২৩ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি দাবি

পোশাক শ্রমিকের নতুন কর্মসূচি

* ছয় মাসেও চূড়ান্ত হয়নি পোশাক শ্রমিকদের জন্য মজুরি * শ্রম আইন অনুযায়ী, মজুরি বোর্ড গঠনের ৬ মাসের মধ্যে মজুরি চূড়ান্ত করার শর্ত রয়েছে

প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন। একই সঙ্গে পোশাক শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করারও দাবি জানিয়েছে তারা। এসব দাবি আদায়ে মিছিল, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রাসহ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি। একই সঙ্গে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন শ্রমিকদের মূল মজুরি ৬৫ শতাংশ নির্ধারণ এবং প্রতিবছর ১০ শতাংশ হারে বেতন বাড়ানোর দাবি জানান।

বর্তমানে দেশে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা, যা ২০১৮ সালের শেষ দিকে চূড়ান্ত করা হয়। ১৯৮৪ সালে ৫৬০ টাকায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠিত হয়েছিল। এ পর্যন্ত এ খাতের শ্রমিকদের মজুরি ছয়বার সংশোধিত হয়েছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) গত জানুয়ারিতে ‘আরএমজি খাতের ন্যূনতম মজুরি : প্রস্তাবনা গণনা এবং যৌক্তিকতা’ শিরোনামে একটি সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে ৯টি দেশের পোশাক খাতের শ্রমিকদের মজুরির তুলনা করে দেখা গেছে, সবচেয়ে কম মজুরি বাংলাদেশে। তাতে দেখা যায়, বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি ন্যূনতম ৭৫.৫০ ডলার। একই সময়ে চীনে ২৬২ ডলার, ভারতে ১২৮ ডলার, ইন্দোনেশিয়ায় ১৩৭ ডলার, কম্বোডিয়ায় ১৯৪ ডলার, মালয়েশিয়ায় ২৫০ ডলার, ফিলিপাইনে ২৪৪ ডলার, ভিয়েতনামে ১৬৮ ডলার ও তুরস্কে ৩০৭ ডলার। ১৫ দিনব্যাপী কর্মসূচির প্রথম দিন গতকাল রোববার জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পাশাপাশি তখন শ্রমিকদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি আমিরুল হক। এছাড়া কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন একতা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান। জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন জানিয়েছে, ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে ২ থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন কারখানা, এলাকায় সংগঠিত হওয়া ও মিছিল-সমাবেশ করা হবে। এ কর্মসূচি শেষে আগামী ১৫ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা করবেন পোশাক শ্রমিকরা। কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ২০১৮ সালে পোশাক শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত ৮ হাজার টাকা মজুরি ছিল ওই সময়ে ১০০ ডলারের সমান। বর্তমানে ১০০ ডলারের বাজারদর দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার টাকার বেশি। অন্যদিকে গত ৫ বছরে দেশে দ্রব্যমূল্য অনেক বেড়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা দু-তিন গুণ বেড়েছে। বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে সমন্বয় করলে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকার বেশি হওয়া উচিত। শ্রমিক নেতারা আরো বলেন, পোশাক কারখানার মালিকদের মুনাফা ৭ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত। এছাড়া মালিকরা রপ্তানির বিপরীতে সরকারের কাছ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ প্রণোদনাও পান। এ বিষয়গুলোও মজুরি নির্ধারণে আমলে নেওয়া দরকার। প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের পোশাক খাতের শ্রমিকদের মজুরি সর্বনিম্ন- এ কথা উল্লেখ করে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা বলেন, বর্তমান বাজারদর, মূল্যস্ফীতি, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়েছে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন। একই সঙ্গে ৬৫ শতাংশ মূল মজুরি ও প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধির দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি। পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের বৈশ্বিক ক্রেতাদেরও সহযোগিতা চেয়েছেন শ্রমিক নেতারা। তারা বলেন, ইউরোপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও জাপানের মতো দেশের ক্রেতারা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শুল্কছাড় সুবিধায় বাংলাদেশের পোশাকপণ্য ক্রয় করেন। তাই প্রয়োজনে পণ্যের মূল্য কিছুটা বৃদ্ধি করে হলেও শ্রমিকের বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া দরকার। জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে আরো বক্তব্য দেন সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম, সহ-সভাপতি ফারুক খান, আলেয়া বেগম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. কবির হোসেন, আইন সম্পাদক এইচ রবিউল চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক মো. রিয়াদ হোসেন, যুববিষয়ক সম্পাদক মুজাহিদুল আমিন, কোষাধ্যক্ষ হ্যাপি আক্তার, নারীবিষয়ক সম্পাদক সুইটি সুলতানা প্রমুখ।

মজুরি বোর্ড গঠনের পর প্রায় ৬ মাস পার হতে চললেও এর মধ্যে মাত্র দুটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দ্বিতীয় সভায় শ্রমিক ও কারখানা মালিক পক্ষের প্রতিনিধি স্ব স্ব পক্ষের মজুরির প্রস্তাব জমা দেওয়ার কথা বলা হলেও তা হয়নি। সর্বশেষ গত ৯ আগস্ট সভায় সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরবর্তী সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। ওই সভা অনুষ্ঠিত হয় গতকাল রবিবার কিন্তু এই সভায়ও মালিকপক্ষ তাদের প্রস্তাব জমা দেয়নি। শ্রম আইন অনুযায়ী, মজুরি বোর্ড গঠনের ৬ মাসের মধ্যে মজুরি চূড়ান্ত করার শর্ত রয়েছে। পোশাক খাতের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এবং আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা রোববার প্রস্তাব জমা দিচ্ছি না। কারণ, আমাদের পর্যালোচনা এখনো শেষ হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘অনেক কারখানায় ওয়ার্ক অর্ডার নেই। বিদেশেও ঘুরে দেখেছি, সেখানেও অবস্থা ভালো নয়। আমরা আরো অপেক্ষা করি, দেখি পরিস্থিতির উন্নতি হয় কিনা।’ তবে এ মাসেই প্রস্তাব দেওয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি। শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, ‘মালিকপক্ষ প্রস্তাব দিলে আমরাও দেব।’ মালিকপক্ষ প্রস্তাব না দিলে শ্রমিকপক্ষ থেকে দেওয়া হবে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি ‘নিশ্চিত নয়’ বলে জানান। শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধিরা এটিকে ‘কৌশল’ বলে মনে করছেন।