ঢাকা ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নিত্যপণ্যের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আরো কঠোর হবে সরকার

নিত্যপণ্যের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আরো কঠোর হবে সরকার

নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে কঠোরভাবে আইনপ্রয়োগ করে ভোক্তাদের স্বার্থ বজায় রাখা হবে বলে জানালেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান। গতকাল সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলেন তিনি। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ডিজি বলেন, নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে একশ্রেণির ব্যবসায়ী অস্বাভাবিক আচরণ করছেন। আইনের দুর্বলতা ও ভোক্তাদের অসচেতনতার কারণে এসব ব্যবসায়ীকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তবে সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। প্রয়োজনে এ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আরো কঠিন পদক্ষেপ নেয়া হবে। বর্তমানে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও টাকার মান কমে যাওয়া দেশের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ মন্তব্য করে এ ডিজি আরও বলেন, এটি দেশের ১৭ কোটি মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধসহ আন্তর্জাতিক নানা ঘটনার প্রভাব পড়ছে দেশের দ্রব্যমূল্যের ওপর। তবে এর সুযোগ নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা এমন কিছু পণ্য নিয়ে কারসাজি করছে, অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়াচ্ছে, যার সঙ্গে এসব আন্তর্জাতিক ঘটনার তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ এসব খাদ্যপণ্যের অধিকাংশই উৎপন্ন হয় আমাদের দেশে।

ডিম, কাঁচামরিচ, আলুর দাম আকস্মিকভাবে বেড়ে যাওয়ার উদাহরণ দিয়ে ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক বলেন, এসব ক্ষেত্রে দাম বাড়ায় কোনো ফর্মূলা কাজ করে না। এগুলো অস্বাভাবিক আচরণ। তবে দেশের নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সীমিত লোকবল দিয়ে হলেও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন এএইচএম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, দেশের অনেক জায়গায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা নেই। তারপরও সীমিত সামর্থ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে সংস্থাটি। এর সুফলও পড়তে শুরু করেছে বাজারে। পাশাপাশি শুধু আইনের দুর্বলতার কারণেও অনেক ক্ষেত্রে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। একথা উল্লেখ করে ভোক্তা অধিকারের ডিজি বলেন, নিজেদের অধিকার বুঝে নেয়ার ব্যাপারে ভোক্তাদের আরো সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, শুধু আইনের প্রয়োগের মাধ্যমেই জিনিসপত্রের দাম কমানো সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। যতক্ষণ না পর্যন্ত ভোক্তারা সচেতন হচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারে কারসাজির অপচেষ্টা চালাতে থাকবেন। পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণে এসব সিন্ডিকেটকারীকে দমন করতে সরকার প্রয়োজনে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা করবে না বলে উল্লেখ করেন ভোক্তা অধিকারের ডিজি। এ ক্ষেত্রে ডিম আমদানির অনুমতি দেয়ার উদাহরণটি টানেন তিনি। ভোক্তা অধিকারের ডিজি বলেন, এতে ক্ষুদ্র খামারিরা সাময়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বৃহত্তর পর্যায়ে দেশের ভোক্তাদের স্বার্থে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। এ সময় সিন্ডিকেটকারীদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি। ভোক্তা অধিকার সচেতনতাবিষয়ক বিতর্ক প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফাইনাল ও পুরস্কার বিতরণ নিয়ে আয়োজিত এ প্রেস ব্রিফিংয়ে আরো উপস্থিত ছিলেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ডিবেট ফর ডেমোক্র্যাসির উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভোক্তা অধিকার সচেতনতাবিষয়ক এ বিতর্ক প্রতিযোগিতা। ছায়া সংসদের আদলে এতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। গত ১১ আগস্ট প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বর্তমানে চলছে সেমিফাইনাল ও ফাইনালের প্রস্তুতি। প্রেস ব্রিফিংয়ে এ আয়োজনের নানা দিক তুলে ধরে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, যারা দ্রব্যমূল্য নিয়ে কারসাজি করছে, তাদের মুখোশ উন্মোচন করে দিতে হবে। এ সময় তিনি নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনগুলোতে খাদ্যের মান কমে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মাছ ও মুরগির পিস এত ছোট হচ্ছে যে, তরকারির মধ্যে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। এতে পুষ্টির অভাবে ভুগছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় দেশের ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রশংসা করে হাসান আহমেদ কিরণ বলেন, সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি ভোক্তাদের স্বার্থে যে অবস্থান নিয়েছেন, তার বিনিময়ে মহান আল্লাহও তাকে উপযুক্ত প্রতিদান দেবেন, আশা করি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত