অর্থনৈতিক অঞ্চলে ট্রেড ইউনিয়ন চালুর সিদ্ধান্ত

প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

শ্রম অধিকার সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন চালুর অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় বিনিয়োগকারী দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের আপত্তি সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) চাপ- সরকারের এ সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে। এছাড়া, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইজেড) আইন সংশোধন করে শ্রম আইন ২০০৬-এর শ্রমিক অধিকার-সংক্রান্ত বিদ্যমান ধারাগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলেও জানান তারা। তবে এই সিদ্ধান্তের আওতামুক্ত থাকবে ইপিজেড বা দেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলো।

সূত্রগুলোর মতে, আগামী নভেম্বরে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় ট্রেড ইউনিয়ন চালুর বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে সরকার। তবে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরু থেকে এটি কার্যকর হবে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) মতে, এ সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন শ্রমিকদের সংগঠন করার অধিকার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা কার্যকরভাবে নিশ্চিত করাসহ তাদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।

রানা প্লাজা ধসের পর থেকেই ইপিজেডের কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন চালু করতে যুক্তরাষ্ট্র, আইএলও এবং ইইউ দাবি করলেও বাংলাদেশ তাতে সম্মতি দেয়নি। বাংলাদেশের এভরিথিং বাট আর্মস (ইবিএ) সুবিধা অব্যাহত রাখতে যে ৯ দফা অ্যাকশন প্ল্যান দিয়েছে, তার মধ্যেও এ শর্ত জুড়ে দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

সে প্রেক্ষাপটে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়- ইপিজেডগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যখন বিনিয়োগ করেছে, তখন থেকে তাদের সঙ্গে সরকারের অঙ্গীকার রয়েছে যে, সেখানে ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিক ধর্মঘট করার সুযোগ থাকবে না। তাই ইপিজেডে কোনো মতেই ট্রেড ইউনিয়ন চালু করা যাবে না। তবে ইজেডগুলোতে যেহেতু এখনো খুব বেশি বিদেশি বিনিয়োগ হয়নি এবং ইজেডে উৎপাদিত পণ্য দেশের বাজারে বিক্রির পাশাপাশি রপ্তানি হবে, তাই ইজেডগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন চালু করতে রাজী হয় সরকার। এ বিষয়টি আন্তর্জাতিক পক্ষগুলো মেনে নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। মূলত সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্যই সরকার ইপিজেডগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন চালুর বিষয়ে সম্মতি দেয়নি।

ইপিজেড ছাড়া দেশের সব ধরনের কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন চালুর করা হবে। ফলে বেজার ১০০ ইকোনমিক জোন, হাইটেক শিল্প পার্কসহ সব ধরনের শিল্প পার্কে ট্রেড ইউনিয়ন চালু হবে- জানান বেজা’র সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা। অব্যাহত বৈদেশিক চাপের মুখে গত ২১ মার্চ অনুষ্ঠিত আইএলও’র গভর্নিং বডির কাউন্সিলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ইজেডগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন চালুর করার অঙ্গীকার করেন। তারপর থেকে গত কয়েক মাস ধরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও আইন মন্ত্রণালয় সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নিয়ে এ বিষয়ে একাধিক সভা করে ইজেড আইন সংশোধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, গত সপ্তাহে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সপ্তম যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি (টিকফা) সংক্রান্ত পরিষদের বৈঠকে, ট্রেড ইউনিয়ন চালুর বিষয়টিকে এজেন্ডা হিসেবে রাখে যুক্তরাষ্ট্র।

ওই সভায়, আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় আইএলও’র গভর্নিং বডির কাউন্সিলের আগেই শ্রম আইন সংশোধন করার বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি তুলে ধরতে বাংলাদেশকে পরামর্শ দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও আইন মন্ত্রণালয় অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর কারখানাসমূহে ট্রেড ইউনিয়ন চালুর একটি উদ্যোগ নিয়েছে। এর আওতায় আছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন, ২০১০ এর ৩৪ নম্বর ধারা সংশোধন করে শ্রমিক অধিকার সংক্রান্ত শ্রম আইনের বিদ্যমান ধারা অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ। সংসদে এটি বিল হিসেবে পাঠানো হয়েছে।’ শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, ‘বেজা আইনে শ্রম অধিকার বিষয়ে ইপিজেড আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা সংযোজন করা হয়েছিল। এখন ওই ধারার বদলে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারাগুলো প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে।