অর্থ বিভাগের প্রতিবেদন

জুনে রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ছাড়াবে

প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বেশ কিছু শর্তে বাংলাদেশের জন্য ঋণ মঞ্জুর করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সেগুলোর বাস্তবায়ন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে এরই মধ্যে ঢাকায় এসেছেন সংস্থাটির রিভিউ মিশনের সদস্যরা। কিন্তু শর্ত অনুযায়ী, নেট রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ পাওয়া পিছিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এর মধ্যে সরকার আগামী বছরের জুন নাগাদ ৩০ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গড়ে তোলার প্রক্ষেপণ জানিয়েছে। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় উত্থাপনের জন্য একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে অর্থ বিভাগ। এতে তারা প্রক্ষেপণ করেছে যে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ নাগাদ রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে। ‘ম্যাক্রোইকোনমিক পারফর্ম্যান্স অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি আগামী ৯ থেকে ১৫ অক্টোবর মরক্কোর মারাকাশ শহরে অনুষ্ঠেয় সংস্থা দুটির হাই-প্রোফাইল যৌথসভায় উপস্থাপন করা হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের উন্নতির জন্য সরকার সতর্কতামূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য ও পরিমাণ তদারকিসহ অন্যান্য তদারকিমূলক পদক্ষেপ রয়েছে।’ অর্থ বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাব-প্রোগ্রাম (এসপি) ২-এর আওতায় চলতি অর্থবছরে আরো বাজেট সহায়তা লাভের পরিকল্পনা রয়েছে, যা রিজার্ভ বাড়াতে সহায়তা করবে। চলতি অর্থবছরে এডিবি এবং এআইআইবির থেকে ৪০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা বাবদ পাওয়া যাবে।

আগামী বছরের জুন নাগাদ বিশ্বব্যাংকের থেকে পাওয়া যাবে আরও ২৫০ মিলিয়ন ডলার। এই ১.০৫ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা ছাড়াও, সরকার অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদারদের থেকে বাজেট সহায়তা চাওয়ার পরিকল্পনা করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মহামারিসহ অন্যান্য বৈশ্বিক সংকট দেখা দেওয়ার আগে গত কয়েক বছর ধরে বাহ্যিক খাতের শক্তিশালী পারফর্ম্যান্সের সুবাদে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির পারদর্শিতা ছিল বেশ সন্তোষজনক।

বাংলাদেশের অর্থনীতির বাহ্যিক খাত উন্নয়নের অন্যতম বৈশিষ্ট্যের মধ্যে ছিল রপ্তানিতে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি, চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ধারাবাহিক উন্নতি, বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা এবং প্রবাসী কর্মীদের রেমিট্যান্স প্রবাহ। কিন্তু, গত অর্থবছরে আর্থিক হিসাবের ঘাটতি ও আমদানি মূল্য পরিশোধের বিপুল চাপ বৈদেশিক মুদ্রার মজুদকেও কিছুটা চাপের মধ্যে ফেলেছে, এতে আরো বলা হয়েছে।

বর্তমান ২১ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভের তুলনায় উচ্চতর এই প্রক্ষেপণ, এই মাসে মরক্কোর মারাকেশ শহরে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় উত্থাপন করা হবে।

সেখানে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার একটি চিত্র তুলে ধরবেন। ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা প্যাকেজের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় করার আগে আইএমএফের দেওয়া অন্যতম একটি শর্ত ছিল, ৩০ সেপ্টেম্বর নাগাদ অন্তত ২৫.৩২ বিলিয়ন ডলারের নেট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ থাকা। কিন্তু, ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখে নেট বা প্রকৃত রিজার্ভ ছিল ২১.১৫ বিলিয়ন, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যসূত্রে জানা গেছে। রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ করা যায়নি, এই ব্যর্থতার পেছনে মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা ব্যাখ্যা করে সফররত মূল্যায়ন মিশনকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন আর্থিক আমলারা, যাতে নির্ধারিত সময়েই আইএমএফ তাদের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় করে। মিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আইএমএফের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ। ঢাকায় অবস্থানের দ্বিতীয় দিন- সোমবারে রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আবদুর রউফ তালুকদার ও অর্থসচিব ড. খায়রুজ্জামান মজুমদারের সঙ্গে বৈঠক করবেন আইএমএফ কর্মকর্তারা। আগামী ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকা অবস্থানকালে তারা সরকারের এক ডজনের বেশি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করবেন। মিশন সদস্যরা তাদের রিপোর্ট আইএমএফ’র আঞ্চলিক নির্বাহী পরিচালক ড. কৃষ্ণমূর্তির কাছে হস্তান্তর করবেন। ড. কৃষ্ণমূর্তি নিজেও ১৮ অক্টোবর ঢাকা আসছেন। সফরকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। আইএমএফ রিভিউ মিশন শর্তগুলো অর্জনে সফলতা ও ব্যর্থতা পর্যালোচনা করে আগামী ডিসেম্বর ও ২০২৪ সালের জুনের জন্য নতুন করে আবার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেবে। গত সোমবার নাম না প্রকাশের শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, আইএমএফ কর্মকর্তাদের দেওয়া প্রতিবেদন তাদের বোর্ডে উত্থাপন করা হবে।

এর ভিত্তিতে তারা আগামী ডিসেম্বরে পরবর্তী কিস্তি ছাড় করা হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান একদিন আগেই বলেন যে, নির্বাচনের (ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে) আগে আইএমএফ ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় নিয়ে সরকার চিন্তিত নয়, কারণ দেশে ২১ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ আছে, আমদানিও ৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির জন্য যেসব শর্ত পূরণ দরকার সেসব আমরা পূরণ করেছি। তাই দ্বিতীয় কিস্তি পেতে কোনো সমস্যা হবে না।

এদিকে, গত অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আইএমএফ নির্দেশিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা কম আদায় করেছে। চলতি অর্থবছর জিডিপির অনুপাতে ০.৫% বাড়তি রাজস্ব আদায় করতে হবে এনবিআরকে। এ হিসাবে, এবছর ৪.১০ লাখ কোটি টাকা আয় করতে হবে। কিন্তু, অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেও ৬১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের প্রতিশ্রুতি পূরণেও পিছিয়ে আছে এনবিআর। আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সাথে প্রতিষ্ঠানটির সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আগামী ৫ অক্টোবর। বৈঠকে গত অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে মন্থর প্রবৃদ্ধির জন্য আমদানি কমে যাওয়ায়- শুল্ক বাবদ রাজস্ব আদায় কম হওয়াকে অন্যতম কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা দেবেন রাজস্ব কর্মকর্তারা।

একই সঙ্গে, চলতি অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরবেন। রাজস্ব আদায়ের পরিস্থিতি জানিয়ে এবং চলতি অর্থবছরে সম্ভাব্য আদায়ের বিষয়ে গত সপ্তাহে আইএমএফকে একটি চিঠি দিয়েছে এনবিআর। চিঠিতে বলা হয়, এনবিআর আইএমএফ নির্দেশিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণের আশা করছে।