পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার
আন্তর্জাতিক আইনি সংস্থা নিয়োগ দেবে সরকার
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
২০০৯ সালে আরাফাত রহমান কোকোর পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে সরকার ‘একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করেছিল। আবারও একই পদক্ষেপের কথা ভাবা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলো অর্থ পাচারকারীদের এবং তাদের সম্পদের তথ্য সংগ্রহ করবে। অর্থ পাচারকারীদের চিহ্নিত করতে এবং পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য আন্তর্জাতিক আইনি পরামর্শদাতা সংস্থা নিয়োগের পরিকল্পনা করছে সরকার। পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে গঠিত টাস্ক ফোর্সের সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে। একই সঙ্গে বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলো অর্থ পাচারকারীদের এবং তাদের সম্পদের তথ্য সংগ্রহ করবে। টাস্ক ফোর্স এই উদ্যোগে কাজ করছে এবং তার পরবর্তী বৈঠকে আরো কর্ম পরিকল্পনা নির্ধারণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সরকার বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ৭ শতাংশ ট্যাক্স প্রদান সাপেক্ষে বিদেশে থাকা অর্থ বা সম্পদ ফিরিয়ে আনার সুযোগ দিয়েছে। তবে এই বছরের ৩০ জুন মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশি নাগরিক এই সুযোগ নেননি। এখন সরকার পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে আন্তর্জাতিক আইনি পরামর্শদাতা সংস্থা নিয়োগের কথা ভাবছে বলে জানান এই কর্মকর্তা। এর আগে, ২০০৯ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে সরকার ‘অক্টোখান’ নামে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করেছিল। ওই সময় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্থাটিকে উদ্ধারকৃত অর্থের ১০ শতাংশ কমিশন হিসেবে দেয়। পরবর্তীকালে, দুইবার চুক্তি নবায়ন করা হয়েছিল। তবে ২০১৫ সালের পর আর চুক্তি নবায়ন হয়নি। এনবিআর কর্মকর্তা আরো বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর (সিআইআইডি), এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি), বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত একটি টাস্কফোর্স সক্রিয়ভাবে বিদেশি সংস্থা নিয়োগ সংক্রান্ত আইনি দিক নিয়ে কাজ করছে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, গত ২৯ নভেম্বর টাস্কফোর্সের সপ্তম বৈঠকে আন্তর্জাতিক আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের বিষয়ে মতামত দেওয়া হয়।
অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিনের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, এনবিআর, সিআইআইডি, সিআইসি, সিআইডি, দুদক ও বিএসইসির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের কার্যবিবরণী অনুসারে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিভিন্ন দেশ পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারের জন্য এই ধরনের বেসরকারি আইনি সংস্থা নিয়োগ করেছে এবং উদ্ধারকৃত অর্থের একটি অংশ তাদের প্রদান করেছে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এর একজন প্রতিনিধি বৈঠকে জানান, বাংলাদেশ এর আগে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে সফলভাবে পাচারকৃত অর্থ ফেরত এনেছে। তখন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন তাদের অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ পুনরুদ্ধারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে অর্থ পাচারকারীদের তালিকা তৈরির তাৎপর্যের ওপর জোর দেন। তিনি পরামর্শ দেন যে, বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসগুলো এই ব্যক্তিদের সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ করতে পারে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে পরবর্তী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলতে পারে। বৈঠকে আরো উল্লেখ করা হয় যে, বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ যারা দীর্ঘ সময় ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন তাদের আয়ের উৎস, পেশা এবং ঠিকানা সম্পর্কে তথ্য পেতে দূতাবাসগুলো নোট ভারবেল জারি করেছে। একই সাথে, পারস্পরিক আইনি সহায়তার অনুরোধ পাঠানো হবে।