ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে চলতি মাসেই বিক্রি হবে জ্বালানি তেল

বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে চলতি মাসেই বিক্রি হবে জ্বালানি তেল

আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মূল্য সমন্বয় করে দেশের বাজারে জ্বালানি তেল বিক্রি করা হবে। পরিকল্পনার শুরুতে তিন মাস অন্তর অন্তর বিশ্ববাজারের সঙ্গে মূল্য সমন্বয়ের চিন্তা করা হলেও এখন তা করা হবে প্রতি মাসেই। এটি কার্যকর করা হচ্ছে চলতি মাস থেকেই। আগামী সপ্তাহে জ্বালানি বিভাগের এক বৈঠকের পরই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে যে শর্তগুলো দিয়েছিল, তার একটি ছিল স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ। গত ৩০ জুন বাংলাদেশে সফরে যাওয়া আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে ১ সেপ্টেম্বর থেকে মূল্য সমন্বয়ের বিষয়টি কার্যকর করার কথা বলা হলেও প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে না পারায় দেরি হচ্ছে বলে জ্বালানি বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান।

ওই কর্মকর্তা জানান, অক্টোবরে আইএমএফের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসবে। এর আগেই বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের ঘোষণা দেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, চলতি মাসে মূল্য সমন্বয় কার্যকরের নির্দেশনা দিয়েছি। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। এখন ডিজেলে লিটারপ্রতি ১৩ থেকে ১৪ টাকা লোকসান হচ্ছে। ফলে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, গত মাসে মূল্য সমন্বয়ের ফর্মুলা চূড়ান্ত করে জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এখন জ্বালানি বিভাগ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।

প্রতি মাসে দাম সমন্বয় করার কথা বলা হয়েছে। জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, বিপিসি থেকে পাঠানো মূল্য সমন্বয়ের প্রস্তাবটি নিয়ে একাধিক সভা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি সভা হবে। সেখানে বিশ্ব বাজারের সঙ্গে দেশের বাজারের জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। তার পরই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হবে। জানা গেছে, বিশ্ববাজারের সঙ্গে মূল্য সমন্বয়ের প্রক্রিয়াতে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ভোক্তা পর্যন্ত জ্বালানি তেল পৌঁছাতে বিভিন্ন ধাপের খরচ হিসাব করা হবে। এর সঙ্গে যুক্ত হবে মূল্য সংযোজন কর, আমদানি ভ্যাট, উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যয় এবং বিপিসির মুনাফা। এসব যোগ করে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করা হবে। এর ফলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে দেশেও বাড়বে। আর কমলে দেশে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমে যাবে। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে দাম নির্ধারণ করা হলে এ খাতে সরকারের কোনো লোকসান বা ভর্তুকি থাকবে না।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, স্বয়ংক্রিয় ফর্মুলা বাস্তবায়ন হলে বিশ্ববাজারে ঘন ঘন জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধি দেশের বাজেটের ওপর চাপ ফেলবে না। তখন এ খাতে ভর্তুকি দিতে হবে না। বিপিসির লোকসান বলে কিছু থাকবে না। এতদিন মূল্য নির্ধারণে বিশ্ববাজারের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকায় বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করতে হয়েছিল। নতুন পদ্ধতি বাস্তবায়ন হলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমার সুবিধা সরাসরি ক্রেতারা পাবেন। আর বৃদ্ধি পেলে তাও ভোক্তাদের দিতে হবে। সরকারের হিসাব বলছে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ২০২১-২২ অর্থবছরে বিপিসি প্রায় ২ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা লোকসান করেছে। একই কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরেও লোকসানের আশঙ্কা করছে বিপিসি। গত বছরের ৬ আগস্ট লোকসান কমাতে হুট করেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। এদিন ডিজেল ও কেরোসিন লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ৮০ থেকে ১১৪ টাকা, অকটেন লিটারে ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ৮৯ থেকে ১৩৫ টাকা, পেট্রল লিটারে ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ৮৬ থেকে ১৩০ টাকা করা হয়। প্রতিবেশী দেশ ভারতে বহুদিন ধরেই ডায়নামিক ডেইলি প্রাইসিং মেথড অবলম্বন করা হচ্ছে। সেখানে মাসিক হিসাবে নয়, প্রতিদিন বেন্ট ক্রুড অয়েল বা অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বিবেচনায় দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হয়। আবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ঘণ্টায় তেলের দাম নির্ধারণ হয়ে থাকে। যুক্তরাজ্যে প্রতিদিনই জ্বালানি তেলের দাম ওঠানামা করে; কিন্তু সেখানে সরকারি কোনো সংস্থা সেটা নির্ধারণ করে না। ক্রুড অয়েলের দাম, সরকারি কর, ভ্যাট ইত্যাদির সঙ্গে নিজেদের মুনাফা মিলিয়ে পাম্প মালিকরাই প্রতিদিন সেটা ঠিক করেন। ফলে একই দিন একেক এলাকায় তেলের দাম একেক রকমও হতে পারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত