সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণে প্রকল্প খরচ ৩৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা

প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

সুন্দরবনের বাঘ রক্ষা ও বাঘের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছে বন বিভাগ। সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প নামের প্রকল্পটি এরইমধ্যে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। যার ব্যয় হবে ৩৫ কোটি ৯০ লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রকল্পের আওতায় থাকবে বাঘের ক্যানাইন ডিস্টেম্পার ভাইরাস নিয়ে গবেষণা। এছাড়া বাঘ ও শিকার প্রাণী জরিপ, উঁচুটিলা ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। প্রকল্প কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে শুরু হওয়া ৩৫ কোটি ৯০ লাখ ৮০ হাজার টাকার প্রকল্পটি ২০২৫ সালের মার্চ মাসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এই প্রকল্পের মূল কাজ হচ্ছে বাঘ ও শিকার প্রাণী জরিপ। এরইমধ্যে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ, শিকার প্রাণী ও খাল জরিপ সম্পন্ন করা হয়েছে। নভেম্বর মাসে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে জরিপ শুরু হবে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হবে। বন্যা, ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সময় যাতে বাঘগুলো আশ্রয় নিতে পারে এজন্য সুন্দরবনের অভ্যন্তরে ১২টি উঁচু টিলা তৈরি করা হবে। শরণখোলা রেঞ্জের ধানসাগর এলাকায় বাঘের আশ্রয়স্থলে দুর্বৃত্তের আগুন নিয়ন্ত্রণে একটি টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। এই টাওয়ার থেকে ওই এলাকায় সুন্দরবনের অভ্যন্তরে লাগা আগুন দেখে দ্রুত নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে পারবেন বনরক্ষী ও স্বেচ্ছাসেবকরা। এছাড়া সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে যাতে বাঘ প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য প্রথমে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার এলাকায় নাইলনের বেড়া (ফেন্সিং) দেওয়া হবে। এটি সফল হলে পরবর্তীতে ৬০ কিলোমিটার ফেন্সিং করা হবে। প্রকল্পের আওতায় বাঘের ক্যানাইন (মুখে থাকা সামনের বড় দুটি দাঁত) ডিস্টেম্পার ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করা হবে। এজন্য সুন্দরবন থেকে বাঘের মল সংগ্রহ করা হবে। এই মলের মাধ্যমেই বাঘের দাতে সংক্রমিত ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করবেন দেশীয় গবেষকরা। ভিটিআরটি ও সিপিজি সদস্যদের সচেতনামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সুন্দরবনে বাঘ-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসন হবে। যার ফলে মানুষের হাতে সুন্দরবনের বাঘ হত্যা কমবে এবং বাঘ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা বন বিভাগের। অন্যদিকে সুন্দরবনে বাঘ মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে ৩৪০ জন ভিটিআরটি (ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম) সদস্য ও ১৮৪ জন সিপিজি (কমিউনিটি পেট্রোল গ্রুপ) সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর সঙ্গে লোকালয়ে আসা দুটি বাঘের শরীরে স্যাটেলাইট ট্র্যাকার লাগানো হবে। বাঘের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য বনকর্মী-কর্মকর্তা সিপিজি ও ভিটিআরটি সদস্যদেরকে দেওয়া এ্যাপস প্রদান করা হবে। তারা এই এ্যাপসের মাধ্যমে মুঠোফোনে বাঘের গতিবিধি দেখতে পারবেন। এর ফলে লোকালয়ে বাঘ আসলে তারা দ্রুত সুন্দরবনে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারবে। সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বন বিভাগের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাঘ সংরক্ষণ বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এছাড়া এই প্রকল্প বাস্তবায়নে, ড্রোন ক্যামেরা, স্যাটেলাইট ট্র্যাকার, নাইলোনের বেড়া, জিপিএস, বাঘ অজ্ঞানের জন্য ট্রাংকুলাইজিং গান, ক্যামেরা, ভিটিআরটি ও সিপিজি সদস্যদের জন্য পোশাক ও প্রশিক্ষণ উপকরণসহ বেশকিছু আনুষাঙ্গিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হবে। প্রকল্প শেষে প্রকল্পের সকল কার্যক্রম নিয়ে ভিডিও ডকুমেন্টারি ফিল্ম করা হবে। যা পরবর্তীতে সুন্দরবন ও সুন্দরবনের বাঘ রক্ষায় দায়িত্বে আসা কর্মকর্তা ও স্বেচ্ছাসেবকদের কাজে লাগবে।