আয়করমুক্ত থাকবে সর্বজনীন পেনশন স্কিম
প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
সর্বজনীন পেনশন স্কিমের সুবিধাভোগীদের মাসিক কিস্তি ও স্কিম থেকে পাওয়া মুনাফার ওপর কোনো আয়কর দিতে হবে না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ‘আয়করমুক্ত’ সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন। সরকার শিগগিরই এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করবে বলেও জানিয়েছেন তারা। দেশের নাগরিকদের পেনশন সুবিধার আওতায় আনতে গত ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করে সরকার। সর্বজনীন পেনশনে প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা ও প্রবাস এই চারটি স্কিম রাখা হয়েছে। সর্বজনীন পেনশন তহবিলের টাকা চলতি মাসের মধ্যে ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হবে। তহবিল পরিচালনা সংক্রান্ত একটি নীতিমালা তৈরি করছে সরকার। নীতিমালাটি চূড়ান্ত হলে অর্থবিভাগের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন (এসআরও) জারি করা হবে। স্কিমটি চালু হওয়ার পর গত দুই মাসে সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ৫৯২ জন নাগরিক। আর এসব পেনশনারদের কাছ থেকে এ পর্যন্ত চাঁদা আদায় হয়েছে ১১ কোটি ২৫ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা। তহবিলে জমা হওয়া এই অর্থের পুরোটাই প্রাথমিকভাবে সরকারি সিকিউরিটিজ বা ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া সর্বজনীন পেনশন স্কিমের অর্থ সর্বজনীন বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে কর রেয়াত সুবিধা ও পেনশন থেকে প্রাপ্ত অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে শিঘ্রই এ সংক্রান্ত আরেকটি এসআরও জারি করা হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানা গেছে, প্রথম দিকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধন করে যে হারে মানুষ চাঁদা জমা দিয়েছেন, ধীরে ধীরে তার পরিমাণ কিছুটা কমেছে। তবে পেনশন কর্তৃপক্ষ স্কিমটিতে গ্রাহক আকর্ষণের চেষ্টা করলেও প্রচারণার অভাবে সাধারণ মানুষ বিষয়টি তেমন জানতে পারছে না। আবার বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের জন্য করা প্রগতি স্কিমটিতে এখন যারা নিবন্ধন করছেন, তারা সবাই স্ব বা নিজ উদ্যোগে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন। কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান থেকে এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। আবার স্বল্প আয়ের মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করতে সমতা স্কিমে চাঁদার অর্ধেক টাকা সরকার দিয়ে থাকে। গত দুই মাসে সরকারের পক্ষ থেকে এই স্কিমে প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ টাকা চাঁদা জমা দেওয়া হয়েছে। সমতা স্কিমে এখন পর্যন্ত তহবিল দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৪ লাখ টাকা। এ স্কিমে আবেদনকারীর তথ্য যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়াটি এখনো জটিল অবস্থায় রয়েছে। এ কারণে সমতা স্কিমের আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের কাজটি দ্রুত এবং সঠিক পন্থায় করার তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আবার প্রবাস স্কিমে প্রবাসী ভাইবোনদের টাকা পাঠানোর বিষয়টি জটিল। তাদের কাছে সর্বজনীন পেনশন স্কিমটির প্রচারণা নেই। যদিও বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে, সুরক্ষা স্কিমে ছোট ছোট ব্যবসায়ী এবং দেশের গৃহিণীদের অন্তর্ভুক্ত করা গেলে বিপুলসংখ্যক মানুষকে এই স্কিমে নিয়ে আসা যেত বলে মনে করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে তাদের কাছে স্কিমটি নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে সর্বজনীন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য ও অর্থবিভাগের অতিরিক্ত সচিব গোলাম মোস্তফা বলেন, পেনশন তহবিলের টাকা চলতি মাসে ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া পেনশন তহবিল পরিচালনা-সংক্রান্ত একটি নীতিমালা প্রায় চূড়ান্ত। শিগগিরই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। তিনি বলেন, পেনশন তহবিলের টাকা সুরক্ষিত থাকবে। ঝুঁকিহীন এই স্কিমে সবার অংশগ্রহণ করা উচিত। এদিকে, সর্বজনীন পেনশনের চারটি স্কিমের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ‘প্রগতি’ স্কিম নিয়ে। এই স্কিমে ৬ হাজার ৬৪৩ জন নাগরিক পেনশনার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। আর এদের থেকে চাঁদা পাওয়া গেছে ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৫০০ টাকা। আর সবচেয়ে কম আগ্রহ প্রবাসীদের জন্য করা প্রবাস স্কিমে। এই স্কিমে এসেছেন মাত্র ৪৪০ জন প্রবাসী। আর প্রবাসীদের থেকে চাঁদা আদায় হয়েছে ১ কোটি ৭ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ টাকা। সুরক্ষায় ৫ হাজার ৮৮৭ জন অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন এবং এদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৮৭ লাখ ৫০০ টাকা। দেশের চার শ্রেণির প্রায় ১০ কোটি মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। দুই মাসে কর্মসূচিটি চালু হওয়ার পর পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে সরকার। সর্বজনীন পেনশনের উন্নত ধারণা পেতে সম্প্রতি পেনশন কর্তৃপক্ষ এবং অর্থবিভাগের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল দক্ষিণ কোরিয়া সফর করে এসেছেন। তারা দক্ষিণ কোরিয়ার সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রমটি দেখেন এবং সেখান থেকে এ সম্পর্কিত ধারণা পান। কোরিয়া সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিটি সফলভাবে বাস্তবায়নে কারিগরিসহ সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। এরই মধ্যে সর্বজনীন পেনশনের বেশকিছু প্রতিবন্ধতা, চ্যালেঞ্জ ও সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রবাস স্কিমে প্রবাসীদের কাছ থেকে বর্তমান পদ্ধতিতে টাকা আনার বিষয়টি বেশ জটিল বলে মনে করছে অর্থবিভাগ। এ কারণে প্রবাসীদের কাছ থেকে টাকা বা চাঁদা আনার বিষয়টি আরো সহজীকরণে কাজ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি উদ্যোগ নেবে। এছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যে সর্বজনীন পেনশন নিয়ে এক ধরনের নেতিবাচক প্রচারণা রয়েছে। অনেকে আবার বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতেই পারছে না। এ কারণে দেশের সব শ্রেণির মানুষের কাছে সর্বজনীন পেনশনের বিষয়টি ভালোভাবে জানাতে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। বিশেষ করে প্রগতি, প্রবাস, সুরক্ষা ও সমতা স্কিমের জন্য পৃথক পৃথক কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রাহকদের আগ্রহ সৃষ্টি করা হবে। প্রগতি স্কিমে পেনশনার বাড়াতে বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করা হবে। এই স্কিমে প্রাতিষ্ঠানিক পেনশনার তৈরি করা সম্ভব হলে দ্রুত গ্রাহক সংখ্যা বাড়বে। সম্প্রতি মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি থেকে (এমসিসিআই) থেকে বেসরকারি খাতে সর্বজনীন পেনশনে অংশগ্রহণের বিষয়ে একটি সেমিনার করা হয়।