বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে বিনিয়োগে আসছে ১৫২ শিল্পপ্রতিষ্ঠান
বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর হবে দেশের গেম চেঞ্জার প্ল্যান
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আরিয়ান স্ট্যালিন
দেশের ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। এটি চট্টগ্রামের মিরসরাই, ফেনীর সোনাগাজী ও সীতাকুণ্ডের ৩০ হাজার একর জমি নিয়ে গড়ে উঠেছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বিশেষভাবে গড়ে তোলা এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বন্দর জেটি সুবিধা, বিদ্যুৎকেন্দ্র, ট্যুরিজম পার্কসহ নানা সুযোগ-সুবিধা থাকছে। এ ইকোনমিক জোনে উত্তরা মোটরস, বার্জার পেইন্টস, বেইজিং ঝেনুয়ান হেংহুই ইঞ্জিনিয়ারিং কনসাল্টিং কোম্পানি, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি, বিএসএ ফ্যাশনস লিমিটেড, হাংঝু ঝিনঝিয়াং গ্রুপ, ঝিন্দে ইলাস্টিক (বিডি), এক্সপোর্ট কম্পেটিটিভনেস ফর জবস, ইস্ট এশিয়ান কক্স, কমফিট কম্পোজিট নিট, ইওন মেটাল ইন্টারন্যাশনাল, ট্রেড ডিজাইন সল্যুশনস, ইয়নমেটাল লিমিটেড, ফন ইন্টারন্যাশনাল ও আরব বাংলাদেশ ফুডস লিমিটেড, গ্যাস ওয়ান লিমিটেড, অনন্ত অ্যাপারেলস লিমিটেড, বিপি-পাওয়ারজেন লিমিটেড, এসিআই লিমিটেড, ইনট্রিগা অ্যাপারেলস লিমিটেড, হ্যামকো করপোরেশন লিমিটেড, যমুনা স্পেসটেক (জেভি) লিমিটেড, বিএসআরএম স্টিল মিলস লিমিটেড, চিটাগং পাওয়ারসহ অনেক প্রতিষ্ঠান জমি বরাদ্দ পেয়েছে। এছাড়া চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিদেশি এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানকে আকৃষ্ট করেছে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জানান, প্রায় ৭ হাজার ৭১৬ একর জমিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১১ হাজার কোটি টাকা। এতে ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। মিরসরাইয়ের এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৫০০ একর জায়গায় গড়ে উঠছে গার্মেন্টস ভিলেজ। বঙ্গোপসাগর থেকে বালি এনে উঁচু করা হয়েছে হাজার হাজার একর চরের জমি। আগে যেসব চর ঘিরে শুধু মাছ ধরা আর গবাদিপশু চরানো হতো; এখন সেখানে হচ্ছে বড় বড় শিল্পকারখানা, কয়েকটি কারখানা আছে উৎপাদনের অপেক্ষায়। সব মিলিয়ে যেন সাগরের বুকে জেগে উঠছে এক টুকরো বাংলাদেশ। বলছি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের কথা। যেটি দেশের ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বড়। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই উপজেলার ১৮ হাজার এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার ১২ হাজার একরসহ মোট ৩০ হাজার একর জায়গায় গড়ে উঠছে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল। দ্বিতীয় পর্যায়ে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও নোয়াখালীর আরো ১৮ হাজার একর জমি যুক্ত হবে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের সঙ্গে।
বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর হবে দেশের গেম চেঞ্জার প্ল্যান
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর বিনিয়োগের সব সুযোগসুবিধা নিয়ে সম্পূর্ণ প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। তা ছাড়া এরইমধ্যে দেশ-বিদেশের ১৫২ শিল্পপ্রতিষ্ঠান এ শিল্পনগরে বিনিয়োগ করতে আসছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) চেয়ারম্যান ইউসুফ হারুন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, প্রায় ১৪ লাখ মানুষ এখানে কাজ করবে। তাদের নিরাপত্তা, বাসস্থান, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা, বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা ও এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশি সহায়তাগুলো বাড়াতে হবে। এখানে থানা তৈরি করতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর বাংলাদেশের জন্য হবে ‘গেম চেঞ্জার প্ল্যান’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। তার মতে, লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ সব মিলিয়ে দেশের অর্থনৈতিক পরিসরে ব্যাপক ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে চলেছে শিল্পনগর। গতকাল বুধবার মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের কর্মকর্তাদের সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সভা শেষে তোফাজ্জল হোসেন মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের কর্মসংস্থান, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক যে কনজামপশন এসব মাথায় রেখেই এই বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর ৩৩ হাজার ৮০০ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।’ তিনি জানান, এই শিল্পনগরে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি কারখানা কাজ শুরু করেছে। অনেকগুলো পাইপলাইনে আছে।’ যে কোনো বড় প্রকল্পে অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়টি জরুরি’ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘সড়ক, সুয়ারেজ, বিদ্যুৎ, কেবল নেটওয়ার্ক, নিরাপত্তা এসব বিষয়ে আলোচনা করেছি। এখানে নেওয়া প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে কী কী করণীয় তা নিয়েও আলোচনা করেছি। আশা করি, পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রেখে এখানে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করা হবে।’ এই এলাকার অধিবাসীরাও যাতে অবকাঠামোগত সুবিধা পান তাও দেখা হবে। এখানে ১৩৯টি পরিবার ছিল। সবাইকে ঘর করে দেওয়া হয়েছে। তাদের কর্মসংস্থানও হবে। তিনি আরো বলেন, প্রায় ১৪ লাখ মানুষ এখানে কাজ করবে। তাদের নিরাপত্তা, বাসস্থান, শিল্প প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা, বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা ও এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশি সহায়তাগুলো বাড়াতে হবে। এখানে থানা তৈরি করতে হবে। আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। যে কোনো বিনিয়োগকারী এখানে এসে কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। ইতোমধ্যে অনেকে কারখানা করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। এ পর্যন্ত কমিটমেন্ট এসেছে ১৮ বিলিয়ন ডলার, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নূরে আলম মিনা, পুলিশ সুপার এসএমএস শফিউল আলমসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।