ঋণের শর্ত মানতে হলে খেলাপি কমাতে হবে : আইএমএফ

অর্থ মন্ত্রণালয় ও জ্বালানি বিভাগের সঙ্গে সফররত মিশন সদস্যদের বৈঠক

প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ঋণ কর্মসূচির আওতায় দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার শর্ত দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তারপরও আশঙ্কাজনক হারে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ঢাকায় সফররত সংস্থাটির প্রতিনিধি দল। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত খেলাপি ঋণের চেয়ে প্রকৃত খেলাপি আরো বেশি বলে জানিয়েছে তারা। বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করার পর আইএমএফ চলতি বছরের প্রথমার্ধে যেসব শর্ত দিয়েছিল, তা বাস্তবায়ন এবং দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ঢাকায় এসেছে সংস্থাটির এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে একটি মিশন। তারা গত রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, গত এপ্রিল-জুন সময়ে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। এই খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতের বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। এতে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে গত জুন পর্যন্ত ২ লাখ ৯৭ হাজার ৭৫১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৭৪ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা। সে হিসেবে খেলাপির হার ২৫ শতাংশের কিছুটা বেশি। এ সময়ে দেশের বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৩৯ হাজার ১১৬ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৩ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। খেলাপির হার ৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ঋণ কর্মসূচির আওতায় আইএমএফকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০২৬ সালের ডিসেম্বর নাগাদ রাষ্ট্র খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে এবং বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। বৈঠকে জানানো হয়, খেলাপি ঋণ কমাতে এরই মধ্যে আইএমএফের পরামর্শ এবং নিজস্বভাবে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে খেলাপির ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যাংকে সুশাসন ফেরাতে ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধন করা হয়েছে। অন্যান্য আইন সংশোধনের প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের তালিকা তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে সব খেলাপির জন্য নতুন ঋণ অনুমোদন বন্ধ এবং বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও ভাবা হচ্ছে। আইএমএফ প্রতিনিধি দলের কর্মকর্তারা জানান, সরকারি ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ২৫ শতাংশের বেশি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার লক্ষ্য অর্জনে সবার প্রতি যথাযথ আইন প্রণয়নের তাগিদ দিয়েছে মিশন। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক যে হিসাব দেয়, তার তুলনায় প্রকৃত খেলাপি বেশি বলে মনে করে আইএমএফ। তাদের হিসাবে খেলাপি ঋণ হবে ৩ লাখ কোটি টাকার বেশি। আইএমএফ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করা ঋণ এবং সন্দেহজনক ঋণ ও আদালতের আদেশে খেলাপি স্থগিতাদেশ থাকা ঋণকেও খেলাপি দেখানোর পক্ষে।