জমি-ফ্ল্যাটের নিবন্ধনের উৎসে কর কমিয়েছে এনবিআর

প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

আবাসন খাত সংশ্লিষ্টদের নানা সমালোচনা ও বিতর্কের মুখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) উচ্চ নিবন্ধন কর আরোপের অবস্থান থেকে সরে আসছে। একই সঙ্গে ঘোষিত এলাকাভিত্তিক কর আরোপের পরিবর্তে মৌজাভিত্তিক কর ধার্য করা হয়েছে। ফলে জমি ও ফ্ল্যাট নিবন্ধনে বাড়তি করের বোঝা কমছে ভোক্তার। এনবিআর জমি ও ফ্ল্যাটের নিবন্ধন কৌশল ও কর কমানোর প্রস্তাব গত সোমবার অনুমোদন পেয়েছে। কর-নীতি সদস্য ড. সামস উদ্দিনের সই করা প্রজ্ঞাপন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

চলতি বাজেটে জমি ও ফ্ল্যাটের নিবন্ধন কর দ্বিগুণ করে সরকার। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয় এবং এই খাতে রাজস্ব আদায়ে ধস নামে। উ™ূ¢ত পরিস্থিতিতে এনবিআর উৎসে কর আদায়ের পদ্ধতি বদলানোর সিদ্ধান্ত নেয়। গুলশান, বনানী, মতিঝিল, এবং তেজগাঁও থানার অধীনস্থ সকল মৌজায় সাধারণ-বাণিজ্যিক প্লট এবং রিয়েল এস্টেট-ডেভেলপড বাণিজ্যিক প্লটের জন্য সর্বোচ্চ উৎসে কর এখন হবে ১৫ লাখ টাকা; যা আগে ছিল ২০ লাখ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে করের হার দ্বিগুণ বাড়ানোর পর জমি নিবন্ধনের উৎসে কর কমিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত বুধবার রাতে জারি করা এক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এনবিআর এখন জমিকে পাঁচটি ভাগে শ্রেণিবদ্ধ করেছে : বাণিজ্যিক (সাধারণ), আবাসিক (সাধারণ), বাণিজ্যিক (রিয়েল এস্টেট) এবং আবাসিক (রিয়েল এস্টেট) এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের অন্যান্য জমি। এর আগে জমির শুধুমাত্র দুটি শ্রেণি ছিল- বাণিজ্যিক এবং আবাসিক। গুলশান, বনানী, মতিঝিল, এবং তেজগাঁও থানার অধীনস্থ সকল মৌজায় সাধারণ-বাণিজ্যিক প্লট এবং রিয়েল এস্টেট-ডেভেলপড বাণিজ্যিক প্লটের জন্য সর্বোচ্চ উৎসে কর এখন হবে ১৫ লাখ টাকা; যা আগে ছিল ২০ লাখ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেট হবে ৬ লাখ টাকা বা রাজধানীর একই এলাকায় সাধারণ-আবাসিক প্লট এবং রিয়েল এস্টেট-ডেভেলপড আবাসিক প্লটের দলিল মূল্যের ৮%। এছাড়া সর্বনিম্ন রেট হবে ৫ লাখ টাকা বা একই এলাকার মধ্যে অন্যান্য জমির দলিল মূল্যের ৮%। তবে অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ভূমি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে একই করের হার ৬% থাকবে। জেলা শহরের বাইরে পৌরসভার জন্য ৪% এবং পৌরসভার বাইরের সকল মৌজার জন্য ২% উৎসে কর আরোপ করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আরও দক্ষ প্রগতিশীল কর কাঠামো প্রতিষ্ঠার জন্য নতুনভাবে জমি শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। এই কর্মকর্তা আরো বলেন, জমির ক্রেতা এবং বিক্রেতা দুই পক্ষই নতুন এ ব্যবস্থা থেকে উপকৃত হবেন। এতে শুধুমাত্র করই কমবে তা নয়, বরং আবাসিক জমি ক্রয়-বিক্রয়ের খরচও কমবে। বিদ্যমান এলাকাভিত্তিক উৎসে কর হারের পরিবর্তে মৌজা ও শ্রেণিভিত্তিক (আবাসিক, বাণিজ্যিক, রিয়েল এস্টেট বা ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নকৃত জমি) কর আদায় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন পদ্ধতিতে জমির পাঁচটি শ্রেণি করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে- ক শ্রেণি : রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন বাণিজ্যিক এলাকা (জমি বা প্লট)। খ শ্রেণি : ক শ্রেণিতে উল্লিখিত এলাকার আবাসিক। গ শ্রেণি : রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়, কিন্তু ডেভেলপার বা রিয়েল এস্টেট কোম্পানির প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্যিক এলাকা। ঘ শ্রেণি : গ শ্রেণিতে উল্লিখিত আবাসিক এলাকা। ঙ শ্রেণি : ক, খ, গ, ঘ শ্রেণি ব্যতীত অন্যসব এলাকা; দেশের পৌরসভা ও প্রত্যন্ত এলাকার জমি বা প্লট। নতুন জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ঢাকা জেলার গুলশান, বনানী, মতিঝিল ও তেজগাঁও থানার অন্তর্গত সকল মৌজার ক্ষেত্রে শ্রেণিভিত্তিক করহার নির্ধারণ করা হয়েছে। ক ও গ শ্রেণির জন্য ভূমির মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ১৫ লাখ টাকার মধ্যে যেটা বেশি তা আদায় করা হবে। একই মৌজার খ ও ঘ শ্রেণির জন্য ভূমির মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ৬ লাখ টাকার মধ্যে যেটা বেশি এবং ঙ শ্রেণির জন্য ভূমির মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ৫ লাখ টাকার মধ্যে যেটা বেশি তা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের নতুন আয়কর আইন অনুযায়ী ঢাকার গুলশান, বনানী, মতিঝিল, দিলখুশা, নর্থ সাউথ রোড, মতিঝিল সম্প্রসারিত এলাকাসমূহ ও মহাখালী এলাকার দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা ২০ লাখ টাকার মধ্যে যেটা বেশি তা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আবাসিক বা বাণিজ্যিক-উভয় শ্রেণির জমির ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোগ্য ছিল। সে হিসেবে নতুন জারি করা আদেশে জমির উৎসে কর উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। একইভাবে ঢাকা জেলার ধানমন্ডি, ওয়ারী, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা, শাহবাগ, রমনা, পল্টন, বংশাল, নিউমার্কেট ও কলাবাগান থানার অন্তর্গত সকল মৌজার শ্রেণিভিত্তিক করহার নির্ধারণ করা হয়েছে। ক ও গ শ্রেণির জন্য ভূমির মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ১০ লাখ টাকার মধ্যে যেটা বেশি, খ ও ঘ শ্রেণির জন্য ভূমির মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ৪ লাখ টাকার মধ্যে যেটা বেশি এবং ঙ শ্রেণির জন্য ভূমির মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ৩ লাখ টাকার মধ্যে যেটা বেশি তা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন আয়কর আইনে ঢাকার উত্তরা, সোনারগাঁও, জনপথ, শাহবাগ, পান্থপথ, বাংলামোটর এবং কাকরাইল এলাকার দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা ১২ লাখ টাকার মধ্যে যেটা বেশি তা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে হিসেবে নতুন জারি করা আদেশে জমির উৎসে কর উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।