গত আগস্টে বিশ্ববাজারে প্রধান প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এলেও ঠিক বিপরীত চিত্র দেখা গেছে বাংলাদেশে। গেল মাসে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশের মতো চড়া খাদ্য মূল্যস্ফীতির কবলে পড়ে বাংলাদেশ। এই ঘটনায়, ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে জীবনযাপনের ব্যয়, সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ হয়েছে নিম্ন-আয়ের জনগোষ্ঠীর। আগস্টের চেয়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশ সবশেষ প্রত্যক্ষ করে ২০১০-১১ অর্থবছরে, যখন তা ১৪.১১ শতাংশ হয়েছিল। এদিকে জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হার ছিল ৯.৬৯ শতাংশ, তার চেয়ে সামান্য কিছুটা বেড়ে ৯.৯২ শতাংশ হয়েছে আগস্টে- কিন্তু এই সামান্য বৃদ্ধিও খাদ্যের পাশাপাশি নানান ধরনের পণ্য ও সেবার দাম বাড়ার বৃহত্তর প্রবণতাকে তুলে ধরছে। ক্রমাগত এই উচ্চ মূল্যস্ফীতি বজায় থাকার জন্য অভ্যন্তরীণ কারণগুলোকেই দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদরা। এর সিংহভাগই মানবসৃষ্ট বলে উল্লেখ করেন তারা। এই কারণগুলো হচ্ছে- সস্তায় ঋণ প্রাপ্যতা, স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীগুলোর বাজার কারসাজি, বাজার তদারকির দুর্বল ব্যবস্থা, সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক ভিত্তিগুলোর ক্রমাবনতি এবং ব্যাংকখাত ও মুদ্রাবাজারের বিভিন্ন সমস্যা। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, অত্যাবশ্যক পণ্যসহ বিশ্ববাজারে পণ্যদ্রব্যের দাম যখন কমছে, ঠিক তখনই বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে উল্টো প্রবণতা। ‘এখন আর আমদানি মূল্যস্ফীতি নেই, দেশ বর্তমানে সে পর্যায় থেকে সরে এসেছে’- বলেন তিনি। ফাহমিদা বলেন, সরকারি তথ্যও ইঙ্গিত দেয় যে, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত খাদ্যশস্য ও শাকসবজির যথেষ্ট সরবরাহ আছে, ফলে ঘাটতির কারণে দাম বাড়ছে, এমন আশঙ্কার কারণ নেই। শ্রীলঙ্কা, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ-সহ অনেক দেশ তাদের মূল্যস্ফীতির হার গত বছরের মাঝামাঝি সময়েই সর্বোচ্চ স্তর থেকে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়; তারপরও কেন বাংলাদেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়ছে- সে প্রশ্ন রাখেন তিনি। উদাহরণস্বরূপ, এক বছর আগে ৬৪ শতাংশের বেশি থাকা খাদ্য মূল্যস্ফীতিকে কমিয়ে আগস্টে ৪ শতাংশে আনতে পেরেছে শ্রীলঙ্কা। একইভাবে, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ সফলভাবে তাদের মূল্যস্ফীতির হার সর্বোচ্চ স্তর থেকে অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে। ফাহমিদা খাতুনের মতে, এই পরিস্থিতির জন্য সম্ভবত দুটি কারণ দায়ী- হয় স্থানীয় উৎপাদনের তথ্যে গড়মিল, অথবা কৃত্রিমভাবে তৈরি করা সরবরাহ সংকট, যা উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে চালিত করছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোয় স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীগুলো কীভাবে কাঁচামরিচ, ডিম, পেঁয়াজ ও আলুর মতো খাদ্যপণ্যের দাম বাজার কারসাজির মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে বাড়িয়েছে, সে উদাহরণগুলো উল্লেখ করেন তিনি। ফাহমিদা বলেন, ‘উচ্চ মূল্যস্ফীতি শুধুমাত্র সরবরাহ সংকট বা আমদানি মূল্যের কারণে হচ্ছে না, বরং এটা বাজারে অব্যবস্থাপনা ও কারসাজির কারণে হচ্ছে।’