অবৈধ হুন্ডি বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স ধারাবাহিকভাবে কম আসছে। চলতি সেপ্টেম্বরের প্রথম ২২ দিনে (১ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ১০৫ কোটি ৪৯ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৪ কোটি ৭৯ লাখ ডলার। রেমিট্যান্সে প্রতি ডলারের জন্য এখন ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে এই ২২ দিনে এসেছে ১১ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা। প্রতিদিনে এসেছে ৫২৫ কোটি টাকা; কিন্তু হুন্ডিতে এক ডলারের বিনিময়ে দেয়া হচ্ছে ১১৭ থেকে ১১৮ টাকা। ফলে দফায় দফায় টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ানোর পরও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ছে না, উল্টো কমছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে ১৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল গত ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি (১.৯৭ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৬ কোটি ৩৬ লাখ ডলার বা ৬৯৪ কোটি টাকা। চলতি মাসের ২২ দিনে যে রেমিট্যান্স এসেছে, মাসের বাকি ৮ দিনে সেই হারে এলে মাস শেষে মোট রেমিট্যান্সের অঙ্ক ১৪৩ কোটি ৮৫ লাখ ডলারে গিয়ে ঠেকবে। সে হিসাবে আগস্টের চেয়েও সেপ্টেম্বরে কম রেমিট্যান্স আসবে। আর সেটা হবে দেড় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারে ডলারের দর বাড়ায় সাম্প্রতিক সময়ে হুন্ডি আরও বেড়ে গেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ভয়-আতঙ্কে রোববার কার্ব মার্কেটে ডলার বেচাকেনা বন্ধই ছিল বলা যায়। খুবই গোপনে দু-একটি লেনদেনের খবর পাওয়া গেছে, প্রতি ডলার ১১৭ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ১১৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত এক মাস ধরে খোলাবাজারে ১১৬ থেকে ১১৮ টাকায় ডলার বেচাকেনা হচ্ছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে আড়াই শতাংশ প্রণোদনাসহ যা পাওয়া যায়, হুন্ডির মাধ্যমে পাঠালে তার চেয়েও ৫ থেকে ৬ টাকা বেশি পাওয়া যায়। সে কারণেই সবাই হুন্ডির দিকে ঝুঁকছে বলে জানিয়েছেন জনশক্তি রপ্তানিকারক ও অর্থনীতিবিদরা। গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ২ দশমিক ২০ বিলিয়ন (২২০ কোটি) ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে, যা ছিল একক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক রেমিট্যান্সপ্রবাহে ধসের কারণে রিজার্ভও কমছেই। গত ৭ সেপ্টেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জুলাই-আগস্ট মেয়াদের ১ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধের পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী বাংলাদেশের রিজার্ভ ২১ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ নেমে আসে ২৭ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলারে।