আলুর বাজারে ফিরছে স্বস্তি

প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

কমতে শুরু করেছে আলুর দাম। কয়েকদিন আগে থেকেই খুচরা বাজারে আলুর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এজন্য আলু মজুতকারী সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন ক্রেতারা। তারা বলছেন, অধিক মুনাফার লোভে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে আলু বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে মজুতকারীরা। ফলে বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা প্রশাসনের তদারকিতে শুরু হয়েছে সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে ৩৬ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি। হিমাগারে আলুর পর্যাপ্ত মজুত থাকলেও বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামেই। বিভিন্ন জেলায় দাম নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালানোর পর আলু উত্তোলন কমিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আর বাড়তি দামে কেনার কারণে সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম মেনে চলতে পারছেন না বলে জানাচ্ছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। দেশের অন্যতম আলু উৎপাদনকারী জেলা জয়পুরহাট।

সারা দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখানেও খুচরা বাজারে বেড়েছে আলুর দাম। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সাড়াশি অভিযানের পর কমতে শুরু করেছে আলুর দাম। গত তিন-চার দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি আলুতে দাম কমেছে ৬-১০ টাকা। গত সপ্তাহেও রংপুর নগরীর কাঁচাবাজারগুলোতে যে আলু সর্বোচ্চ ৪৫-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছিল, তা রোববার নেমেছে সর্বনিম্ন ৩৬-৪০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, আলুর বাজার বড় বড় কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা নিয়ন্ত্রণ করে। এখন ভোক্তা অধিকারসহ প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে নামাতে সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে, একারণে দামও কমতে শুরু করেছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, পুরোনো আলুর মজুত আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে ফুরিয়ে যাবে। একারণে পুরোনো আলুর সরবরাহ কমানোর চেষ্টা করেছিল একটি চক্র। তবে এখন সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি হচ্ছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের উৎপাদন, চাহিদা ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভা করেন। ওইদিন ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা, আলুর কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং পেঁয়াজের দাম ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে নির্ধারণ করা হয়।

সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি নিশ্চিত করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ জেলা প্রশাসকদের বাজার মনিটরিং করতে নির্দেশ দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। রোববার সকালে নগরীর সিটি বাজার, শাপলা চত্বর খান বহুমূখী মার্কেট ও কামাল কাছনা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রকারভেদে আলুর দাম কেজিতে ৫-১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। সিটি বাজারের পাইকারী বিক্রেতারা জানান, বর্তমানে সরকার নির্ধারিত মূল্যে তারা আলু বিক্রি করছেন। গত শনিবার সকাল থেকে সিটি কাঁচা বাজারে ৩৬ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি শুরু হয়। এর আগে শহরের বিভিন্ন কোল্ড-স্টোরেজ থেকে আলু সরকারি মূল্যে সরবরাহ করা হয়। এদিকে খুচরা বাজারে কার্ডিনাল আলুর ৩৮-৪০ টাকা, সাদা দেশি আলু ৫০-৫২ টাকা এবং ঝাউ ৫৫-৬০ টাকা, শিলআলু ৫০-৫৫ টাকা টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব আলুর আকার ও ধরণ ভেদে দাম উঠানামা করছে বলেও জানিয়েছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে ভোক্তা অধিকার, জেলা প্রশাসন, এনএসআই’সহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কঠোর মনিটরিং ও ব্যবসায়ীদের সহনশীল মনোভাবের কারণে রংপুরে আলুর বাজারে কিছুটা স্বস্তির বাতাস বইছে।

কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, প্রতি কেজি আলুতে উৎপাদন খরচ সাড়ে ৯ টাকা, হিমাগার ভাড়া ৬ টাকা, বস্তার মূল্য ১.৪০ টাকা, পরিবহন, লোডিং আনলোডিং এক টাকা এছাড়া ওজন, ব্যাংক ঋণের সুদ ও অন্যান্য ব্যয় ১.৬০ টাকা ধরে মোট খরচ ১৯.৫০ টাকা। অথচ মৌসুমের শেষে এসে সেই আলু ৪০ টাকা ছাড়িয়েছে। তবে কয়েকদিন ধরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কঠোর মনিটরিংয়ের কারণে আলুর দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে।

এদিকে বাজার স্থিতিশীল না হলে কঠোর হবার পাশাপাশি ডিমের মতো আলুও আমদানি করার কথা জানিয়েছেন ভোক্তার মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান। গত বুধবার রংপুরে অবৈধ মজুতদারের সিন্ডিকেট ভাঙতে হিমাগার অভিযানে গিয়ে এ হুঁশিয়ারি দেন তিনি। ভোক্তার ডিজি বলেছেন, আমরা কোল্ড স্টোরেজে আলুর দর ২৭ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছি। এরপরও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও কোল্ড স্টোরেজের কর্মকর্তারা সিন্ডিকেট করে আলুর বাজার অস্থির করে তুলেছেন। আমরা এসব সিন্ডিকেট ভাঙার চেষ্টা করছি। আরও ৩-৪ দিন দেখব। এরমধ্যে বাজার স্থিতিশীল না হলে ডিমের মতো আলুও আমদানির জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা হবে। দেশের বাজারে এখনো দুই মাসের আলু মজুত আছে। অথচ হিমাগার মালিক ও ব্যবসায়ীদের যৌথ সিন্ডিকেট আলুর বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। সফিকুজ্জামান বলেন, নিজেদের এজেন্ট হিসেবে পরিচয় দেওয়া কিছু ব্যক্তির সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। যারা কৃষকদের ঋণ দিয়ে স্বল্পমূল্যে আলু এনে হিমাগারে রেখে মুনাফা লুটছে।