বাণিজ্য ঘাটতি কমল

প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট হলো একটি দেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্টস (বিওপি)-এর একটি উপাদান, যা আর্থিক সম্পদ সম্পর্কিত অনাবাসীদের দাবি বা দায় উপস্থাপন করে। এর উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ, বাণিজ্য ঋণ, নেট এইড ফ্লো, পোর্টফোলিও বিনিয়োগ এবং রিজার্ভ। দেশের চলতি অর্থবছর ২০২৩-২৪ এর প্রথম মাস জুলাইয়ে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি এবং আমদানি তুলনামূলক কম থাকায় বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে প্রায় ১.৪৬ বিলিয়ন ডলার। তবে বৈদেশিক ঋণ ও বিনিয়োগ কমায় একই মাসে ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট ঘাটতি বেড়েছে ৮২৯ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাইয়ে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬৩৫ মিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই মাসে ২.০৯ বিলিয়ন ডলার ছিল। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি ৪৮.৮ শতাংশ কমে ১৭.১৬ বিলিয়ন ডলার ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়। অর্থাৎ, ২০২১-২২ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৩৩.২৫ বিলিয়ন ডলার। ব্যাংকাররা বলছেন, ডলার সংকট ও নানান শর্তারোপের কারণে গত প্রায় দেড় বছর ধরে আমদানি কমছে। অন্যদিকে, দেশের রপ্তানি আয় তুলনামূলক প্রবৃদ্ধি হওয়ায় এই জুলাইয়ে মোটের ওপর বাণিজ্য ঘাটতি কমে এসেছে। তারা বলেছেন, বাণিজ্য ঘাটতি কমলেও ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট এখনো ‘নেগেটিভ’ বা ঘাটতিতে রয়েছে। এটি পজিটিভ করতে বিদেশি স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বাড়াতে হবে, একই সঙ্গে বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধিও বাড়াতে হবে। বাণিজ্য ঘাটতি কামার অন্যতম কারণ চলতি ২০২৩ সালের জুলাইয়ে দেশের ব্যবসায়ীরা আমদানি করেছেন ৪.৯৯ বিলিয়ন ডলার। যেখানে ২০২২ সালের একই মাসে আমদানির পরিমাণ ছিল ৫.৮৬ বিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে আমদানি কমেছে ১৪.৯২ শতাংশ। এছাড়া, ২০২৩ সালের জুলাইতে রপ্তানি হয়েছে ৪.৩৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই মাসে ছিল ৩.৭৬ বিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে রপ্তানি বেড়েছে ১৫.৬১ বিলিয়ন ডলার। জুলাইয়ে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ও রেমিট্যান্স আয়ের কারণে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স (চলতি হিসাব) দীর্ঘদিন পর ইতিবাচক হয়েছে। অন্যদিকে, ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট ঘাটতি জুলাইয়ে বেড়েছে ৮২৯ মিলিয়ন ডলার। চলতি ২০২৩ সালের জুলাইয়ে ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৯৫ মিলিয়ন ডলার। যদিও আগের বছরের একই মাসে এর পরিমাণ ছিল মাত্র ৬৬ মিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাণিজ্য ঘাটতি কমলেও বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রবৃদ্ধি কমার কারণে ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট ঘাটতি ব্যাপক বেড়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট ঘাটতির অন্যতম কারণ বেসরকারি খাতে যে পরিমাণ ঋণ আসছে, তার তুলনায় প্রিন্সিপাল (মূল) ও ইন্টারেস্ট (সুদ) বাবদ বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে। যার কারণে ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট ঘাটতি দেখা দিয়েছে।’ ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট হলো একটি দেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্টস (বিওপি)-এর একটি উপাদান, যা আর্থিক সম্পদ সম্পর্কিত অনাবাসীদের দাবি বা দায় উপস্থাপন করে। এর উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ, বাণিজ্য ঋণ, নেট এইড ফ্লো, পোর্টফোলিও বিনিয়োগ এবং রিজার্ভ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ মাসিক ব্যালেন্স অব পেমেন্ট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশি প্রত্যক্ষ অন্যান্য বিনিয়োগ ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.০৭ বিলিয়ন ডলারে। যদিও আগের অর্থবছরের একই মাসে এই ঘাটতি ছিল ২৬৬ মিলিয়ন ডলার। জুলাইয়ে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ কমেছে ১৫.৪৫ শতাংশ। এই মাসে এই খাত থেকে ঋণ পেয়েছে ৪০৫ মিলিয়ন ডলার, যদিও আগের অর্থবছরের একই মাসে এর পরিমাণ ছিল ৪৭৯ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া, বিদেশি অন্যান্য স্বল্পমেয়াদি ঋণ এসেছে মাত্র ৪৮ মিলিয়ন ডলার। যদিও আগের বছরের একই মাসে এর পরিমাণ ছিল ৫৪৬ মিলিয়ন ডলার। একই সঙ্গে, দেশি ব্যাংকগুলোর বিদেশি ব্যাংকগুলো থেকে (অফসোর অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে) ঋণের পরিমাণ ঋণাত্বক ৫৬৫ মিলিয়ন ডলার। আগের ২০২২ সালের জুলাইয়ে এর পরিমাণ ছিল (পজিটিভ) ১১ মিলিয়ন ডলার। ২০২৩ অর্থবছরের জুলাই-জুন সময়ে ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট ঘাটতি ছিল ২.১৪ বিলিয়ন ডলার। যদিও, ২০২২ অর্থবছরের শেষে দেশের ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে উদ্বৃত্ত ছিল ১৫.৪৬ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশের ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ গত ৬ সেপ্টেম্বর ২৩.১৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছরের একই দিনে ছিল ৩৯.০২ বিলিয়ন ডলার।

বিদেশি অর্থপ্রদান করার জন্য একটি দেশের প্রাথমিক উৎস হলো, কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স। যখন একটি দেশের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স ঘাটতি হয়ে যায়, তখন এটি ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট থেকে বিদেশি অর্থপ্রদান করে। যদি ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট নেতিবাচক হয়ে যায়, তাহলে অর্থ প্রদান সরাসরি রিজার্ভ থেকে করা হয়। যদিও চলতি অর্থবছরের জুলাইতে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স পজেটিভ থাকলেও ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট ঘাটতি রয়েছে, যা রিজার্ভের ওপর প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩.৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা তার আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৮২.১ শতাংশ কম। ২০২১-২২ অর্থবছরে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ঘাটতি ছিল ১৮.৬৪ বিলিয়ন ডলার।