পোলট্রি খামারিদের রক্ষায় ডিমের পরিবর্তে মুরগির বাচ্চা আমদানির আহ্বান
প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
মুরগির বাচ্চা বেশি দামে কিনতে হয়, তার ওপর মুরগির খাবারের দাম বেশি। এর ফলে ডিম উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। তাই ডিম আমদানি না করে মুরগির বাচ্চা ও খাবার আমদানির আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। গত মঙ্গলবার ঢাকায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পোলট্রি মালিকরা দাবি করেন, শুধু ডিম আমদানি না করে পোলট্রি ফিড ও বাচ্চা আমদানির সুযোগ দিলে সিন্ডিকেট ভেঙ্গে বাজার স্বাভাবিক হবে। বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদারও ডিম ও বাচ্চার উৎপাদন খরচ কমানোর ওপর জোর দেন। পোলট্রি খামারিদের রক্ষার জন্য প্রয়োজনে ডিম আমদানি বন্ধ রেখে মুরগির বাচ্চা আমদানির সুপারিশ করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমদানি না করে কর্পোরেট সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিয়ে প্রান্তিক খামারিদের জন্য পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা আমদানি করার ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে ডিম-মুরগির বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে। প্রতিটি ডিমের দাম হবে ৮ টাকা।’
গত কয়েক মাসে দেশে ডিমের দাম অস্বাভাবিকহারে বেড়ে গেছে। সরকার কয়েক দফায় দাম নির্ধারণ করেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে গত ১৭ সেপ্টেম্বর চারটি প্রতিষ্ঠানকে ও পরে আরো ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ১০ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয়। শুধু ডিম আমদানি করলে দেশের খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং খামারিরা উৎপাদন কমিয়ে দিলে সামনে এক পিস ডিমের দাম ২০ টাকা হয়ে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন বিপিএ’র সভাপতি সুমন হাওলাদার। তিনি বাংলাদেশ ও ভারতে ডিম এবং মুরগির বাচ্চার দামে খরচের পার্থক্য তুলে ধরেন। মুরগির বাচ্চা নিয়ে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সিন্ডিকেট করছে দাবি করে বিপিএ সভাপতি বলেন, এক মাস আগে লেয়ার মুরগির বাচ্চার দাম ছিল ৩৫ টাকা, এখন সেটা ৭৫ টাকা হয়েছে। আর ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম ছিল ৩৫ টাকা এখন সেটা ৫৩ টাকা হয়েছে। অথচ ভারতে লেয়ার মুরগির বাচ্চার দাম ৩৫ টাকা, আর ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম ২৭ টাকা।
তিনি বলেন, ‘ডিম ও মুরগি উৎপাদনে স্বয়ংসম্পন্ন বাংলাদেশ, আমাদের প্রতিদিনের ডিমের চাহিদা ৪ কোটি পিস, উৎপাদন আছে ৫ কোটি পিস। তাই ডিম আমদানি নয়, বরং ডিম ও মুরগি রপ্তানি করার সময় হয়েছে আমাদের। এখন উৎপাদন খরচ কমাতে কাজ করতে হবে।’ পোলট্রি শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ৫০ থেকে ৬০ লাখ কৃষকের স্বার্থরক্ষায় ডিম আমদানি বন্ধের আহ্বান জানান বিপিএ সভাপতি। ‘কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ফিড এবং মুরগির বাচ্চায় ৫০-২০০ শতাংশ লাভ করে, অথচ প্রান্তিক খামারিদের ডিম এবং মুরগি বিক্রি করতে হয় লোকসানে’- যোগ করেন তিনি। ২০২২ সালে জাতীয় যুব পুরস্কারের আত্মকর্মী ক্যাটাগরিতে জাতীয় পর্যায়ে প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলেন জাকির হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমি একজন প্রান্তিক খামারি। প্রান্তিক খামারিদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ কেউ দেখে না। এক থেকে দেড় বছর আগে ১ বস্তা ব্রয়লার ফিডের মূল্য ছিল ২২৫০, যা এখন ৩ হাজার ৪৫০ টাকা। ১ বস্তা লেয়ার ফিডের দাম ছিল ১ হাজার ৯০০ টাকা, যা এখন ২ হাজার ৮৭০ টাকা। আমাদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। অনেক খামারি বন্ধ করে দিচ্ছে তার খামার।‘ এদিকে বিপিএ’র সম্পাদক ইলিয়াস খন্দকার বলেন, ‘একদিন বয়সি মুরগির বাচ্চার উৎপাদন ও বিপণনের প্রায় পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করে কিছু করপোরেট প্রতিষ্ঠান। তারা সিন্ডিকেট করে এবং মুরগির বাচ্চার বাড়তি দাম নিয়ে একটি চক্র প্রতিদিন সাড়ে ৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে।