বাংলাদেশের উৎপাদিত সামুদ্রিক কাঁকড়া এখন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। চীন ছাড়াও থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান, হংকং, তাইওয়ান, আরব আমিরাতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমাদের দেশের সামুদ্রিক কাঁকড়ার বেশ চাহিদা রয়েছে। প্রতি বছর আমাদের দেশ থেকে প্রায় ৫ হাজার টন কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি হয়। আমাদের দেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় সামুদ্রিক কাঁকড়া পাওয়া যায়। বিশেষ করে সুন্দরবন, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ভোলা, বরগুনা, নোয়াখালী, কক্সবাজার, চকরিয়া এলাকায় সামুদ্রিক কাঁকড়ার আবাসস্থল।
আমাদের দেশে ১৫ প্রজাতির কাঁকড়া উৎপাদিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে ১১ প্রজাতির সামুদ্রিক কাঁকড়া রয়েছে। শীলা এবং সাঁতারু কাঁকড়া বেশি রপ্তানি হয়ে থাকে। জীবন্ত এবং হিমায়িত দুইভাবে কাঁকড়া রপ্তানি হয়। বিদেশে কাঁকড়া রপ্তানির মধ্যে ৯২ শতাংশ কাঁকড়া শুধু চীনে রপ্তানি হয়। বাংলাদেশ থেকে সর্বপ্রথম ১৯৭৭ সালে কাঁকড়া রপ্তানি করা হয়। রপ্তানিকৃত কাঁকড়ার মধ্যে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ কাঁকড়া প্রাকৃতিক উৎস থেকে আহরণ করা হয়। প্রাকৃতিক উৎস ছাড়াও বর্তমানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কাঁকড়া চাষ করা হচ্ছে। কাঁকড়া চাষ লাভজনক হওয়ায় অনেকেই এই ব্যবসায় এগিয়ে এসেছেন। গড়ে তুলেছেন কাঁকড়ার খামার। প্রাকৃতিকভাবে আহরিত কাঁকড়ার চেয়ে চাষের কাঁকড়া অনেক পরিপূর্ণ হয়ে থাকে। এছাড়া কাঁকড়া চাষে তেমন পুঁজির প্রয়োজন পড়ে না। স্বল্প পুঁজিতে অধিক লাভ করা যায় কাঁকড়া চাষ করে।
অক্টোবর থেকে ফ্রেরুয়ারি মাস পর্যন্ত বেশি কাঁকড়া আহরণ করা হয়। চিংড়ির ঘের থেকেও কাঁকড়া আহরণ করা হয়। প্রতিটি পরিপূর্ণ কাঁকড়ার ওজন ১ হাজার গ্রাম থেকে ১ হাজার ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। পরিপুষ্ট কাঁকড়া প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। ২০১১-২০১২ অর্থবছরে ৭২ লাখ ডলারের কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে ২ কোটি ২৯ লাখ ডলারের কাঁকড়া রপ্তানি করা হয়েছে। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের কাঁকড়া রপ্তানি করা হয়। প্রাকৃতিকভাবে কাঁকড়া আহরণের কারণে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ায় সরকার কাঁকড়া চাষের ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। এ ব্যাপারে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা কাজ করছে। আমাদের দেশে উপকূলে অনেক জায়গা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এসব জায়গায় কাঁকড়ার খামার গড়ে তোলা সম্ভব। এ ব্যাপারে সরকার ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করলে কাঁকড়ার উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং ব্যাপকভাবে কাঁকড়া রপ্তানি করা সম্ভব হবে। জানা গেছে, হাঁটি হাঁটি পা পা করে ১৯৭৭ সালে যে কাঁকড়া রপ্তানি শুরু হয়েছিল, তা এখন যাচ্ছে বিশ্বের ২০টিরও বেশি দেশে। এখানেই শেষ নয়, দেশের প্রায় ১৫ প্রজাতির কাঁকড়াই বিদেশিদের কাছে আকর্ষণীয় এবং সুস্বাদু হওয়ায় বিশ্ববাজারে রপ্তানির অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দেশে কাঁকড়া আহরণের সবচেয়ে বড় ভাণ্ডার কক্সবাজার ও সুন্দরবন। তবে বাড়তি দামের আশায় ডিমওয়ালা কাঁকড়া শিকারে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মহোৎসবও চলছে। যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বিদেশে রপ্তানি করা মৎস্য সম্পদের মধ্যে চিংড়ির পরই সম্ভাবনাময় কাঁকড়া। দেশে যেসব জেলায় কাঁকড়া উৎপাদিত হয় তার মধ্যে অন্যতম বাগেরহাট। কাঁকড়া পানি ছাড়াও ৬ ঘণ্টার মতো বেঁচে থাকতে পারে। কাঁকড়ার রোগ কম হয় এবং মরেও কম। কিন্তু চিংড়ির ঘেরে একবার রোগ ছড়িয়ে পড়লে সবগুলো মারা যায়। তাই লাভজনক হওয়ায় অনেকে চিংড়ি ছেড়ে কাঁকড়া চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে খুলনা অঞ্চল থেকে ৬২২ দশমিক শূন্য ৫ মেট্রিক টন কাকড়া রপ্তানি হয়েছে।
যার দাম ৭৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সুন্দরবনের নদী ও খাল থেকে সংগ্রহ করা ১৯৮ মেট্রিক টন। বাকি ৩৫৮ মেট্রিক টন চাষের। কাঁকড়া চীন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। জেলার সাত উপজেলায় ১ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে ৩ হাজার ৭৭৮ কাঁকড়ার খামার রয়েছে। উৎপাদন প্রায় ৩ হাজার মেট্রিক টন। ফিমেল (নারী) কাঁকড়া প্রতি কেজি ১ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। আর মেল (পুরুষ) ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, তিন মাস সময়ের মধ্যে পুরুষ ও মহিলা জাতের কাঁকড়া রপ্তানিযোগ্য হয়। শৈত্যপ্রবাহ ও গ্রীষ্মের দাবদাহে কাঁকড়া মারা যায় না।