ডিম, তেল, আলু ও পেঁয়াজ। সাধারণ মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য। সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না। গত শুক্রবার থেকে নতুন নির্ধারিত দাম অনুযায়ী প্রতি পিস ডিম ১২ টাকা, পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, আলু ৩৫ টাকা এবং সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ৫ টাকা কমে ১৬৯ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু বাজারে গিয়ে দেখা গেছে গতকাল শনিবারও এসব পণ্য আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। গতকাল শনিবারও রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। গত বৃহস্পতিবার খুচরা বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম ১২ টাকা, আলুর দাম প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং পেঁয়াজের দাম ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ঘোষণার পর থেকেই বাজারে এ দাম কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু শনিবারও আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য। বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, পেঁয়াজ ধরনভেদে ৯০ থেকে ১০০ টাকা। প্রতিটি ডিম ১২ থেকে এলাকাভেদে ১৩ টাকা, প্রতি হালি ডিম ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হুট করেই বাজারে কোনো কারণ ছাড়াই নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়, কিন্তু সরকার যখন এই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে চায়, ঠিক তখনই ব্যবসায়ীরা বাগড়া দেন। বাজারে অস্থিরতা কমাতে প্রথমবারের মতো তিন কৃষি পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছে সরকার। সেগুলো হলো আলু, দেশি পেঁয়াজ ও ডিম। গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনিশি এই দাম ঘোষণা করেন। তবে এখনো তা কার্যকর হয়নি। দাম বেঁধে দেওয়ার পরের দিন শুক্রবার থেকেই কাওরান বাজার, শান্তিনগর ও তুরাগ এলাকার নতুন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, নির্ধারিত দরের চেয়ে অনেক বেশিতে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থায় বাজার নিয়ন্ত্রণে গতকাল শনিবার রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় অভিযান চালাতে যায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। খবর শোনার পর ব্যবসায়ীরা এসব পণ্যের দাম কমিয়ে দেন। অভিযানের খবর শোনার পর ব্যবসায়ীরা দোকানে মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে দেন। এ সময় কিছু দোকানে আলু, পেঁয়াজ, ডিম আগের চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে দেখা যায়। যদিও সকাল থেকে বেশিরভাগ দোকানে মূল্য তালিকা দেখা যায়নি। ব্যবসায়ীরা বলন, বেশি দামে আগে এসব পণ্য কিনে রাখায় তারা সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে পারছেন না। খুচরা ব্যবসায়ীদের অনেকেই জানান, তারা সরকারের নির্ধারিত এ দর সম্পর্কে কিছুই জানেন না। আবার কেউ কেউ বলেছেন, সরকার যে দরে ডিম, আলু, পেঁয়াজের দর নির্ধারণ করেছে, তাতে বিক্রি করা সম্ভব নয়। কারণ, পাইকারিতেই এসব পণ্যের দাম বেশি। আড়ত থেকে যে দরে ডিম কেনা পড়ে, তাতে প্রতি হালিতে সামান্য মুনাফায় বিক্রি হয়। গত কিছুদিন ধরেই পণ্য তিনটি নিয়ে বাজারে অস্থিরতা চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণেই তিনটি পণ্যের দামই লাগামহীনভাবে বেড়েছে। ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষকে।
এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের উৎপাদন, চাহিদা ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক বৈঠকে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দর নির্ধারণ করে দেয়। বেঁধে দেওয়া দর অনুযায়ী, খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম হবে সর্বোচ্চ ১২ টাকা অর্থাৎ এক হালি ৪৮ টাকা, প্রতি কেজি আলু ৩৬ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা। এদিকে কারওয়ান বাজার ও বসুন্ধরা কাঁচা মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, আগের দামেই তথা বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারি মূল্যে বিক্রি করলে লোকসানের টাকা কে দেবে আমাদের? লোকসানের অজুহাতে, এবারও সরকারকে থোড়াই কেয়ার করছেন ব্যবসায়ীরা। কেন বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে ডিম, পেঁয়াজ ও আলু- এমন প্রশ্নে কারওয়ান বাজারের পাইকারি নিত্যপণ্যের সামগ্রী বিক্রেতা রাশেদুল ইসলাম বলেন, দেখেন আমরা এখনো সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের তালিকা পাইনি, তবে শুনেছি। আর বেশি দাম দিয়েই তো আমার এসব কিনেছি, এখন কি আমরা লোকসানে এসব বিক্রি করবো। সরকার কি আমাদের লোকসানের টাকা দেবে? এদিন বাজারে সব প্রজাতির মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১০ টাকা বেড়ে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগের সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। ২০ টাকা বেড়ে সোনালি ৩৪০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৪০ টাকা এবং লেয়ার ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।