ডিম আমদানি বন্ধের দাবি পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের
প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশে পোলট্রি শিল্পে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ৫০ থেকে ৬০ লাখ মানুষ জড়িত। তাদের কর্মসংস্থান রক্ষায় বিদেশ থেকে ডিম আমদানি বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। এসময় ডিম আমদানির মাধ্যমে সিন্ডিকেট ভাঙা যাবে না জানিয়ে মুরগির বাচ্চা ও পোলট্রি ফিডের দাম কমানোর তাগিদ দেয় বিপিএ।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, ডিম ও মুরগি উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশে ডিমের চাহিদা ৪ কোটি পিস। আর এর বিপরীতে উৎপাদন রয়েছে ৫ কোটি। পোলট্রি শিল্পে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত আছে ৫০ থেকে ৬০ লাখ মানুষ। তাদের কর্মসংস্থান রক্ষার তাগিদে ডিম আমদানি বন্ধ করতে হবে এবং প্রান্তিক খামারিদের লোকসানের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। পোলট্রি ফিড এবং মুরগির বাচ্চার দাম কমিয়ে, উৎপাদন খরচ কমিয়ে মূল্য কমানো সম্ভব। তিনি আরো বলেন, পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম কমানো না গেলে কখনোই ডিম-মুরগির দাম কমবে না।
আমদানি করে ডিম ও মুরগির দাম কমাতে চাইলে দেশীয় শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। আমদানি নির্ভর হলে পরবর্তী সময়ে ঠিক বেশি দামে কিনে খেতে হবে। টাকা থাকলেও ডিম ও মুরগি পাওয়া যাবে না। তাই দেশীয় উৎপাদনকে কীভাবে ধরে রাখা যায় সেই চেষ্টা করতে হবে।
প্রান্তিক খামারিদের সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে হবে, তাদের বাজার প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখতে হবে। ভারত ও বাংলাদেশে ডিমের দামের পার্থক্যের কারণ তুলে ধরে বিপিএ সভাপতি বলেন, ভারতের বাজারে ডিম-মুরগির দাম কম। কারণ ভারতে ৫০ কেজির ১ বস্তা ব্রয়লার ফিডের মূল্য বাংলা টাকায় ২ হাজার ৭০০ টাকা, এক বস্তা লেয়ার ফিডের মূল্য ১ হাজার ৮৭৫ টাকা, একটি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার মূল্য ২৮ টাকা, একটি লেয়ার বাচ্চার মূল্য ২৫-৩০ টাকা। তাই একটি ডিমের উৎপাদন খরচ বাংলা টাকায় ৫ থেকে ৬ টাকা। তাদের বাজারে একটি ডিম বিক্রয় হয় ৭ টাকা থেকে সাড়ে ৭ টাকা। আর ১ কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১১০ থেকে ১২০ টাকা। বিক্রি করেন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। তাদের উৎপাদন খরচ কম, তাই তারা কম দামে বিক্রয় করেও লাভ করতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে ১ বস্তা ব্রয়লার ফিডের দাম ৩ হাজার ৫০০ টাকা, ৫০ কেজি এক বস্তা লেয়ার ফিডের মূল্য ২ হাজার ৯০০ টাকা, একটি ব্রয়লার বাচ্চার মূল্য ৫০ থেকে ৬০ টাকা, একটি লেয়ার বাচ্চার মূল্য ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। বাংলাদেশে একটি ডিমের উৎপাদন খরচ সাড়ে ১০ টাকা থেকে ১১ টাকা। বাচ্চার দাম ৩৫ টাকা ধরে ১ কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৬৭ টাকা। বাচ্চার দাম বেড়ে গেলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। তাই ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ ডাবল।
সরকারকে তদারকি করে সমস্যা সমাধান ও ব্যবস্থা নিতে হবে। সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কর্পোরেট গ্রুপগুলো ২০১০ সাল থেকে মুরগির বাচ্চায় সিন্ডিকেট করে ১৫ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়েছিল। এরপর প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি করে দিয়ে মুরগির বাচ্চার উৎপাদন খরচ ২২ টাকা ধরে লাভ সহকারে ৩২ টাকা দাম বেধে দেওয়া হয়। কিন্তু কর্পোরেট অ্যাসোসিয়েশন হাইকোর্টে রিট করে তাদের খেয়াল খুশি মতো পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দিয়ে প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে, যার প্রভাব বাজারে এসে পড়ছে।