কৃষককে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করেন হিমাগার এজেন্টরা
প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
হিমাগারের এজেন্টরা প্রত্যক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন আলুর দর। নানা কৌশলে তারা কৃষককে কম দামে আলু বিক্রি করতে বাধ্য করেন। এতে ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষক। এমনকি কৃষকের নামে বরাদ্দকৃত ঋণও অনৈতিকভাবে তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্য আলু সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রয় নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ-সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গত ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর আলু উৎপাদনকারী জেলা মুন্সীগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর ও নীলফামারীতে আলুর হিমাগার পরিদর্শন, কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদনটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান। প্রতিবেদনে ভোক্তা অধিদপ্তর বলেছে, এ খাতে বরাদ্দ করা ঋণ ঠিকভাবে পাচ্ছেন না কৃষক। হিমাগার মালিকরা কৃষকদের নামে বরাদ্দ ঋণ অনৈতিকভাবে ব্যাংক থেকে তুলে নিয়ে তাদের এজেন্টদের মাধ্যমে আলু উৎপাদন মৌসুমে দাদন দিয়ে থাকেন কৃষকদের। তারপর কৃষকদের কম দামে আলু বিক্রি করতে বাধ্য করেন। এভাবে এবারের মৌসুমে এজেন্টরা কৃষক থেকে ১০ থেকে ১২ টাকা দরে প্রতি কেজি আলু কিনে নেন। অনেক সময় কৃষক সরাসরি হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করতে পারেন না। এজেন্টদের দ্বারস্থ হতে হয়। অন্যদিকে আলুতে বিনিয়োগ করতে বিনিয়োগকারীকে আয় বা অন্য কোনো তথ্য দিতে হয় না। ফলে যে কেউ আলু চাষি না হয়েও অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করে ব্যবসা করতে পারেন। এতে প্রকৃত কৃষক আলুর ব্যবসা থেকে বঞ্চিত হন। এভাবেই এজেন্টরা প্রত্যক্ষভাবে আলুর দর নিয়ন্ত্রণ করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি হিমাগারে কিছু ব্যাপারী এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে আলু বিক্রি করেন। এসব ব্যাপারীর সহায়তা ছাড়া কেউ হিমাগার থেকে সরাসরি আলু কিনতে পারেন না। এসব ব্যাপারী আলু বিক্রয়ে কোনো রসিদ দেন না। শুধু পরিবহণে চালানের মাধ্যমে বিক্রয় হয়। কিন্তু ওই চালানে আলুর পরিমাণ উল্লেখ থাকলেও কোনো দর উল্লেখ থাকে না। প্রতিবেদনে বলা হয়, উৎপাদন ও সংরক্ষণ ব্যয় হিসাব করলে প্রতি কেজির আলুর সর্বোচ্চ ব্যয় দাঁড়ায় ১৮ থেকে ২০ টাকা। হিমাগার থেকে ২২ টাকা দরে বিক্রি করলেও ফড়িয়াদের (এজেন্ট ও ব্যাপারী) লাভ থাকে। কিন্তু বর্তমানে হিমাগারেই আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, যা খুচরা বাজারে এসে ৫৫ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কিছু পরামর্শ দিয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তর। সংস্থাটি বলেছে, বর্তমান সংকট মোকাবিলায় সীমিত আকারে আলু আমদানির অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। একই সঙ্গে হিমাগার, এজেন্ট, ব্যাপারী, পাইকারি এবং খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে কেনাবেচায় বাধা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অধিদপ্তর মনে করে ন্যায্য মূল্যে কৃষকদের বীজ আলু, কীটনাশক, সার ও শস্য বীমা চালু করাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া জরুরি। এছাড়া আরো কয়েকটি সুপারিশ করেছে অধিদপ্তর। যেমন- প্রান্তিক কৃষকদের ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে ও সহজে ঋণ বিতরণে মোবাইল অ্যাপের ব্যবহার করা যেতে পারে। হিমাগারে কৃষকদের আলু সংরক্ষণ করতে হবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। যারা হিমাগারে আলু রাখবেন, রেজিস্ট্রার বুকে তাদের বিস্তারিত তথ্য রাখতে হবে। কৃষিপণ্য পরিবহণে চাঁদাবাজিসহ বস্তায় অতিরিক্ত ব্যয় দূর করতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। হিমাগারসহ বিভিন্ন ধাপে বিক্রয়, পরিবহণসহ সব পর্যায়ে পাকা রসিদ রাখা বাধ্যতামূলক করতে হবে। বাজারে কৃষিপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সময়মতো দিতে হবে আমদানি-রপ্তানির অনুমতি। এ বিষয়ে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, অনেক আগে থেকেই তারা বলে আসছেন আলু আমদানি পণ্য নয়। এটি দেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্য। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে আলুর দাম বাড়াচ্ছেন। ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রতিবেদনেও তা-ই প্রমাণিত হয়েছে। এখন দেখার বিষয় সরকার তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়।