ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কঠিন শর্তের দ্বিপাক্ষিক ঋণ

চাপ বাড়ছে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে

চাপ বাড়ছে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে

আগামী বছরগুলোতে ঋণ পরিশোধের বোঝা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের ব্যালান্স অব পেমেন্টের ওপর চাপ বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কারণ, নমনীয় শর্তের বহুপাক্ষিক ঋণের চেয়ে কঠিন শর্তের দ্বিপাক্ষিক ঋণ নেওয়া দ্রুত বাড়ছে। দ্বিপাক্ষিক ঋণ সাধারণত বহুপাক্ষিক ঋণের তুলনায় কম নমনীয় হয়। অর্থাৎ, বাংলাদেশ ঋণের শর্তাবলি আলোচনার বা প্রয়োজনে পেমেন্ট পুনর্নির্ধারণের সুযোগ কম পেতে পারে। এ ধরনের ঋণে সুবিধাজনক শর্ত সাধারণত বহুপাক্ষিক ঋণের চেয়ে কম থাকে। দ্বিপাক্ষিক ঋণের সুদের হার বেশি হয়, সেই সঙ্গে গ্রেস পিরিয়ডও পাওয়া যায় কম এবং এ ঋণের শর্তগুলোও আরো কঠিন হয়ে থাকে। দ্বিপাক্ষিক ঋণদাতারা প্রায়ই প্রকল্পের দরপত্র প্রক্রিয়ার ওপর শর্তারোপ করে, যার জন্য ঋণগ্রহীতাদের নির্দিষ্ট দেশ বা কোম্পানি থেকে ঠিকাদার নিয়োগ করতে হয়। অন্যদিকে বহুপাক্ষিক ঋণদাতারা সাধারণত উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি অনুসরণ করতে দেয়, ফলে ঋণগ্রহীতাও সুবিধামতো ঠিকাদার বাছাই করতে পারে। তাছাড়া দ্বিপাক্ষিক ঋণে উপকরণ কেনার ক্ষেত্রে অন্যান্য শর্তও আরোপ করা হয়। যেমন, ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ঋণ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশকে নির্মাণসামগ্রীর ৮৫ শতাংশ কিনতে হবে ভারত থেকে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট বিদেশি ঋণে বহুপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার ঋণের হিস্যা ছিল ৫৯ শতাংশ; ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বহুপাক্ষিক সংস্থার ঋণের অংশ ছিল ৬৯ শতাংশ। এই সময়ে বাংলাদেশের মোট ঋণে দ্বিপাক্ষিক ঋণের হিস্যা ২৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪১ শতাংশ হয়েছে। এছাড়া, তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের দায় বেড়ে হয়েছে ৬২.৩১ বিলিয়ন ডলার। পাঁচ বছরে মোট বৈদেশিক ঋণের দায় বেড়েছে ৬২ শতাংশ। ইআরডির কর্মকর্তারা বলেন, বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণের অর্থছাড় হওয়ায় ঋণ-দায় বাড়ছে। মেগা প্রকল্প ছাড়াও কোভিড পরিস্থিতি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকার যে বাজেট সহায়তা নিয়েছে, তার কারণেও বৈদেশিক ঋণের দায় বেড়েছে বলে জানান তারা। বৈদেশিক ঋণের দায় বাড়ার কারণে ঋণ পরিশোধের চাপও বাড়বে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার ২.৬৭ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করেছে। বর্তমানে চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য সরকার যে ঋণ নিয়েছে, সেইসব ঋণের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হলে ঋণ পরিশোধের চাপ আরো বাড়বে বলে ধারণা করছে ইআরডি। ইআরডির প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে ঋণ পরিশোধ বেড়ে ৩.৫৬ বিলিয়ন ডলার হবে। আর ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তা বেড়ে হবে যাথাক্রমে ৪.২১ বিলিয়ন ও ৪.৭২ বিলিয়ন ডলার। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণের সিংহভাগই এসেছে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির মতো বড় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে। ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে পাইপলাইনে বৈদেশিক ঋণ রয়েছে ৪৪.৭ বিলিয়ন ডলার।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত