পর্যাপ্ত মজুতেও বাড়ছে আলুর দাম

প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

এরই মধ্যে বাজারে আলুর কেজি ৫০ টাকা ছুঁয়েছে, যা ১৫ দিন আগেও ছিল ৪০ টাকার নিচে। ঠিক এক বছর আগে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছিল ২৮ টাকা দরে; অর্থাৎ এক বছরে আলুর দাম ৭৮ শতাংশ বেড়েছে। সরকারি তথ্য বলছে, দেশে এ বছর আলুর উৎপাদন গত বছরের চেয়ে বেশি হয়েছে। এমনকি চাহিদার তুলনায়ও অনেক বেশি আলু উৎপাদিত হয়েছে। সেজন্য আলুর দাম বাড়ার কথা নয়। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, চলতি বছর হিমাগারগুলোতে আলু সংরক্ষণ কম হয়েছে। তাই আলুর চাহিদা বাড়ায় দাম বেড়ে গেছে।

এদিকে আলুর দাম বাড়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, এটির চাহিদা, উৎপাদন ও সংরক্ষণ (মজুত) নিয়ে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের তথ্যে বড় ধরনের গড়মিল রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০২১-২২ মৌসুমে দেশে মোট ১ কোটি ১০ লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়। আর গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) দেশে আলু উৎপাদিত হয় ১ কোটি ১১ লাখ ৯১ হাজার টন; অর্থাৎ ১ বছরে উৎপাদন বেড়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার টন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালে দেশে আলুর চাহিদা ছিল ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার টন। সেই হিসাবে দেশে চাহিদার বিপরীতে ১৬ লাখ টনের মতো উদ্বৃত্ত হওয়ার কথা। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর আলুর মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলেছে, একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিমভাবে আলুর দাম বাড়াচ্ছেন। তারা হিমাগার থেকে চাহিদা অনুসারে আলু খালাস করছেন না।

এছাড়া পরিবহণের সমস্যা, ফেরি ও টোল প্লাজায় আলু বহনকারী গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার হতে না পারাও দাম বাড়ার কারণ বলে উল্লেখ করে সংস্থাটি। চলতি বছর দেশে ৪৩ জেলায় ৩৬৫টি হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। এসব হিমাগারের আলু ধারণক্ষমতা ৩০ লাখ টনের বেশি। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০২২ সালে এসব হিমাগারে মোট ২৭ লাখ ৮ হাজার টন আলু সংরক্ষণ করা হয়। তবে চলতি ২০২৩ সালে তা নেমে আসে ২৪ লাখ ৯২ হাজার টনে। এর মধ্যে খাওয়ার আলু ১৮ লাখ ২১ হাজার টন; বাকিটা বীজ আলু। যেসব জেলায় আলু উৎপাদন ও হিমাগারে সংরক্ষণ বেশি হয়, তার মধ্যে মুন্সীগঞ্জ অন্যতম।

এই জেলার রিভারভিউ হিমাগারের ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম জানান, তাদের হিমাগারের আলু ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৮০ হাজার বস্তা। এ বছর আলু এসেছে মাত্র ৭৫ হাজার বস্তা। হিমাগারে আলু সংরক্ষণকারী ব্যবসায়ীদের দাবি, সরকারি তথ্যে উৎপাদন বেশি দেখালেও আসলে আলু উৎপাদন কমেছে। এ কারণে চলতি বছর হিমাগারগুলোতে গত বছরের তুলনায় কম পরিমাণে আলু সংরক্ষণ করতে পেরেছেন তারা।

দেশে নভেম্বর মাসে আলুর আবাদ করা হয়। জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফসল তোলা হয়। উৎপাদিত আলুর একটি অংশ হিমাগারে সংরক্ষণ না করেই জানুয়ারি-মে পর্যন্ত বাজারে বিক্রি হয়। অবশিষ্ট অংশ কৃষকদের কাছ থেকে কিনে হিমাগারে রাখেন বেপারি ও পাইকারি বিক্রেতারা। সাধারণত জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাজারে হিমাগারের আলু সরবরাহ হয়। বিএআরসির হিসাবে, পাঁচ মাসে হিমাগারের বাইরে থাকা আলু বিক্রির পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে ৪০ লাখ টন। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরে হিমাগারে মোট ২৪ লাখ ৯২ হাজার টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৬৫ লাখ ২০ হাজার টন আলুর হিসাব মেলে। অথচ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে আলু উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ১১ লাখ ৯১ হাজার টন।