দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দিশাহারা ক্রেতারা

প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিয়ান স্ট্যালিন

‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’- কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার এ লাইন যেন চির সত্যের চরম শিখরে এ সময়ে। খাদ্যাভাব নেই, তবে অর্থের অভাব এসে ভর করেছে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে। ফলস্বরূপ প্রয়োজনীয় খাবার সামনে থাকলেও পকেটের দিকে তাকিয়ে শুধু দেখে যেতে হচ্ছে বাজারের সারিবদ্ধ দোকানগুলোর দিকে। আজকের দিনে দেশের বহুমুখী উন্নয়ন হলেও এ দেশের বহুসংখ্যক মানুষই অপর্যাপ্ত আয়ের অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানের বাজারে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধিতে নাকানিচুবানি খেতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের। এসব মানুষের দুর্দিন ক্রমশই ঘনিয়ে আসছে নিত্যদিনের অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য ভারসাম্যহীনতার কারণে।

এ দেশের ৭৮.৬% মানুষই গ্রামে বাস করছে, বাকি ২১.৪% শহুরে জীবনযাপন করছে। দেশের সিংহভাগই নিম্নমানের জীবনযাপন করছে, কেন না গ্রামের মানুষের আর্থিক অবস্থা শহরের তুলনায় অনুন্নত। গ্রামে বেশির ভাগ মানুষই কৃষিকাজ, গো থেকে পালন, কিংবা ক্ষুদ্র ব্যবসা করে দুমুঠো ভাত জোগায়। এমতাবস্থায় দ্রব্যমূল্যের যে নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত বৃদ্ধি তাতে এসব মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। এক তথ্যমতে জানা গেছে, দেশে সংরক্ষণের অভাবে বছরে ৩০ শতাংশ খাদ্যপণ্য নষ্ট হয়। ফলে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাপ কমাতে এটি অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে জনজীবনে অনেক দুর্ভোগ নেমে এসেছে। বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলছেন। একবার যে পণ্যের দাম বাড়ে, তা আর কমে না। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা এ ব্যাপারে কাজ করলেও, তা তেমন কার্যকর ভূমিকা না রাখায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসছে না। নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে সব স্তরের মানুষ ভোগান্তিতে পড়লেও সীমিত আয়ের মানুষের জন্য তা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। জীবনযাত্রার ব্যয় সংকুলান করার কোনো পথ তারা খুঁজে না পেয়ে মধ্যবিত্তরা দিশাহারা। প্রতি ডজন ডিমের দাম কয়েক মাসের ব্যবধানে ১২৫ থেবে ১৩০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখন ১২.৫০ টাকায় প্রতিটি ডিম পাওয়া গেলেও ক’দিন আগেই এটি ১৫ টাকা বা তারও বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আলুর দাম ৩০ থেকে ৩৫ টাকা থেকে এক মাসের ব্যবধানেই ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় উঠেছে।

দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন দামে সীমিত আয়ের অনেকেই এখন সংসারের ব্যয় কাটছাঁটের চাপে পড়েছেন। কারণ ডিম, আলু, পাঙাশ মাছ, তেলাপিয়া, ব্রয়লার মুরগির মতো সবচেয়ে সস্তার খাবারগুলোও এখন উচ্চমূল্যে কিনতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদেরকে। নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে সব স্তরের মানুষ ভোগান্তিতে পড়লেও সীমিত আয়ের মানুষের জন্য তা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। জীবনযাত্রার ব্যয় সংকুলান করার কোনো পথ তারা খুঁজে না পেয়ে মধ্যবিত্তরা দিশাহারা। প্রতি ডজন ডিমের দাম কয়েক মাসের ব্যবধানে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখন ১২.৫০ টাকায় প্রতিটি ডিম পাওয়া গেলেও কদিন আগেই এটি ১৫ টাকা বা তারও বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আলুর দাম ৩০ থেকে ৩৫ টাকা থেকে এক মাসের ব্যবধানেই ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় উঠেছে। প্রতি পিস ডিমের দাম যখন ১৫ টাকার বেশি হয়, তখন ঢাকার ফুটপাতের দোকানগুলোতে ডিমের তরকারির দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা থেকে বেড়ে ৩০ টাকা হয়েছিল। ডিমের দাম যখন কমে এবং আলুর দাম বেড়ে যায়, তখন ডিমের তরকারি অনেক জায়গায়ই ৩৫ টাকা হয়ে গেছে। আর আলু ভর্তার দাম কোথাও কোথাও এখন ১০ টাকা থেকে বেড়ে ২০ টাকায় উঠেছে। কিন্তু যেসব বিক্রেতা দাম বাড়াননি, তারা ভর্তায় পরিমাণ কমিয়েছেন। ঢাকার ফুটপাতের এই দোকানগুলোতে দিনে ও রাতে অসংখ্য দিনমজুর, গাড়িচালক, চাকরিজীবী খাবার খান। কারণ এসব দোকানে কম খরচে খাবার খাওয়া যায়। সরকার এক সপ্তাহ আগে আলু, ডিম ও পেঁয়াজের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বেঁধে দিয়েছে। প্রতিটি ডিম ১২ টাকা, আলু ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা কেজি এবং দেশি পেঁয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রির নির্দেশ দিয়েছে সরকার। কিন্তু ব্যবসায়ীরা তা মানছেন না। দাম বেঁধে দেওয়ার প্রায় সপ্তাহখানেক পার হতে চললেও একটি পণ্যও নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না। ডিম এখনো প্রতিটি ১২.৫০ টাকা, আলু ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। এর মধ্যে পেঁয়াজের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে এবং আলু কিছু জায়গায় ৫ টাকা পর্যন্ত কমে মিলছে। আর ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার দুই দফায় ১০ কোটি পিস ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। এসব আমদানির ডিম আগামী সপ্তাহ থেকে দেশে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন টাইগার ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী সাইফুর রহমান। এসব ডিম দেশে এলে ৯ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হবে বলেও জানান তিনি। এদিকে ভোক্তা অধিদপ্তর প্রতিদিনই বাজারে অভিযান পরিচালনা করছে সরকার নির্ধারিত দাম বাস্তবায়নের জন্য।

সম্প্রতি মুন্সীগঞ্জের কোল্ড স্টোরেজে অভিযান চালিয়ে ২৬ থেকে ২৭ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির নির্দেশ দেওয়ার পর থেকে সেখানকার স্টোরেজ মালিকদের অধিকাংশ আলু বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। সীমিত আয়ের মানুষ সাধারণত ডিম, পোলট্রি মুরগি, পাঙাশ, তেলাপিয়া ও আলুর ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল। কিন্তু এই সবকটি পণ্যই এখন চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। ১৪০ থেকে ১৫০ টাকার ব্রয়লার মুরগি এখন ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায়, তেলাপিয়া মাছের দাম আকারভেদে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা থেকে বেড়ে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, পাঙাশ মাছ ১১০ থেকে ১২০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ১৭০ থেকে ২২০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। ২৫০ টাকা কেজি দরের রুই মাছও এখন ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্য বলছে, দরিদ্র মানুষের মোটা চালও এখন ৫০ টাকার নিচে নেই। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অভ বাংলাদেশ (ক্যাব) থেকে এর সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সীমিত আয়ের মানুষের খাবারগুলো একটা অন্যটার সঙ্গে যুক্ত।