্যাংকগুলো সঠিকভাবে ডলারের ব্যবহার করছে কি না, সেই বিষয়ে যাচাই-বাছাই করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি রাখায় গত রোববার ১৩টি ব্যাংকের কাছে প্রাথমিকভাবে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোর ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতদিন বাজারে ডলারের অনেক দর প্রচলিত ছিল। গত মঙ্গলবার থেকে সব ক্ষেত্রে একক দর কার্যকর হয়েছে। ফলে এখন রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে ডলারের একই দর হবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে এই ব্যবস্থা কার্যকর করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রপ্তানি ও প্রবাসী আয় থেকে আসা ডলারের দর হবে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। আগে ব্যাংকগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতি ডলারের জন্য প্রবাসীদের ১০৯ টাকা এবং রপ্তানিকারকদের ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা দিত। অন্যদিকে ব্যাংকগুলো এখন আমদানিকারকদের কাছে ১১০ টাকায় ডলার বিক্রি করবে। আগে আমদানি দায় মেটাতে ব্যাংকগুলো আমদানিকারকদের কাছে প্রতি ডলার ১০৯ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি করত। গত জুলাই মাসে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে নির্ধারিত দর না মানার অভিযোগ দেয় বাফেদা ও এবিবি। সংগঠন দুটির যৌথ স্বাক্ষরে গত ৩ জুলাই ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বিনিময় হারের একক দর নির্ধারণে বাফেদা ও এবিবি ডলারের যে দর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল গত ২৬ জুন, তা ২ জুলাই থেকে কার্যকর হয়। কিছু ব্যাংক নির্ধারিত সীমার বেশি দরে ডলার কেনাবেচা করছে। যেসব ব্যাংক এটি করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে বলা হবে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রধানত পাঁচ কারণে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট আপাতত দূর হচ্ছে না। এর প্রথমটি হচ্ছে প্রচুর অনিষ্পন্ন আমদানি দায় মেটাতে হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যাপক আমদানির চাপও রয়েছে। অন্যদিকে চলতি অর্থবছর বিদেশ থেকে নেওয়া স্বল্পমেয়াদি ঋণ পরিশোধে অনেক অর্থ ব্যয় হবে। অন্যদিকে বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আসা কমে গেছে। কেউ কেউ মনে করেন, বিদেশে টাকা পাচারও বেড়েছে। এসব কারণে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট সহসাই দূর হচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো চাহিদামতো ঋণপত্র খুলতে পারছে না। এ কারণে মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে রিজার্ভ থেকে নিয়মিত ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের প্রথম ২ মাসেই ২২৪ কোটি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।