ডলার বুকিংয়ের নতুন নিয়ম
প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
ভবিষ্যতের জন্য ডলার বুকিং দেওয়ার নতুন নিয়ম চালু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ডলারের ভবিষ্যৎ দাম (ফরোয়ার্ড রেট) সর্বোচ্চ কত হবে তা-ও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ১ বছর পর ডলারের দাম বর্তমানের চেয়ে ‘এসএমএআরটি’ বা স্মার্ট হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ পর্যন্ত বেশি নিতে পারবে ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক গত রোববার এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারির মাধ্যমে নতুন নিয়ম চালু করেছে। ডলার ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর থেকে মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকায় ডলার সাশ্রয়ে আমদানি নিরুৎসাহ করা বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও ডলারের বাজারে অস্থিরতা চলতে থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবার ডলার বুকিংয়ের সময়সীমা বাড়িয়ে নতুন নিয়ম চালু করল। একই সঙ্গে বাজারে ডলারের জোগান বাড়াতে রপ্তানিকারকদের ডলার ধরে রাখার সীমা অর্ধেক কমানো হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলার ক্রয় ও বিক্রয় উভয় ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ দাম নির্ধারণ করা যায়।
কোনো আমদানিকারক এখনই ডলার কিনে ১ বছরের মধ্যে পণ্য আমদানি করতে পারেন। এজন্য তাকে বর্তমান ডলারের সঙ্গে ব্যাংককে বাড়তি কমিশন দিতে হয়। ওই সময়ে দাম কমে গেলেও আমদানিকারককে বর্তমান দাম দিতে হবে। আবার দাম বেড়ে গেলেও তিনি সুবিধা পাবেন। অর্থাৎ, বাড়তি দাম দিতে হবে না। এদিকে রপ্তানিকারকও নির্দিষ্ট সময়ে ডলার বিক্রি করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে দাম কমে গেলে রপ্তানিকারক লোকসানেও পড়তে পারেন। নতুন নিয়ম কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দেবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী নেতারা। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার সামির সাত্তার বলেন, ডলারের বাজারে অস্থিরতা এখনো কাটেনি। ব্যবসায়ীরা আগাম ধারণা করতে পারলে তা ব্যাবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে। তবে ডলারের রেট যদি কোনো কারণে কমে যায়, তাহলে তা সমন্বয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
কীভাবে আগাম বুকিং : বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, নতুন নিয়মে ১ বছরের জন্য ডলার বুকিং দিয়ে রাখা যাবে। এজন্য গ্রাহককে অতিরিক্ত অর্থ দিতে হবে। এটা নির্ধারিত হবে এখন যে পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে ঋণের সুদহার নির্ধারিত হয় সে হিসেবে, যেটা স্মার্ট বা সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল হিসেবে পরিচিত, সংক্ষেপে যার নাম এসএমএআরটি। প্রতি মাসের শুরুতে স্মার্ট রেট জানিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
জুলাইয়ে স্মার্ট রেট ছিল ৭.১০ শতাংশ। আগস্টে তা বেড়ে হয়েছে ৭.১৪ শতাংশ, যা চলতি সেপ্টেম্বরেও অপরিবর্তিত রয়েছে। আগাম ডলারের দরের জন্য ‘এসএমএআরটি’ রেটের সঙ্গে আরো ৫ শতাংশ যোগ করতে হবে। অর্থাৎ, তা ১২.১৪ শতাংশ হবে।
গতকাল থেকে আমদানিতে ডলারের দাম ১১০ টাকা ৫০ পয়সা কার্যকর হয়েছে। কেউ যদি ভবিষ্যতের জন্য ডলারের বুকিং দিতে চান, তাহলে তাকে এক বছর পর প্রতি ডলারে ১২৩ টাকার মতো পরিশোধ করতে হবে। আর মাসভিত্তিক দাম হলে তা মাস হিসাবেই কমে আসবে। আমদানিকারকদের কাছে বেশি দামে ডলার বিক্রির জন্য বেসরকারি খাতের ১০ ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নিয়মটি চালু করেছে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক, আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বাংলাদেশে ফরোয়ার্ড মার্কেট খুবই সংক্ষিপ্ত। তিন ও ছয় মাসের আছে, এক বছরের ছিল না। একজন ব্যবসায়ী এলসি খোলার তিন মাস পর সেটলমেন্ট হবে। তখন ডলারের দাম কী হবে তা তাঁরা জানেন না।
এখন জানা থাকলে সুবিধা হবে। যে ব্যবসায়ী দরকার মনে করবেন তিনি নেবেন, যিনি মনে করবেন না তিনি নেবেন না। তবে এটার দরকার আছে।’ এই অর্থনীতিবিদ বলেন, নির্বাচনের বছরে টাকা পাচার বাড়ছে, মূল্যস্ফীতি বেশি, রেমিট্যান্স বাড়ছে না। এতে আগামী দিনে ডলারের ওপর চাপ থাকবে, এটাই স্বাভাবিক।