তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে বর্তমানে বিশ্বজুড়ে যে অস্থিরতা চলছে, তাতে শুধু স্থান ধরে রাখা নয়, বরং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকাই বাংলাদেশের গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে বায়াররা যদি বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা প্রতিটি পণ্যে দুই সেন্ট করে দাম বাড়ায়, তাহলে হয়তোবা সংকট কিছু হলেও কমানো যাবে। রপ্তানি করা পোশাকের দাম বাড়াতে বায়ারদের অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। রপ্তানি করা প্রতিটি পোশাকের দাম ২ সেন্ট বাড়িয়ে বায়ারদের কাছ থেকে বছরে অন্তত এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাড়তি আয়ের চেষ্টা করছে বিজিএমইএ। দেশে বিদ্যুৎ এবং গ্যাস বিল বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি শ্রমিকদের মজুরি কাঠামো ঘোষণার সময় ঘনিয়ে আসায় বাড়তি খরচ মেটাতেই এ চেষ্টা সংগঠনটির। সম্প্রতি ব্র্যান্ড-রিটেইলার এবং বায়ার প্রতিনিধিদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের বর্তমান পরিস্থিতি অবহিত করার পাশাপাশি রপ্তানি করা পোশাকের দাম বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসান। অবশ্য এর সদস্য গার্মেন্টস মালিকদের কাছে দেয়া অপর এক চিঠিতে তিনি প্রতিটি পোশাকের দাম অন্তত ২ সেন্ট করে বাড়াতে বায়ারদের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানান। এ বিষয়ে বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, বায়ার বা ক্রেতারা বর্তমানে যে দাম দিচ্ছেন, আমরা সেটি দিয়ে টিকে থাকতে পারছি না। সেজন্য আমরা বায়ারদের অনুরোধ করেছি বর্তমানে প্রতি পিস পণ্য যে দামে কেনা হচ্ছে, তার থেকে যেন দাম কমপক্ষে দুই সেন্ট করে বাড়ানো হয়। গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের প্রায় ৩৭ বিলিয়ন ডলার ব্যাক টু ব্যাক কাঁচামাল আমদানির অর্থ পরিশোধ করতে হয়।
গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের দাবি, বছরে তৈরি পোশাক খাত থেকে ৪৬ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় হলেও এর মধ্যে ৮০ শতাংশ হিসেবে প্রায় ৩৭ বিলিয়ন ডলার ব্যাক টু ব্যাক কাঁচামাল আমদানির অর্থ পরিশোধ করতে হয়। বাকি ২০ শতাংশ অর্থাৎ ৯.০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন হিসেবে খরচ হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া রয়েছে বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিলের পাশাপাশি কারখানা ভাড়া। এদিকে পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, চলতি বছরের ডিসেম্বরেই বাড়ছে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন। বিজিএমইএর পরিচালক এএম মহিউদ্দিন বলেন, ‘ব্র্যান্ড মালিকদের কাছে আমাদের আকুল আবেদন, যে দামে তারা পণ্য নিতে চাচ্ছেন, তার থেকে যেন দাম কিছুটা বাড়িয়ে দেয়া হয়।’ পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, চলতি বছরের ডিসেম্বরেই বাড়ছে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন। মূলত লোকসান কিছুটা পুষিয়ে নিতেই এমন অনুরোধ করা হয়েছে উল্লেখ করে চট্টগ্রামের সনেট গার্মেন্টসের পরিচালক গাজী মোহাম্মদ শহীদউল্লাহ বলেন, বায়ার থেকে ২ সেন্ট বেশি নেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। এদিকে শ্রমিকদের বাড়তি বেতন দিতে হবে। তবে বায়ার থেকে পাওয়া বাড়তি অর্থ কিন্তু শ্রমিকদের বাড়তি বেতন দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত নয়। সেটি আমাদের নিজেদের পকেট থেকেই দিতে হবে। বায়ারদের থেকে বেশি অর্থ চাওয়া হচ্ছে মূলত আমরা যে লোকসানের মধ্যে আছি, তা কিছুটা পুষিয়ে নিতে।
সবশেষ ৫ বছর আগে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১০০ ডলার হিসাবে ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এবার শ্রমিকরা ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা দাবি করছে। তবে সংকট মোকাবেলায় পোশাক প্রতি ২ সেন্ট বাড়তি আদায়ের কোনো বিকল্প দেখছেন না গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে বিদেশি ক্রেতাদের অর্ডার কমে যাওয়ায় তৈরি পোশাক খাত নানামুখী সংকটের মধ্যে রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরামের সভাপতি এসএম আবু তৈয়ব বলেন, বায়াররা যদি আমাদের অনুরোধ মেনে না নেন, তাহলে হয়তো তাদের আমাদের দেশের তৈরি পোশাক খাতের প্রতি আকষর্ণ কমতে পারে। আমরা হয়তো বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সক্ষমতাও হারাতে পারি। সুতরাং, এরকম একটি শঙ্কার মধ্যেই কিন্তু আমরা ২ সেন্ট বেশি চেয়েছি। গত অর্থবছরে ৪৬.৯৯ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশের গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা। আর রাজধানী ঢাকা জোনের ১ হাজার ৮৩৯টি গার্মেন্টস কারখানা এবং চট্টগ্রামের ২৫৭টি গার্মেন্টস কারখানায় ৪০ লাখের বেশি শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন।