যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ের (ইউএসটিআর) কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়েছেন, দেশটির নতুন জিএসপি কর্মসূচিতে বেশকিছু তৈরি পোশাক (আরএমজি) পণ্য অন্তর্ভূক্ত করা হবে। তারা আরো বলেছেন, এতে বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত হলে এবং নির্ধারিত শর্তগুলো পূরণ করতে পারলে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আরএমজি পণ্য রপ্তানি করতে পারবে। গতাকাল বুধবার ঢাকার একটি হোটেলে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি (টিকফা) সংক্রান্ত পরিষদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিরা একথা জানান। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্য নিবন্ধনের ফি কমানো এবং যুক্তরাষ্ট্রের তুলায় তৈরি আরএমজি পণ্য রপ্তানিতে শুধু বাংলাদেশে মূল্য সংযোজিত দামের উপর শুল্কারোপের প্রস্তাব বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে দেশটি। বাণিজ্য সচিব জানান, বাংলাদেশে শ্রম অধিকার, শ্রমিক নেতা শহিদুল ইসলাম হত্যা মামলার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সুপারিশ অনুযায়ী, শ্রম আইন সংশোধন করার মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কারখানায় শ্রমিকের ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিধান আরো সহজ করতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে যে কোন কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন করতে হলে অন্তত ২০ শতাংশ শ্রমিকের লিখিত সম্মতির প্রয়োজন হয়। এটি কমানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র অনুরোধ করেছে বলে জানান বাণিজ্য সচিব।’ ইউএসটিআর কর্মকর্তারা বলেছেন, নতুন জিএসপি সুবিধা বাংলাদেশ দুইভাবে পেতে পারে। একটি হলো- জিএসপি সুবিধা পাওয়ার জন্য যেসব কমপ্লায়েন্সের শর্ত থাকবে, সেগুলো অর্জন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে, সেভাবে হবে’- জানান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক (আরএমজি) পণ্য রপ্তানিতে প্রায় ১৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয় বাংলাদেশকে। এছাড়া, বর্তমানে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে চাহিদার ১৪ শতাংশ তুলা আমদানি করছে। এবিষয়ে ইউএসটিআর কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, জিএসপির সংবেদনশীল তালিকায় নেই, এমন পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি উল্লেখ করেন, ‘নতুন যে জিএসপি প্রোগ্রাম হবে, সেখানে কয়েকটি অপশন থাকবে। তারা চিন্তা করছে, কোনো অপশন দিয়ে বাংলাদেশকে এ সুবিধার মধ্যে রাখা যায়।’কবে নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের নতুন জিএসপি কর্মসূচি কার্যকর হবে- টিকফা বৈঠকে সে সম্পর্কে কোন তথ্য দেননি মার্কিন কর্মকর্তারা। টিকফা সভায় উপস্থিত থাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ২০১৩ সালে স্থগিত হওয়া জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের প্রস্তাব করেনি বাংলাদেশ। তবে ২০০৫ সালে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) হংকং মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ‘শুল্ক মুক্ত, কোটা মুক্ত’ সুবিধা চেয়েছে বাংলাদেশ। জবাবে ইউএসটিআর কর্মকর্তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি কর্মসূচির মেয়াদ ২০২০ সালে শেষ হয়েছে। তারা এখন নতুন কর্মসূচি চূড়ান্ত করছেন, যা এখন সিনেটে পর্যালোচনাধীন রয়েছে। হংকংয়ে অনুষ্ঠিত বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকে স্বল্পন্নোত দেশগুলোর (এলডিসি) ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্র ওই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন করেনি। রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে বেশকিছু অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়নের শর্ত দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ওইসব শর্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সময় দাবি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে, তবে আরও উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে। সভায় কোন কোন ক্ষেত্রে ফি ও সময় কমানো যায়, সে বিষয়ে বাংলাদেশের কাছে লিখিত প্রস্তাব চেয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের কপিরাইট আইন- প্যারিস কনভেশন ও ট্রিপস এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। এর বিরোধীতা করে বাংলাদেশ বলেছে, প্যারিস কনভেনশন ও ট্রিপসের স্বাক্ষরকারী বাংলাদেশ। ফলে ঢাকা কখনও এসবের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো আইন করবে না।
কপিরাইট আইনে এ ধরনের কোনো কিছু চিহ্নিত হলে, তা সংশোধন করা হবে। বাংলাদেশ থেকে নকল পণ্য রপ্তানি বন্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। জবাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশ কোনো নকল পণ্য রপ্তানি করে না। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ব্র্যান্ডের পণ্য নকল হলে, তারা বাংলাদেশকে অভিযোগ জানাতে পারে। সেক্ষেত্রে সরকার ব্যবস্থা নেবে। বাংলাদেশে ব্যবসারত যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর মুনাগা বা ঋণের কিস্তি প্রত্যাবাসনে সমস্যার সমাধান চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।