জ্বালানি তেলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় ডিজেল। চাহিদা পূরণে আমদানি করতে হয় এই ডিজেলের ৮০ শতাংশের বেশি। চলতি মাসেই বিশ্ববাজারের সঙ্গে দেশের জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ে ‘স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি’ বাস্তবায়ন করা হবে।
এজন্য দেশে সর্বাধিক ব্যবহৃত জ্বালানি পণ্যগুলোর (তেল) মূল্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। বিপিসির দাম নির্ধারণের প্রক্রিয়ায় বাড়ছে ডিজেলের দাম, কমছে অকটেনের। জ্বালানি বিভাগ ও বিপিসির সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মূল্য সমন্বয়ের কোনো এখতিয়ার বিপিসির নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দেশে জ্বালানি তেলের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক বিপিসি। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি জ্বালানি তেল নিয়ে ব্যবসা করে। কোনো ব্যবসায়ী তার পণ্যের দাম নির্ধারণ করতে পারে না। বিপিসির তেলের মূল্য নিয়ে আগে থেকেই অস্বচ্ছতা রয়েছে। তারা আরও বলেন, বিশ্ববাজারের সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের দায়িত্ব বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) দেওয়া উচিত। কারণ বিইআরসি এখন প্রতি মাসেই বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে এলপিজির দাম নির্ধারণ করছে।
বিষয়টি নিয়ে জ্বালানি বিভাগ ও বিপিসির ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। গত সপ্তাহে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, চলতি মাসে মূল্য সমন্বয় কার্যকরের নির্দেশনা দিয়েছি। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। ডিজেলে লিটারপ্রতি ১৩ থেকে ১৪ টাকা লোকসান হওয়ায় আমাদের ভতুর্কি দিতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে আমাদের ভতুর্কিও বাড়বে।
জানা গেছে, চলতি মাসে বিশ্ববাজারের সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করতে দুটি পণ্যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ডিজেলের দাম বর্তমানের চেয়ে বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন প্রতি লিটার ডিজেল বিক্রি হচ্ছে ১০৯ টাকায়। সমন্বয় করে লিটারপ্রতি দাম রাখা হবে ১১০ টাকা। অন্যদিকে, অপেক্ষাকৃত অনেক কম ব্যবহার হয় অকটেন। বর্তমানে ভোক্তা পর্যায়ে অকটেন লিটারপ্রতি ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অকেটেনের দাম কমিয়ে লিটারপ্রতি ১০০ টাকা রাখা হচ্ছে। অকটেনের চাহিদার পুরোটাই দেশে উৎপাদন হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, মূল্য সমন্বয়ে লিটারপ্রতি ১০ টাকা লাভ রাখার প্রস্তাব দিয়েছিল বিপিসি। কিন্তু বিপিসির এই প্রস্তাব সর্বশেষ বৈঠকে বাতিল করে দেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী। ফলে প্রতি লিটারে বিপিসি কত মুনাফা করবে, তা চলতি সপ্তাহে নির্ধারণ করা হবে। বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ব্যবহৃত মোট জ্বালানি তেলের ৭৩ দশমিক ১১ শতাংশ ডিজেল, পেট্রল ৫ দশমিক ৮৬ এবং অকটেন ৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ। বর্তমানে দেশে বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে ৭০ থেকে ৭২ লাখ টন।