বিশ্ববাজারে গমের মূল্যহ্রাস
দাম কমেনি আটা-ময়দা ও বেকারি-রেস্টুরেন্ট পণ্যের
প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
বিশ্বের বৃহত্তম গম উৎপাদনকারী দুই দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী গম, ভুট্টাসহ বেড়ে যায় বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম। পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, ফ্রেইট চার্জসহ নানান কারণে বিশ্ববাজারে দাম কমার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না পুরোপুরি। রাশিয়-ইউক্রেন যুদ্ধের আগে আন্তর্জাতিক বাজারে যে দর ছিল, তারচেয়েও কমেছে গমের দাম। কিন্তু তা সত্ত্বেও স্থানীয় বাজারে গম থেকে উৎপাদিত আটা-ময়দা ও বেকারি-রেস্টুরেন্ট পণ্যের দাম কমেনি। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে স্থানীয় বাজারে ২ কেজির আটার প্যাকেট ৯০ টাকায় এবং ময়দা ১০০-১০৫ টাকায় পাওয়া গেলেও যুদ্ধের এক মাসের মাথায় দাম উঠে যায় যথাক্রমে ১২০ টাকা ও ১৪০ টাকায়। এর কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম দ্রুত বৃদ্ধিকে দায়ী করেন। বিশ্বের বৃহত্তম গম উৎপাদনকারী দুই দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী গম, ভুট্টাসহ বেড়ে যায় বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম।তবে এরপর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমলেও বাংলাদেশে আটা ও ময়দার দাম না কমে, বরং আগের মতোই আছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ডেটা পোর্টাল ইনডেক্স মুন্ডির তথ্য বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে প্রতি টন গমের (ইউএস-এইচআরডব্লিও-নরম) বুকিং দর ২২৯ দশমিক ৪৬ ডলার। যা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে গত বছরের মে মাসে ৪৪৬ দশমিক ৬৬ ডলারে বিক্রি হয়েছে। আর যুদ্ধের আগ মুহূর্তে অর্থাৎ, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই গমের বুকিং দর ছিল ৩৩৯ দশমিক ৩৫ ডলার। সেই হিসেবে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগের দামের চেয়েও বর্তমানে প্রতিটন গমের দাম ১০৯ দশমিক ৮৯ ডলার কমে এসেছে। যা বাংলাদেশি টাকায় কমপক্ষে ১২ হাজার টাকা। বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য গম। বার্ষিক ৭০ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে দেশে উৎপাদন হয় মাত্র ১০-১২ লাখ টন। আন্তর্জাতিক বাজারে দর কমার তথ্য পাওয়া যায় ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল থেকেও। তথ্য বলছে, প্রতি বুশেল গমের দাম যুদ্ধের পরপর ১২ ডলারে উঠেছিল, যা এখন ৬ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। কিন্তু এই প্রভাবে স্থানীয় বাজারে পণ্যের দামের তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। যুদ্ধের আগে চট্টগ্রামে খাতুনগঞ্জে প্রতিমণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) নরম গম বিক্রি হতো মাত্র ৯০০ টাকায়, যা যুদ্ধের প্রভাবে গত বছরের জুন-জুলাইয়ে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ১,৯০০ টাকায় পৌঁছায়। এরপর কিছুটা কমে প্রতিমণ গম এখন বিক্রি হচ্ছে ১,৫০০ টাকা দরে। খাতুনগঞ্জের গম ব্যবসায়ী আর এম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আলমগীর পারভেজ বলেন, ‘বিশ্ববাজারে গমের দাম কয়েক মাসের ব্যবধানে যুদ্ধের আগের অবস্থার চেয়েও কম। কিন্তু দেশীয় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো সেই পরিমাণে দাম কমায়নি। গমের দাম কিছুটা কমলেও আটা-ময়দার দাম মোটেও কমেনি।’ ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর হিসাবে, মানভেদে প্যাকেটজাত প্রতিকেজি আটা ৫৪-৬০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে; যা এক বছর আগে বিক্রি হয়েছে ৫৫-৫৮ টাকায়। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, খোলা আটার দাম গত বছরের তুলনায় ১৫.৫৩ শতাংশ কমে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে; যা গত বছরের এই সময়ে বিক্রি হয়েছে ৪৮-৫৫ টাকায়। এই বিষয়ে টিকে গ্রুপের ডিরেক্টর শফিউল ইসলাম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে যাওয়ায় আমরা দেশীয়ে বাজারে আটা-ময়দার দাম সমন্বয় করেছি। আমরা এরই মধ্যে প্রতিকেজি প্যাকেটজাত আটা ৪৪ টাকা ৮০ পয়সা এবং ময়দা ৫৬ টাকায় বিক্রি করছি। কিন্তু ভোক্তাপর্যায়ে কেন দাম কমানো হচ্ছে না, তা আমাদের বোধগম্য নয়।’ ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, ফ্রেইট চার্জসহ নানান কারণে বিশ্ববাজারে দাম কমলেও সেই সুফল পুরোপুরি পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে, এই বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ সরকারে ব্যর্থতা। কারণ যখনই আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ে, দেশের সব আইন এবং সংস্থাকে তোয়াক্কা না করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয় আমদানিকারক ও প্রক্রিয়াজাতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। এমনকি তাদের দাবির মুখে সরকারও ওই সময় দাম বেঁধে দিতে বাধ্য হয়।’ কিন্তু গত পাঁচ-ছয় মাস ধরে অতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিংবা অন্যতম প্রধান ভোগ্যপণ্য গমের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে অর্ধেকে নেমে আসলেও এই বিষয়ে সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই,’ যোগ করেন তিনি।